ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিরোপা জয়ের রসদ পেয়ে গেছে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৩ মার্চ ২০১৫

শিরোপা জয়ের রসদ পেয়ে গেছে ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপের কয়েকদিন আগেও বাজে অবস্থা ছিল ভারতীয় দলের। টানা আড়াই মাস অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে থেকেও কোন জয়ের দেখা পায়নি। বিশ্বকাপে সেই ভারতীয় দলে যেন আমূল পরিবর্তন এলো। টানা সাত জয়ে অপরাজিত মহেন্দ্র সিং ধোনির দল এখন আরেকটি শিরোপা ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু কিভাবে এ পরিবর্তনটা এলো? দুশ্চিন্তায় ধোনির কুঞ্চিত ভ্রূ কিভাবে সোজা হয়ে আছে পুরো বিশ্বকাপে? এর কারণ ধোনি নিজেই অনেক সাহসী ও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন তার বোলারদের দারুণভাবে জ্বলে ওঠার কারণে। যে কোন টুর্নামেন্টে ম্যাচ জয়ী একজন খেলোয়াড় প্রয়োজন, খুব জরুরী ইনিংসের মাঝপথে উইকেট তুলে নেয়ার মতো বোলার থাকা সে দুটোই আছে এখন ভারতের। ম্যাচ জয়ের অন্যতম এ দুটি উপাদান অন্তত এবার বিশ্বকাপে পেয়ে গেছেন ধোনি তার দলে। সে জন্য শিরোপা ধরে রাখা এখন খুব কঠিন কিছু নয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে এমনটাই মনে করছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার ইয়ান চ্যাপেল। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতা দুটি দল। সে কারণে এটা থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায় দুয়েকজন খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে না তারা। কারণ দুয়েকজনের ওপর নির্ভর করে কখনও বেশি ম্যাচ জেতা সম্ভব হয় না। উভয় দলে বেশ কয়েক ক্রিকেটার আছেন যারা প্রত্যেকেই একক নৈপুণ্যে নিজ দলকে বিজয়ী করাতে সক্ষম। আর এখন ভারতের জন্য অন্যতম প্রধান ম্যাচ জয়ী ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন রোহিত শর্মা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত কোয়ার্টার ফাইনালে দুর্দান্ত এক শতক উপহার দিয়ে তিনি ম্যাচ জিতিয়েছেন দলকে। রোহিত তার দুর্দান্ত দক্ষতা, নিখুঁত টাইমিংয়ে শ্বাসরুদ্ধকর কিছু শট খেলায় সিদ্ধহস্ত। তবে একটা খারাপ দিক আছে তা হচ্ছে নিজের মধ্যে কিছুটা আলস্য থাকার কারণে হতাশাজনকভাবে প্রতিপক্ষকে নিজের উইকেট উপহার দেয়া। তবে সেটা মেলবোর্নে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তেমন মনোভাবের উল্টোটাই দেখা গেছে তার কাছ থেকে। একজন ওপেনারের কাছ থেকে এমন ইনিংস পুরো দলের জন্যই বিশাল অনুপ্রেরণা এবং চাপমুক্তির বিষয়। রোহিতের এ ইনিংসটি দেখে চ্যাপেল বার বার মনে করেছেন শুধু ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে অরবিন্দ ডি সিলভার খেলা ইনিংসটার কথা। ডি সিলভা একাই দুর্দান্ত খেলেছিলেন, সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জিতিয়েছিলেন দলকে। তবে রোহিত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভাল ইনিংস খেললেও হতাশাব্যঞ্জক বিষয় ছিল পার্টটাইম বোলারদের স্পিন বোলিংয়ের সামনে তার অলস ব্যাটিং। ফুটওয়ার্কেও বেশ সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে। অথচ এসব বোলারকে মুহূর্তেই তিনি আক্রমণ থেকে বাদ করে দিতে পারেন একটি ওভারে নিজের দুর্দান্ত টাইমিং কাজে লাগিয়ে কয়েকটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। তবে সব ব্যাটসম্যানেরই কিছু দুর্বলতা থাকে সেটা ভারতকে আপাতত রোহিতের ক্ষেত্রেও মেনে নিতে হবে। গত সাত ম্যাচে ভারত প্রতিপক্ষকে প্রতিবারই অলআউট করেছে। অথচ ৬ সপ্তাহ আগেও ভারতীয় দলের বোলিং নিয়ে কেউ বড় কিছু আশা করতে পারেনি। কিন্তু তারাই বিশ্বকাপের ৭ ম্যাচে প্রতিপক্ষের ৭০ উইকেট দখল করল। আর এর মাধ্যমেই ভারতীয় বোলাররা এখন যে কোন প্রতিপক্ষের সমীহ আদায়ে সক্ষম হয়েছে। দলের জন্যও হয়ে উঠেছে নির্ভরতার কারণ। এখন অধিনায়ক ধোনি জানেন কোন সময় কোন বোলারকে ব্যবহার করলে সেই বোলার যথার্থ কার্যকারিতা প্রমাণে সক্ষম হবেন। এর পেছনে চ্যাপেল দুটি কারণ দেখতে পাচ্ছেন। এক নম্বর কারণ অধিনায়ক ধোনির পুনরুত্থান এবং পেসার মোহিত শর্মার দলে অন্তর্ভুক্তি। চলতি আসরে দেখা গেছে কোন ব্যাটসম্যানকে রান করা থেকে আটকানোর জন্য মোহিত দারুণ ভূমিকা রেখেছেন তার ইকোনমি বোলিং দিয়ে। তাছাড়া পেস বোলিংয়ে ইশান্ত শর্মা ও ভুবনেশ্বর কুমার না থাকলেও উমেশ যাদব এবং মোহাম্মদ শামি অভূতপূর্ব বোলিং করেছেন। এছাড়াও ভারতীয় দলের দারুণভাবে জ্বলে ওঠার পেছনে দুর্দান্ত ফিল্ডিংটাও বড় ভূমিকা রেখেছে। আর এসব কারণেই শিরোপাটা আরেকবার ধোনি শিবিরের পক্ষেই যাওয়ার কারণ দেখছেন চ্যাপেল।
×