ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জামালগঞ্জ কয়লাখনি উন্নয়নে কাজ চায় অস্ট্রেলীয় কোম্পানি সান্তোস

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২০ মার্চ ২০১৫

জামালগঞ্জ কয়লাখনি উন্নয়নে কাজ চায় অস্ট্রেলীয় কোম্পানি সান্তোস

রশিদ মামুন ॥ অস্ট্রেলীয় কোম্পানি সান্তোস জামালগঞ্জ কয়লাখনি উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে। খনি থেকে কোলবেড মিথেন পদ্ধতিতে গ্যাস উত্তোলন করতে চায় কোম্পানিটি। সাধারণত যেসব খনির অতি গভীরে কয়লা থাকে সেখানে এই পদ্ধতিতে কয়লার ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা গ্যাস উত্তোলন করা হয়। সম্প্রতি বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় সান্তোস ওই প্রস্তাব দেয়। অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফেরার পর বুধবার পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, সান্তোস আমাদের এখানে কয়লাখনির উন্নয়ন করতে চায়। বেশি গভীরতায় কয়লা রয়েছে এমন খনিতে এখনই কয়লা তোলা সম্ভব নয়। এজন্য কয়লার ফাঁকে জমে থাকা গ্যাস উত্তোলন করা হয়। ব্রিজবেনের রোমাতে এ ধরনের একটি খনিতে সান্তোস কাজ করছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সান্তোস আমাদের এখানে কাজের ক্ষেত্রে উৎপাদন বণ্টন চুক্তিতে (পিএসসি) বিভিন্ন সমস্যা থাকার কথা বলছে। অস্ট্রেলিয়া সফরের অন্যান্য দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা সেখান থেকে দেশীয় বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি ছাড়াও বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানিই আমাদের জন্য সব থেকে উপযুক্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা যায়, এর আগে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কয়লা ক্ষেত্রের অনুসন্ধান, উত্তোলন পদ্ধতি, সম্ভাব্যতা যাচাই, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ অন্য কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে সহায়তা নেয়া যায় তা নির্ধারণে জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব প্রণব কুমার ঘোষ, জিএসবির পরিচালক ড. মোহাঃ নেহাল উদ্দিন, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুজ্জামান এবং পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক নিজাম শরিফুল ইসলামকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি সরকারের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। যাতে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া থেকে সহায়তা নেয়া যায় তা নির্ধারণ করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জে ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তখনকার খনিজ ও জ্বালানি শক্তি কমিশন উন্নতমানের কয়লা সম্পদের ৭টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে। উন্নতমানের কয়লা এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ৬৭০ থেকে ১০৬২ মিটার গভীরে রয়েছে। সে সময়কার অনুসন্ধানী টিম জানায়, এসব কয়লাখনির ক্ষেত্রে এক হাজার মিলিয়ন বা এক শ‘ কোটি টন উন্নতমানের কয়লার মজুদ রয়েছে। এখান থেকে কোলবেড মিথেন পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যায় কি না সে বিষয়ে আরও গবেষণা হওয়া দরকার। এজন্য পেট্রোবাংলা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফেসিলিটেশন সেন্টারের (আইআইএফসি) হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে পাঁচটি কয়লা ক্ষেত্রে মোট মজুদের পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ টন। তাপমাত্রার হিসাবে যা ৮১ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট (টিসিএফ) গ্যাসের সমান। আর উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ১২৫ কোটি টন। যা ৩৭ টিসিএফ গ্যাসের সমান। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দেশে প্রমাণিত গ্যাস মজুদের তুলনায় এর পরিমাণ প্রায় ১৭ টিসিএফ বেশি। সরকারী হিসাব অনুযায়ী দেশের প্রমাণিত গ্যাস মজুদ ২০ দশমিক ৬০৫ টিসিএফের মধ্যে এ পর্যন্ত ব্যবহার হয়েছে অর্ধেকের বেশি। প্রতিদিনই দেশে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। অন্যদিকে কয়লার বিপুল মজুদ মাটির তলায় পড়ে আছে। প্রাথমিক হিসেবে মজুদ কয়লা দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার মেগাওয়াট করে ৫০ বছর জুড়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এখন দিনাজপুরে মাত্র একটি ২৫০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে।
×