ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধের ডাক শিয়া বিদ্রোহীদের

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ২৩ মার্চ ২০১৫

যুদ্ধের ডাক শিয়া বিদ্রোহীদের

ইয়েমেনে শিয়া বিদ্রোহীরা দেশটির সঙ্কটাপন্ন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর হাদির নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর হামলা চালাতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সময়ে ১০০ মার্কিন সৈন্য দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি ঘাঁটি থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটিতে নয় মাস ধরে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা চলার পর হুতি নামে পরিচিত ওই বিদ্রোহীদের অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার আহ্বান আরব উপদ্বীপের দরিদ্র দেশ ইয়েমেনকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সেখানে সীমাহীন অরাজকতার ফলে আল কায়েদা ইন দ্য এ্যারাবিয়ান পেনিনসুলার (একিউএপি) সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। একিউএপি পাশ্চাত্যের ওপর হামলা চালাতে ইয়েমেনকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। দেশটির রাজধানী সানাসহ উত্তরাঞ্চল ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে। আর দক্ষিণাঞ্চল রয়েছে হাদির মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে। তিনি ফেব্রুয়ারিতে সানায় গৃহান্তরীণ অবস্থা থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় এডেন শহরে পালিয়ে যান। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সাবা প্রচারিত এক ঘোষণায় হুতিরা প্রেসিডেন্ট হাদির অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানায়। গত মাসে হাদি হুতি মিলিশিয়াদের হাত থেকে পালিয়ে গিয়ে এডেনে এক পাল্টা শাসন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে হাদি শনিবার রাজধানী থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তাঁর প্রথম ভাষণে নিজেকে ইয়েমেনের বৈধ শাসক বলে দাবি করেন। তিনি হুতিদের শাসনকে অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেন। তিনি তাঁর ভাষণে সরকারী ভবনাদি থেকে সরে যেতে, লুট করা অস্ত্রশস্ত্র ফেরত দিতে এবং সৌদি আরবে প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে জঙ্গীদের প্রতি আহ্বান জানান। ইয়েমেনের সহিংসতা যে এক সাম্প্রদায়িক রূপ নিচ্ছে তার আভাস দিয়ে হাদি হুতিদের ইরানের অনুচর বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক শিয়া শক্তি ইরান হুতিদের সমর্থন করছে। তিনি বলেন, আমরা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব এবং সাদার মাউন্ট মারানে ইরানি পতাকার বদলে ইয়েমেনি পতাকা তুলব। তিনি হুতিদের শক্তিশালী ঘাঁটি ওই উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রতি ইঙ্গিত করছিলেন। হাদির ভাষণের পরপরই হুতিরা এক বিবৃতিতে হাদির প্রতি অনুগত নিরাপত্তা ও সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই শুরুর ঘোষণা দেন। তাঁরা একে চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে এক লড়াই বলে অভিহিত করেন। শিয়া অধ্যুষিত ইরান হুতিদের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে। হুতিরা শিয়া জায়েদি সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। তাঁরা ইয়েমেনের জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগ। হাদি হুতিদের বিদ্রোহের মধ্যে এডেনকে অস্থায়ী রাজধানী বলে ঘোষণা করেন। ইরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সুন্নী দেশগুলো হাদির প্রতি ক্রমবর্ধমান সহায়তা দিচ্ছে। এসব দেশ শিয়া বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাঁকে সমর্থন যোগাতে তাঁদের দূতাবাসগুলোও এডেনে স্থানান্তর করে। এসব ঘটনায় ইয়েমেন আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে পরোক্ষ লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে বলে সে দেশের লোকজন উদ্বিগ্ন। হাদির ভাষণের একদিন আগে সানায় হুতিসম্পৃক্ত দুটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩৭ ব্যক্তি নিহত হয়। এটি ছিল ১৯৯৪ সালে গৃহযুদ্ধের পর সে দেশে সংঘটিত অন্যতম ভয়াবহ হামলা। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একটি শাখা শুক্রবারের ওই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে। সুন্নী জঙ্গী দলটি ইরাক ও সিরিয়াতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেও ইয়েমেনে দলটির তৎপরতার খবর আগে জানা যায়নি। Ñওয়াশিংটন পোস্ট ও ইয়াহু নিউজ।
×