ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশকে ১৯ রানের বড় ব্যবধানে ;###;হারিয়ে সেমিফাইনালে ভারত

ধোনিদের জয়ের নায়ক আম্পায়ার গোল্ড!

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২০ মার্চ ২০১৫

ধোনিদের জয়ের নায়ক আম্পায়ার গোল্ড!

মিথুন আশরাফ ॥ কোথায় উৎসবের সুর, প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার সুর বাজবে, সেই অপেক্ষায় দেশবাসী। তা না ঘটে, উল্টো বিদায়ী সুরই বাজল। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে ১০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ। রোহিত শর্মার ১৩৭ রানের ইনিংসে জয় পেয়ে ভারত সেমিফাইনালে উঠে গেল। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে যে দল আগে ব্যাট করে ৩০০ রান করেছে, তারাই জিতেছে। তাই আগেই অনুমান করা গেছে, আগে ব্যাট করে ভারত কিংবা বাংলাদেশ, যে দলই তিন শ’ রান করতে পারবে; জয় তাদেরই হবে। কিন্তু টস জিতল ভারত। আগে ব্যাটও করল। কাক্সিক্ষত ৩০০ রানও পেয়ে গেল। এরসঙ্গে আম্পায়াররাও যেন এদিন ভারতের পক্ষই নিলেন। সুরেশ রায়নার এলবিডব্লিউ না দেয়া, রোহিত শর্মার ক্যাচ আউট না দেয়া, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বিতর্কিত ক্যাচ আউট দেয়া; এ সবই আম্পায়ারের পক্ষপাতিত্ব এতটাই সামনে তুলে ধরল, যেন বাংলাদেশ শুধু ভারতের বিপক্ষে নয়; খেলেছে আম্পায়ারদের বিপক্ষেও। ইংল্যান্ড আম্পায়ার ইয়ান গোল্ড যেন গ্রুপ পর্বে ইংলিশদের হারিয়ে যে বিদায় করে দিল বাংলাদেশ, সেই প্রতিশোধই নিলেন। শেষপর্যন্ত হারলও বাংলাদেশ। রোহিত শর্মার শতকে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩০২ রান করল ভারত। জবাবে ৪৫ ওভারে ১৯৩ রান করতে পারল বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করলেন নাসির হোসেন। ভারত এত বেশি রান করার পরও মনে বিশ্বাস ছিল, স্বপ্নও ছিল অনেক বড়; যদি বাংলাদেশ কোনভাবে ভারতকে বধ করে দিতে পারে। অবশ্য ভয়ও যে ছিল। এত বড় টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে যদি দুমড়ে মুছড়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং স্তম্ভ। সঙ্গে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের চাপ নেয়ার বিষয়ও আছে। সঙ্গে আছে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মতো বড় মাঠে খেলার অনভিজ্ঞতাও। দেখা গেল বিশ্বাস, স্বপ্ন এ ম্যাচে চুড়মার হয়ে গেল। তাসের ঘরের মতো বাংলাদেশের ইনিংস চুড়মার হয়ে গেল। ৩৩ রানে তামিম (২৫) আউট হতেই ছন্নছাড়া হয়ে পড়ল ব্যাটসম্যানরা। জিততে হলে তামিমকেই কিছু করতে হতো। তিনি পারলেন না। বাংলাদেশও বড় ব্যবধানেই হারল। তামিমের পর কোন রান যোগ না হতেই ইমরুলও (৫) রান আউট হয়ে গেলেন। আগের দুই ম্যাচে টানা সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল্লাহ (২১) আউট না হয়েও আম্পায়ারের ভুল শিকারে পরিণত হলেন। ৭৩ রানে মাহমুদুল্লাহ’র আউটের পর এক এক করে ৯০ রানে সৌম্য সরকার (২৯), ১০৪ রানে সাকিব (১০), ১৩৯ রানে মুশফিক (২৭), ১৮৯ রানে নাসির, ১৯২ রানে মাশরাফি (১), ১৯৩ রানে রানের খোতা খোলার আগেই রুবেল ও সাব্বির (৩০) আউট হতেই বাংলাদেশের ইনিংসের পতন ঘটল। তাসকিন কোন রান যোগ না করে অপরাজিত থাকলেন, দলকে হারতে দেখেই মাঠ ছাড়লেন। ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভ শক্ত। তা আগেই জানা। এরপরও শুরুতে চাপ প্রয়োগ করা গেছে। কিন্তু ২৫ ওভারের পর থেকেই সব ওলট পালট হয়ে যায়। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে হারানোর স্মৃতি বার বার সামনে চলে এসেছে। সেই স্মৃতি ভারতকে ভয়ও দেখিয়েছে। শুরু থেকে ভারত যেভাবে খেলেছে, বোঝাই গেছে দলটি কতটা চাপে ছিল। যদি বাংলাদেশের কাছে কোনভাবে হেরে যায় তাহলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় তো নিবেই, সেই সঙ্গে সম্মান নিয়েও টানা হেঁচড়া হবে। ভারত তাই শুরু থেকেই সাবধানী পথেই এগিয়েছে। ২৫ ওভারে গিয়েও ১০০ রান তুলতে পারেনি ভারত। কী চাপে যে ছিল, তা বোঝাই গেছে। কিন্তু এরপর থেকেই ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করে দেয়। ৭৫ রানে শিখর ধাওয়ানকে (৩০) সাকিব আউট করেই ভারতকে চাপে ফেলেন। এরপর ৪ রান যোগ হতেই দলের এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকেও (৩) আউট করে দেন রুবেল। তখন যেন ২০০৭ সালের স্মৃতিই আবার ঘুরে ফিরে আসতে থাকে। ১১৫ রানে গিয়ে যখন আজিঙ্কে রাহানেও (১৯) প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন, তখন উত্তেজনা বেড়ে যায়। কিন্তু এরপর থেকেই যেন দুর্বার হয়ে ওঠেন ওপেনার রোহিত ও সুরেশ রায়না। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে গিয়ে ১২২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। যে দল ২৫ ওভারে কষ্ট করে ৯৯ রান তুলে, সেই দল পরের ১০ ওভারে ৫৪ রান তুলে ফেলে! ১৫৫ রানে চলে যায়। এরপর যখন পাওয়ার প্লে নেয়া হয় ৪৫ ওভারে গিয়ে রান যোগ হয় আরও ৯০! ২৪৫ রান হয়ে যায় ভারতের। এর আগেই রিভিউ নেয়ার পরও ১০ রানে এলবিডাব্লিউ হওয়া থেকে বাঁচা সুরেশ রায়না ৬৫ রান করে আউট হন। তখন দলের রান ২৩৭। ধোনি (৬) এসে তেমন কিছু করতে না পারলেও রোহিতের সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজা (২৩*) বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে ২৯৬ রানে গিয়ে ধোনিকে আউট করেন ৩ উইকেট নেয়া তাসকিন। এর আগেই এ ম্যাচে ভারতের ইনিংসের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র রোহিত ১২৬ বলে ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৭ রান করে আউট হন। অথচ এত বড় ইনিংস রোহিত করতেই পারতেন না। যদি ৯০ রানে ডিপ মিডউইকেটে শট করে যে ক্যাচ আউট হয়েছিলেন রোহিত, আম্পায়ার ইয়ান তা দিয়ে দিতেন। কিন্তু না, আম্পায়ার দিলেন ‘নো’। অথচ সবাই দেখেছে রুবেলের করা সেই বলটি ফুলটস হলেও কোমড়ের ওপরে উঠেনি। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর সঙ্গে বাংলাদেশ এর আগে রায়নার এলবিডব্লিউ নিতে গিয়ে রিভিউ হারিয়েছে। তাই আর রিভিউয়ের সুযোগ থাকেনি। শেষ পর্যন্ত ভারত শেষ ৫ ওভারে ৫৭ রান যোগ করে। শেষ ২৫ ওভারে যে ২০৩ রান হলো, সেখানেই যেন বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল বাংলাদেশের। ম্যাচ জিততে হলে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব বিভাগেই ভাল করতে হবে। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এর বিকল্পও ছিল না। অথচ যেন কোনটিই ঠিকমত হলো না। অনেক রান করে ফেলেছে ভারত। ব্যাটিংয়েও তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা সঠিকভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ফিল্ডিং আবারও সেই খারাপই হলো। এমন হলে কী ম্যাচ জেতা যায়? লড়াইওতো করা যায় না। শেষ বেলায় এসে তাই লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবিও মিলল না। তবে এই যে বাংলাদেশ লড়াই করতে পারল না, তা আম্পায়ারদের জন্যই হয়েছে। আম্পায়ারদের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে অসহায়ই করে তুলেছে। শেষ পর্যন্ত বিদায়ী সুরই বেজেছে। শেষও হয়ে গেল বাংলাদেশের বিশ্বকাপও।
×