ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফারাক্কায় পানি প্রবাহ কম ॥ ভারতকে বাংলাদেশের চিঠি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২২ মার্চ ২০১৫

ফারাক্কায় পানি প্রবাহ কম ॥ ভারতকে বাংলাদেশের চিঠি

তৌহিদুর রহমান ॥ চলতি শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই ভারতের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশের পরে ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ফারাক্কায় পানিপ্রবাহ কমার বিষয়ে জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গঙ্গায় ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও অনুরোধ করেছি। চিঠি পাঠানোর পরে পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিঠি পাঠানোর পরে পানিপ্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে পানিপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে এই চিঠির কোন সম্পর্ক নেই বলেও তিনি জানান। বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১০ দিন অনুক্রমে গঙ্গার ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পানিপ্রবাহ পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। দুই দেশের চার সদস্যের এই যৌথ কমিটি পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করছে। কমিটিতে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন। আর ভারতের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সে দেশের কেন্দ্রীয় নদী কমিশনের উপপরিচালক সুরেশ প্রসাদ সিং। যৌথ কমিটির পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলতি বছর ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কমেছে। কেননা গত বছরের মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ছিল এক লাখ এক হাজার ৯শ’ ৯৯ কিউসেক। আর সে সময় বাংলাদেশ পানি পেয়েছিল ৬১ হাজার ৯শ’ ৯৯ কিউসেক। তবে চলতি বছরের একই সময়ে পানিপ্রবাহ ছিল ৬৭ হাজার ৫৮ কিউসেক। আর বাংলাদেশ পানি পেয়েছে ৩৩ হাজার ৫শ’ ২৯ কিউসেক। সূত্র জানায়, চলতি বছর পানি কমে যাওয়ার পরে গত সপ্তাহে যৌথ নদী কমিশনের ভারতীয় কমিটির সদস্য এন কে মথুরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ভারত থেকে বয়ে আসা গঙ্গা নদী বাংলাদেশে মূলত পদ্মা নামে প্রবাহিত হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২০ জেলার ১২৩ নদীর পানির যোগান আসে পদ্মা নদী দিয়ে। ভাটির দেশের আর্থসামাজিক বিষয় বিবেচনা করে উজানের দেশ ঐতিহাসিক পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। যৌথ নদী কমিশন জানায়, গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ফারাক্কা পয়েন্টে অস্বাভাবিকহারে পানিপ্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ ১০ দিনে ফারাক্কায় পানিপ্রবাহ ছিল ৮১ হাজার ১৭ কিউসেক। অথচ গত বছরের একই সময়ে সেখানে পানিপ্রবাহ ছিল এক লাখ দুই হাজার ৬শ’ ৯২ কিউসেক। তবে আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় পানিপ্রবাহের হেরফের হতে পারে বলে কমিশন জানিয়েছে। কেননা অনেক সময় বৃষ্টিপাত কমবেশি হওয়ার ফলে পানিপ্রবাহের হ্রাস-বৃদ্ধি হয়ে থাকে। তবে গত বছরের চেয়ে এবারের পানিপ্রবাহ অনেক কম। কী কারণে পানিপ্রবাহ কমেছে, সেটা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে জবাব পাওয়া গেলে পানিপ্রবাহ কমার কারণ জানা যাবে। গঙ্গা নদীর পানি বাংলাদেশে পদ্মায় প্রবাহিত হয়ে থাকে। এই নদীর উপর ফারাক্কা বাঁধের কারণে পানিপ্রবাহ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে আলোচনাও হয়। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লীতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে গৃহীত ফর্মুলা অনুযায়ী ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি হবে। ভারত নদীটির পানিপ্রবাহের মাত্রা গত ৪০ বছরের গড়মাত্রায় বজায় রাখার সর্বাত্মক চষ্টা করবে। ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক পানি প্রাপ্যতা হলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক, অবশিষ্ট অংশ পাবে ভারত। আর ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি পানি থাকলে ৪০ হাজার পাবে ভারত, বাকি অংশ পাবে বাংলাদেশ। দীর্ঘমেয়াদী গঙ্গার পানিপ্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উভয় দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা করবে। সে অনুযায়ী প্রতি বছর দুই দেশের মধ্যে পানিবণ্টন চলছে।
×