ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিমির হননের গান বাজে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৩ মার্চ ২০১৫

তিমির হননের গান বাজে

‘অপরাজেয় বাংলা’র পাদদেশে বোমা বিস্ফোরণ স্পষ্ট করেছে যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা যুদ্ধস্মৃতি ও প্রতীকসমূহ ধ্বংস করতে চায়। একাত্তরের পরাজিত শক্তির লক্ষ্যই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ নামক দেশটিকে ‘বাংলাস্থান’ বা ‘মুসলিম বাংলা’য় পরিণত করে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের পুনর্বাসন করে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ চেতনা ফিরিয়ে আনা। এই লক্ষ্যে তারা ১৯৭৮ সালে একবার হামলা চালিয়েছিল গাঁইতি শাবল নিয়ে নির্মাণাধীন অপরাজেয় বাংলায়। খুব ভোরে ফজর নামাজ শেষে নবগঠিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। কিন্তু সাধারণ ছাত্র সমাজের প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ধ্বংস করার প্রচেষ্টা থেকে বিরত হয়নি বলে ৩৭ বছর পরও বোমা হামলা চালায়। যেমন মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আইএস, আল কায়েদা, তালেবানরা প্রাচীন ভাস্কর্য ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে এখনও। তেমনি তাদের অনুসারী জামায়াত-শিবিরের জঙ্গীরাও নাশকতার পথ ধরে বাংলাদেশে স্বাধীনতার মাসেই তারা হামলাটি চালিয়েছে। একাত্তরের এই পরাজিত শত্রুদের পুনরুত্থানের কারণে দেশে আজ সন্ত্রাস আর জঙ্গীবাদের কালো ছায়ার বিস্তার ঘটেছে। এই অপশক্তির আস্ফালন আজ সর্বক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। তারা দেশের উন্নয়ন ধারাকে ব্যাহত করতে চায়। দেশকে নিয়ে যেতে চায় অন্ধকারের দিকে। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তিকে নতুন করে চিহ্নিত করা হয়নি। দেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে শীর্ষ কয়েকজনের রায় হয়েছে, একজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। বেশির ভাগেরই বিচার শেষের পথে। আর এই যুদ্ধাপরাধীদের যে কোন মূল্যে রক্ষার জন্য এই পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসর বিএনপি মরিয়া। তাই তারা ধ্বংসাত্মক কাজে নেমেছে। এমনটা আশা করা অযৌক্তিক ছিল না যে, ১৯৭১ সালের চরম শিক্ষালাভের পর বাংলাদেশের বাঙালী জাতির সম্যক চৈতন্যোদয় হবে। অতঃপর তারা জাতের নামে জাতির সঙ্গে বজ্জাতিকারী বিশ্বাসঘাতকদের ‘ওয়াসওয়াসা’ হতে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হয়ে দেশ ও জাতিকে ‘বিশ্বের জ্ঞানশক্তি প্রাণশক্তির’ সঙ্গে যুক্ত করে আলোর দিকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, বাঙালী জাতি তার প্রমাণিত শত্রুদের বজ্জাতি হতে এখনও পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের লড়াই হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ১৯৪৮ সাল হতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশবাসীর স্বাধীনতা সংগ্রামও ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এটা ঐতিহাসিক সত্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল দেশের একটি ক্ষুদ্র স্বার্থবাদী শ্রেণী। এই শ্রেণীটি পলাশীর যুদ্ধকাল থেকে জাতের নামে বজ্জাতি করে আসছিল। ১৯৭১ সালে এই শ্রেণীটি দেশবাসীর কাছে চিহ্নিত হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে দেশবিভাগের পর অবিভক্ত ভারতের সমস্ত ক্রিমিন্যাল পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি যে মূর্খ এবং ক্রিমিন্যালদের দ্বারা পরিচালিত ছিল, তার প্রমাণ তারা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থায়ীভাবে রেখে গেছেন। এই সব মূর্খ ও ক্রিমিন্যালরা ছাত্র রাজনীতিতে পেশীবল প্রয়োগ এবং ছাত্র দ্বারা অধ্যাপক প্রহারের রীতির প্রচলন করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ হানাদার ও দখলদারমুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠালাভের পর মূর্খ এবং ক্রিমিন্যালদের একটি বড় অংশ পাকিস্তানেই অবস্থান করছে। তারা জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ক্রিমিন্যালরা একটি সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রয়েছে এবং সে প্রচেষ্টায় তারা আংশিক সাফাল্যও অর্জন করেছে। এরা মুক্ত চিন্তার পথকে ক্রমশ রুদ্ধ করে দিতে চাচ্ছে। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার আর অশিক্ষার নিগড়ে সমাজকে বেঁধে ফেলার ‘ভাইরাস’ ক্রমশ ছড়িয়ে দিচ্ছে। যা সংক্রমিত হচ্ছে সব স্তরেই। বদ্ধ চিন্তার গহ্বরে অবরুদ্ধ করে রাখার যে প্রক্রিয়া তাতে নৃশংসভাবে প্রাণ হরণও থেমে নেই। জঙ্গী, সন্ত্রাসী এবং তাদের সহযোগীরা একের পর এক হত্যা করেছে প্রাগ্রসর ও অগ্রসর চিন্তার লেখক-গবেষকদের। একাত্তর সালে যেভাবে তারা বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্য নিয়ে; তেমনি এখনও সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে। তখন করেছে পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগিতায় আর এখন করছে সেনাছাউনীতে জন্ম দল বিএনপির সহায়তায়। প্রমাণিত যে, উপায় ও লক্ষ্যের মধ্যে সঙ্গতি রক্ষা না করলে পরিণাম ফল কখনও শুভ হয় না। বিবেকবর্জিত সুবিধাবাদ এবং ছল-বল-কৌশল প্রভৃতি যে কোন উপায়ে ক্ষমতা দখল ও সংরক্ষণ যদি হয় নেতৃত্বের রাজনৈতিক দর্শন এবং তা করার জন্য পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা তথা নাশকতা চালানো, তা হলে সে দেশে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে বাধ্য। ১৯৭১ সালের গণহত্যা ও গণযুদ্ধ দু’দিক থেকে সামাজিক সমীকরণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল। প্রথমত গণযুদ্ধ ও গণহত্যার চাপ আভিজাত্য-অনাভিজাত্যের বিভেদ ঘুচিয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয়ত আইন কানুন, প্রথা-পদ্ধতি, অপরাধ-অনপরাধ, পাপ-পুণ্য প্রভৃতি সম্বন্ধীয় বহুকাল লালিত ধ্যান-ধারণার মধ্যে যেগুলো প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাবার সূক্ষ্ম হাতিয়ার, সেগুলো চিহ্নিত করেছিল। দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে যে, মুখে পবিত্র ইসলাম ধর্ম রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বাহানা করলেও পাকিস্তানী শাসকরা অবলীলাক্রমে গণহত্যা, গণবলাৎকার, গণলুণ্ঠন প্রভৃতি চালিয়ে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মূলোৎপাটন করছিল। অপরদিকে পাকিস্তানী দুর্বৃত্ত বাহিনী এবং তার দেশীয় অনুচর রাজাকার আল বদরদের মোকাবেলা করার আত্মরক্ষামূলক কাজে উদ্বুদ্ধ বাংলার মানুষের সামনে একটি মাত্র পথ খোলা ছিল Ñযে কোন উপায়ে দেশী-বিদেশী সকল শত্রু নির্মূল করা। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের এই সব অভিজ্ঞতাকে আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক নীতি-নির্ধারণের সময় বিবেচনার মধ্যে আনেননি। ফলে সে সবের মাসুল এখনও দিতে হয়। মূলত, সুযোগ নষ্ট হওয়ার পর চেতনার সঞ্চার হলে লাভ হয় না। এই যে দেশ জুড়ে বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে মূলত: পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধারের লক্ষ্যে হত্যা অব্যাহত রেখেছে, তাদের পূর্বসূরিরা এই একই কাজ করেছে। কিন্তু হত্যায় কখনও আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয় না। প্রবাদই রয়েছে, হিংসা হিংসাকে এবং হত্যা হত্যাকে ডেকে আনে। অপরাধীদের সমাজে এবং রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার জন্য ধর্ম বিপ্লব, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ প্রভৃতি সেøøাগান উত্থাপন করে তারা সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পেরেছে, তা নয়। তবে সমাজের ধর্মান্ধ অংশকে তারা তাদের অনুগামী করতে পেরেছে নানা প্রলোভন, মোহ, লোভ ও টোপ দিয়ে। মন্ত্রী পদ বা সরকারী চাকরি দিলেও হত্যাকারী অপরাধীই থেকে যায়। ষড়যন্ত্র, বলপ্রয়োগ, উৎকোচ প্রভৃতির মাধ্যমে খুনী, লুটেরা, নারী নির্যাতনকারী মন্ত্রী, এমপি, দূত প্রভৃতি পদও দখল করেছে। কিন্তু অভিজ্ঞ দেশবাসীর দৃষ্টিতে তারা অপরাধীই থেকে গেছে। ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’র যুগে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছিল। সামরিক জান্তা পাকিস্তানী চেতনায় অপরাধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিল স্বাধীনতাকে নস্যাত করার জন্য। দেশবাসীর ১৯৭১ সালের অভিজ্ঞতা ফুরিয়ে যায়নি। তারা দেখেছে সে সময় বিচার, ন্যায়-অন্যায়ের প্রহসন। এটা তো বাস্তব, পঁচাত্তরপরবর্তী যে সব বাংলাদেশ বিরোধী সমাজ ও রাজনীতিতে পুনরায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে জেনারেল জিয়ার কল্যাণে ও হাত ধরে তারা এখনও স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাস করে না। ১৯৫২ থেকেই জামায়াত, মুসলিম লীগ ও ইসলামপন্থী দলগুলো বাঙালীর মুক্তি ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিল। আজও তারা সেই অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে নড়বড়ে করে দিতে সুকৌশলে কাজ করে যাচ্ছে কয়েক দশক ধরে। তারা তাদের লক্ষ্যে কামিয়াব হতে না পারলেও সমাজ ও রাজনীতিতে বিভ্রান্তি শুধু নয়, জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে, হত্যাকে জায়েজ করেছে। দেশজুড়ে তারা একাত্তরের অবিকল মানুষ হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা অব্যাহত রেখেছে। এরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কব্জা করে চলেছে। অধিকাংশ কোচিং সেন্টারের মালিক এরা। মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীদের এরা বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি হিসেবে তৈরি করে আসছে। আর সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়। তাই এদের নিয়ন্ত্রিত চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজে অস্ত্রাগার বানিয়েছে। পাহাড়ের গুহায় অস্ত্রসরঞ্জামাদির গুদাম গড়েছে। এরা দীর্ঘদিন ধরে এই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এককথায় ‘দখল’ করে রেখেছে। শিক্ষকরাও এদের ভয়ে ভীত থাকেন। এবং তাদের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকেন। কলেজেই যদি এত অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া যায়, তাহলে মাদ্রসাগুলোতে তো আরও বেশি মিলবে। এ দেশে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘ছেড়াবেড়া’ করে দিয়েছে পরাজিত শক্তি। কোচিং সেন্টারগুলো হতে যে পরিমাণ অর্থ আয় করে, তার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি। আর এই অর্থ ব্যয় হয় বাংলাদেশ বিরোধিতায়। দেশের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে এরা ঘাঁটি গেড়েছে। এরা জঙ্গী ও সন্ত্রাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। একাত্তরের আল বদরের প্রশিক্ষণের চেয়ে এদের প্রশিক্ষণ অত্যাধুনিক। এদের মধ্যে কোন অপরাধবোধ বা পাপবোধ নেই। আর তা না থাকায় অবাধে মানুষ হত্যা করছে। পাকি বাহিনীর এই সহযোগীরা পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে, একাত্তরে বাঙালী হত্যার কর্মকে সঠিক কর্মরূপে সদম্ভে ঘোষণা করার পরেও এ দেশে অবাধে ‘ইসলামী’ রাজনীতি করছে জেনারেল জিয়া, তার পতœী ও পুত্রের হাত ধরে। ‘ইসলামী’ হুকুমত পাকিস্তানের ‘ইসলামী’ সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ধর্মীয়সহ সকল প্রকার নীতিশাস্ত্র হত্যা করে গেছে। ধর্মের লেবাসধারী দেশীয় ভ- মোনাফেকরা শুধু মানুষ হত্যার সহযোগী ছিল না, ধর্মীয় ও জাগতিক নীতিশাস্ত্র ও আইন কানুন হত্যারও সহযোগী ছিল। পঁচাত্তরের পর সরকারী আনুকূল্যে সমাজ, রাজনীতিতে ক্ষমতায় সর্বত্র পুনর্বাসিত হয়েছে। নীতি হত্যাকারীরা কখনও নীতিধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তাই সমাজের ক্ষমতাবান শ্রেণীর মুষ্টিমেয় লোক যেমন খালেদা জিয়ার জন্য এক প্রকার নীতি এবং অপর বৃহত্তর অংশ সাধারণ মানুষের জন্য অন্য প্রকার নীতির যে তরিকা সমাজে প্রচলিত, তা বেশিদিন ধোপে টিকবে না। বেগম জিয়া জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ন্যায়-নীতি, আইন-কানুনকে উপেক্ষা করে ঘোষণা দিয়ে মানুষ হত্যা করে চলেছেন। অথচ আইন তাকে কিছুই বলে না। পঁচাত্তরপরবর্তী যারা বুক ফুলিয়ে বলেছিল, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে বাংলাদেশবাসীকে পাইকারিভাবে হত্যা করে ওরা ঠিক কাজই করেছিল, তারা এখন নিজেদের আগের চেয়ে শক্তিশালী বলে ভাবছে। ওরা কখনও রাজনৈতিক দল হিসেবে কখনও ধর্মের লেবাসে দেশবাসীকে পুনরায় ১৯৭১ পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। একাজে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে পেয়ে তারা বর্তে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ গত তিন দশকের বেশি সময়েও এই পরাজিত শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে গ্রহণ করেনি। আর তা করেনি বলে তারা ভয়-ভীতি নাশকাতার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণকে বিপর্যস্ত করে ফায়দা হাসিল করতে চায়। কিন্তু সেটা যে সম্ভব নয়, তা একাত্তরেই প্রমাণিত। এমনকি ২০১৩ সালে প্রজন্ম চত্বরে যে উত্তাল জাগরণ ঘটেছিল, সে জাগরণ দেশবাসীকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির পক্ষে সোচ্চার করে। এদের বিচারের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে। শহীদী আত্মারা শান্তি পাবে। শহীদ পরিবারগুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। আজ ২৩ মার্চ। চুয়াল্লিশ বছর আগের ২৩ মার্চ ছিল অন্যরকম। ‘পাকিস্তান দিবস’ ছিল দিনটি। কিন্তু বাংলাদেশে তা পালন হবার আর প্রশ্নই ওঠে না। জান্তা ইয়াহিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা বেতার-টিভিও তখন স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ২৩ মার্চ রাতে ঢাকার টেলিভিশন কেন্দ্র রাতের অধিবেশন শেষে পাকিস্তানী পতাকা ওড়াবে না বলে জেদ ধরল। রেকর্ড করা এবং লাইভ দেশপ্রেমের গান প্রচার হতে থাকল। লাইভ গাইছিলেন ফাহমিদা খাতুন। পরিকল্পক ও প্রযোজক মুস্তাফা মনোয়ার। ফাহমিদা গাইছিলেন ‘বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি।’ তারপর ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ গানটি বার বার গেয়ে ২৩ মার্চের রাত বারোটা পার করেন। তারপর পতাকা দেখায়। সেনারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। গণমাধ্যম সেদিন বিদ্রোহ কাকে বলে দেখিয়ে দিয়েছিল। ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ দেশজুড়ে পরাজিত শক্তির হরতাল-অবরোধের আস্ফালন চলছে। পেট্রোল বোমা হামলা চলছে। এসব দমন করতে বাঙালীই যথেষ্ট। যখন ক্ষিপ্ত হবে, তখন ওরা পালাবার পথও পাবে না। দেশজুড়ে এবারের স্বাধীনতা দিবসে বেজে উঠছে তিমির হননের গান। আরও আলো চাই বলে বাঙালী আলোকিত হয়ে উঠবেই।
×