ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধার চরে সালাহউদ্দিন একটি গুজব

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২১ মার্চ ২০১৫

গাইবান্ধার চরে সালাহউদ্দিন একটি গুজব

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা থেকে ॥ বিএনপির নিখোঁজ যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিনের সন্ধানে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সাড়ে ৫ ঘণ্টার ব্যর্থ অনুসন্ধান তৎপরতা অতঃপর ক্লোজ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের খাটিয়ামারী, মধ্য খাটিয়ামারী, পূর্ব খাটিয়ামারী, পিপুলিয়া, পারুল, টেংরাকান্দি, বেলুয়াবাড়ি, খঞ্চপাড়া, বাগবাড়ি, তালতলার চরসহ বিভিন্ন চরে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু ওইসব এলাকায় কোন সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ বিএনপি নেতার বা তার লাশের। গুজবের মাধ্যমে প্রশাসন ও জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করে এলাকার পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার জামায়াত-শিবির চক্রের পরিকল্পিত অপকৌশল হিসেবেও মনে করা হচ্ছে এই ঘটনাটিকে। এর পাশাপাশি ভুয়া মোবাইল মেসেজ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করারও অপচেষ্টা হিসেবে এই সালাহউদ্দিন ইস্যুটি সৃষ্টি করা হয়ে থাকতে পারে বলে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার একটি মোবাইল ফোন থেকে ঢাকার উত্তরা থানায় বিকেল সাড়ে ৩টায় একটি মেসেজ পাঠিয়ে জানানো হয়, বিএনপির নিখোঁজ নেতা সালাহউদ্দিন ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের পারুল গ্রামে জনৈক সিরাজুল ইসলাম মাস্টারের বাড়িতে আত্মগোপন করে আছে। এই খবরটি উত্তরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে জানানো হয়। পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। এই মোবাইল মেসেজের ওপর ভিত্তি করেই গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ও ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুর রহমান, ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান দুটি পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে স্পীডবোট ও দেশী নৌকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়ে চরাঞ্চলগুলোতে তল্লাশি অভিযান চালায়। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বররাও তাদের লোকজন নিয়ে তল্লাশি অভিযানে শামিল হয়। সাড়ে ৫ ঘণ্টার সালাহউদ্দিন অনুসন্ধানের এই চিরুনি অভিযান অতঃপর ভুয়া এবং গুজব সৃষ্টির অপতৎপরতা হিসেবেই প্রমাণিত হয়। অপরদিকে অভিযান পরিচালনা করার সময় যার বাড়িতে সালাহউদ্দিন রয়েছে বলে মেসেজ পাঠানো হয় সেই সিরাজুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি পারুল গ্রামেও তল্লাশি চালায় পুলিশ। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অভিযানকারী প্রথম দলটি। কিন্তু সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজুল ইসলাম মাস্টার পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি এইসব ব্যাপারে কিছুই অবগত নন এবং তার বাড়িতে সালাহউদ্দিনের অবস্থানের ঘটনাটিও সঠিক নয়। তবে তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর এলাকার কিছু লোক চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় কাজ করে। তাদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক শত্রুতা রয়েছে। সুতরাং সে কারণে তাঁকে বিপদে ফেলতেই এ ধরনের গুজব ছড়ানো হয়েছে বলেই তিনি মনে করেন। তবে গাইবান্ধা পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটা গুজব হিসেবে নিশ্চিত করা হলেও সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে তারা তাদের নাম প্রকাশে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। এদিকে পুলিশের এই ব্যাপক তৎপরতার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে একটি লাশ ভেসে যাওয়ার গুজবের খবরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। প্রাথমিক পর্যায়ে ফুলছড়ি থানার পক্ষ থেকেও এই লাশ প্রাপ্তির কথা জানানো হলে এই গুজবটি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে। এতে অজানা আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তৎপর হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার অসমর্থিত তাৎক্ষণিক প্রচারযোগ্য টুকরো খবরগুলো সালাহউদ্দিন সন্ধান প্রাপ্তির এই গুজবকে আরও ইন্ধন যুগিয়ে সারাদেশকে আলোড়িত করে তোলে। সারাদেশ থেকে পুলিশ, প্রশাসন, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে আসা কৌতূহলী ফোনকলের ঝটকায় ফোনের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত জ্যাম হয়ে যায়। ফলে অধিকাংশ মোবাইল ফোনে ঢোকাই দুঃসাধ্য ব্যাপার।
×