ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ কীর্তিমান লেখকের প্রবন্ধ সঙ্কলনের প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২১ মার্চ ২০১৫

পাঁচ কীর্তিমান লেখকের প্রবন্ধ সঙ্কলনের প্রকাশনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাহিত্যের ভুবনে তাঁরা পাঁচ কীর্তিমান লেখক। তাঁরা হলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, আনিসুজ্জামান, হাসান আজিজুল হক, হায়াৎ মামুদ ও সনৎকুমার সাহা। প্রকাশিত হলো তাঁদের পাঁচটি প্রবন্ধসংকলন। বইগুলো হলো সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির সামাজিকতা, আনিসুজ্জামানের আত্মপরিচয় ভাষা-আন্দোলন স্বাধীনতা, হাসান আজিজুল হকের কথা কথাসাহিত্য, হায়াৎ মামুদের বাংলাদেশ : সাংস্কৃতিক ও আত্মপরিচয় এবং সনৎকুমার সাহার রবীন্দ্রনাথ : তাঁর আলোয় তাঁর ছায়ায়। সবগুলো বই প্রকাশ করেছে চন্দ্রাবতী একাডেমি। শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গ্রন্থগুলোর প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন কবি ও কথাশিল্পী সৈয়দ শামসুল হক। আর পাঁচ লেখকের গ্রন্থগুলো নিয়ে আলোচনা করেন খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন, প্রাবন্ধিক-গবেষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, প্রাবন্ধিক-গবেষক সৈয়দ আজিজুল হক ও প্রাবন্ধিক-গবেষক অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। লেখকের অনুভূতি প্রকাশ করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন গ্রন্থগুলোর পৃষ্ঠপোষক সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন এবং সিটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও লেখক মাসরুর আরেফিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চন্দ্রাবতী একাডেমির নির্বাহী পরিচালক কামরুজ্জামান কাজল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। পাঁচটি বই নিয়ে সামগ্রিক আলোচনায় সৈয়দ শামসুল হক বলেন, এই পাঁচ লেখকের প্রবন্ধগ্রন্থ প্রকাশকে কেন্দ্র সুচারু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে এ ধরনের প্রকাশনা উৎসবে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও আছে। গ্রন্থ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তারা বইটির পরিপূর্ণ আলোচনা না করে অনেক সময় শুধুই ভাল কথা বলেন। এজন্য আমার দীর্ঘ লেখক জীবনে আমি কখনও কোন বইয়ের প্রকাশনা উৎসব করিনি। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে বইগুলো প্রকাশিত হলো সেসব বইয়ের লেখকরা প্রত্যেকেই আমার কাছের লোক। সবগুলো গ্রন্থেরই ভাল ছাপা ও বাঁধাই হয়েছে। আর পাঁচটি বইয়ের মধ্যে আনিসুজ্জামান ও হায়াৎ মামুদের শিরোনামের ক্ষেত্রে ‘আত্মপরিচয়’ শব্দটি মিলে গেছে। এই গ্রন্থগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে রচিত বইটি ছাড়া অন্যগুলো পাঠ করলে পাঠকরা বাঙালির অভিযাত্রার মানচিত্র খুঁজে পাবে। তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আজকের এই বাংলাদেশ। এখন শুধুই রবীন্দ্রনাথ থেকে মুগ্ধতার বিষয়ে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর গ্রন্থটি সম্পর্কে আলোচনা করেন সেলিনা হোসেন। শুরুতেই তিনি বলেন, প্রকাশিত এই পাঁচটি গ্রন্থই এই ভূখ-ের মানুষের মনন, চিন্তা ও সংস্কৃতির অনন্য দলিল। বইগুলো পড়লে পাঠকরা বাঙালী হিসেবে নিজেদের আত্মপরিচয়ের একটি সুস্থির ভাবনার সন্ধান পাবে। আর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বইটিতে চিন্তার ক্ষেত্র ও সংস্কৃতির তাড়না যুক্ত হয়ে ভিন্নতায় উপস্থাপিত হয়েছে। মৌলিক বিষয় নিয়ে রচিত হয়েছে গ্রন্থটি। লেখক একইসঙ্গে রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন। চেতনাগত বিন্যাস ও কালগত বিশ্লেষণে নবীন পাঠককে আলোড়িত করবে বইটি। একইভাবে নতুন লেখকদেরও সমৃদ্ধ করবে গ্রন্থটি। আপন অনুভূতি ব্যক্ত করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাহিত্যের বিকাশ হলেও তেমনভাবে প্রবন্ধের কদর দেখি না। সেই অর্থে জনপ্রিয়তাও পায় না। এ ধরনের বইপাঠে পাঠকরা খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। অনেক ক্ষেত্রে পাঠকের চিন্তার জগতকে বিকশিত করেÑএমন বিষয় নিয়ে আমরা তেমনভাবে লিখতে পারি না। তাই নিজস্ব আগ্রহের বিষয়ের বই না পেয়ে পাঠকও প্রবন্ধ থেকে কিছুটা দূরে থাকে। এছাড়া আমাদের চিন্তার জগতটা ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। এই ধরনের লেখালেখির কারণেই হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিত রায়ের মতো লেখককে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এই দেশে এখনও সব কথা অকপটে লেখা যায় না। গা বাঁচিয়ে চলতে হয়। চারপাশে কণ্ঠরোধ করার নানা রকম আয়োজন করে রাখা হয়েছে। আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধগ্রন্থ প্রসঙ্গে আবুল মোমেন বলেন, বায়ান্ন থেকে বাংলাদেশের যে অভিযাত্রা শুরু হয়েছে তা এখনও শেষ হয়নি। এখানে আত্মপরিচয়ের প্রকট সঙ্কট রয়েছে। রয়েছে নানা রকমের বিভ্রান্তি। আর বইটিতে আনিসুজ্জামান সেই বিভ্রান্তি মোচনের চেষ্টা করেছেন। বাঙালী মুসলমানের নৃতাত্ত্বিক, ধর্মীয় ও ভাষাগত পরিচয়কে উপস্থাপন করেছেন। একুশের আন্দোলন ও সেই চেতনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণের বিভ্রান্তিগুলো নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করেছেন। দেখিয়েছেন কিভাবে আমাদের যাত্রাভঙ্গ হচ্ছে। কথা বলেছেন মুসলমানের চিন্তার বিবর্তন নিয়ে। হাসান আজিজুল হকের গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, তিনি একজন কথাশিল্পী হয়ে বইটিতে অন্যের কথাসাহিত্য নিয়ে যেভাবে লিখেছেন তা বিশেষভাবে আগ্রহ জাগায়। সহজভাবে নিজস্ব ভাবনা থেকে অন্য বাঙালী লেখকদের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা করেছেন। শুধু তাই নয়, সাহিত্যকে যারা পণ্য করেছেন তাদের বিপক্ষেও কথা বলেছেন। কণ্ঠশীলনের স্মরণে ওয়াহিদুল ও কাইয়ুম ॥ সাংবাদিকতা পেশা হলেও ওয়াহিদুল হকের উজ্জ্বল পরিচয় হলো তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সঙ্গীতজ্ঞ ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। দেশের সাংস্কৃতিক উত্তরণে এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণসহ নানা কল্যাণকামী কর্মে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। আর কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন বহুমাত্রিক এক মহৎপ্রাণ চিত্রশিল্পী। চলতি মাসের ৯ মার্চ কাইয়ুম চৌধুরী এবং ১৬ মার্চ ছিল ওয়াহিদুল হকের জন্মদিন। এ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ দুই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করল সাহিত্যের বাচিক চর্চা ও প্রসার প্রতিষ্ঠান কণ্ঠশীলন। বসন্ত সন্ধ্যায় ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় এক আলোচনাসভা এবং কবিতা ও গানের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরু হয় মিতা হকের কণ্ঠে ‘বড় বিস্ময় জাগে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। গান শেষে ওয়াহিদুল হককে নিয়ে লেখা কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতা পাঠ করেন জহিরুল হক খান। এরপর কাইয়ুম চৌধুরীকে নিয়ে আবুল খায়ের মুসলেউদ্দিনের কবিতা পাঠ করেন শামীমা নাজনীন। কণ্ঠশীলনের প্রাণপুরুষ ওয়াহিদুল হক এবং সাবেক সভাপতি শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে এ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন কাইয়ুম চৌধুরীর ছেলে মাইনুল ইসলাম জাবের, নাট্যজন আতাউর রহমান, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার ও কণ্ঠশীলনের আহ্বায়ক সন্দা খাতুন। কণ্ঠশীলনের প্রযোজনা ‘কোনখানে রাখব প্রণাম’ পরিবেশন করেন সংগঠনের শিল্পীরা। এরপর একক আবৃত্তি পরি?বেশন করেন কণ্ঠশীলনের শামীমা নাজনীন, জহিরুল হক খান, এনায়েত কাজল, মাসুমা জাহান, ইভা ম-ল ও আলতাফ হোসেন। আবৃত্তির পর গান শোনান ফারহিন খান জয়িতা, লাইসা আহমেদ ও মহিউজ্জামান চৌধুরী। সমবেতকণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। রামকৃষ্ণ ঢাকালের সাউথ এশিয়ান মিউজিক এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি ॥ সাউথ এশিয়ান মিউজিক এ্যাওয়ার্ড পেলেন নেপালের বিশিষ্ট শিল্পী রামকৃষ্ণ ঢাকাল। দ্বিতীয় সাউথ এশিয়ান (স্পিরিচ্যুয়াল) মিউজিক ফেস্টিভ্যাল ২০১৫-এর বর্ণাঢ্য আয়োজনে তাকে এ সম্মাননা জানানো হয়। শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির অডিটোরিয়ামে এই মিউজিক্যাল ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে সাউথ এশিয়ান মিউজিক ইন্সটিটিউট। শিল্পী রামকৃষ্ণ ঢাকালের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। সাউথ এশিয়ান মিউজিক ইন্সটিটিউটের চেয়ারম্যান ড. শরীফ আশরাফ উজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী ও ঢাকার নেপালের রাষ্ট্রদূত শ্রী হরি কুমার শ্রেষ্ঠ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পী রামকৃষ্ণ ঢাকাল, ড. দীপক মল্লিক, গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ‘সাউথ এশিয়ান স্পিরিচ্যুয়াল মিউজিক’ শীর্ষক মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন ড. আনু মাহামুদ। ড. গওহর রিজভী বলেন,‘এটি একটি অসাধারণ আয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একটি চমৎকার বন্ধন আছে এবং সেটিকে আরও সুদৃঢ় করতে পারে সঙ্গীত। বিশেষ করে আধ্যাত্মিক সঙ্গীত। এটি সঙ্গীতের এমন একটি ধারা যার মাধ্যমে আমরা স্রষ্টার কাছাকাছি যেতে পারি। এটা মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি করে।’
×