ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৯ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ ভারত

মিথুন আশরাফ ॥ তামিম ইকবালকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশ্বকাপে তার ব্যাটিং ব্যর্থতায় বেজায় চটেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। আবেগে এমনও বলতে দ্বিধা করছেন না অনেকে, ‘তামিমকে একাদশের বাইরে রাখা উচিত।’ কিন্তু ক্রিকেটজ্ঞানীদের ঠিকই জানা আছে, তামিম এমন এক ব্যাটসম্যান, যে দিন তার দুর্দান্ত ব্যাটিং শুরু হবে; সেদিন কোন প্রতিপক্ষই ছাড় পাবে না। আজ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ। সকাল সাড়ে ৯টায় মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শুরু হবে ম্যাচটি। এ ম্যাচেই সেই দুর্ধর্ষ ব্যাটসম্যান তামিমকে মিলে যাক। এখন সেই প্রত্যাশাই আছে। তাহলেই যে হয়ে যায়। কী হয়ে যায়? ভারত বধ। এর আগেও দুইবার যা হয়েছে এবং তামিমের দুর্দান্ত শুরুতে এমনই ভয় পেয়েছে ভারত, হেরেই গেছে। তাও আবার বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপের মতো বড় টুর্নামেন্টেই তামিম তা-ব মিলেছে। তামিমের ব্যাটিং ঝড়ে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে (৫১ রান করেন তামিম) সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দর শেবাগ, শচীন টেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, যুবরাজ সিং, মহেন্দ্র সিং ধোনি, হরভজন সিং, ২০১২ সালের এশিয়া কাপে (৭০ রান করেন তামিম) গৌতম গম্ভীর, টেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, ধোনি, ইরফান পাঠান, রবীচন্দ্রন অশ্বিনদেরও যেন অসহায়ই মনে হয়েছে। শুধুই ‘তামিম, তামিম’ রব উঠেছে। তামিম ভাল শুরু করা মানেই, ম্যাচ জেতা যত কঠিনই মনে হোক, একটা আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে যায় এবং পরের সাড়ির ব্যাটসম্যানরাও (মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ) সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখে। জয়ও মিলে যায়। আজও কী তামিমের সেই দিন? হলে ভাল। জয়ও মিলে যেতে পারে। বাংলাদেশও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে যেতে পারে। আর যদি দিনটি তামিমের না হয় তাহলে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রান করা ছাড়া যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৯, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শূন্য, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩ রান করে দলকে বিপাকে ফেলেছিলেন, সেই রকমই হবে। তখন তামিমকে নিয়ে সমালোচনা আরও ডালপালা মেলবে। ভারতের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ৩ বার জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৪ সালে একবার সিরিজে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ও ২০১২ সালের এশিয়া কাপে। শেষ দুইবারেই তামিম ঝড়েই ল-ভ- হয়ে গেছে ভারত। শুরুতেই ভারত বোলারদের এমন তুলোধুনো করেছেন যে পরের ব্যাটসম্যানদের তা ধরতে রাখতে কষ্ট হয়নি এবং জিতে দুই বারই ভারতকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ও করে দেয় বাংলাদেশ। তাই তো এখন পর্যন্ত তামিমকে নিয়ে যত সমালোচনাই হোক, বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অগাধ বিশ্বাস এ ওপেনার থেকে একচুলও কমছে না, ‘তামিমও ভাল খেলছে। হয়ত দুর্ভাগ্যবশত এই টুর্নামেন্টে বড় স্কোর করতে পারছে না। আশা করি সুযোগ আছে।’ সেই সুযোগটি আজই। আজ কী তাহলে ভারতের আরেকটি বিদায়ের দিন? স্বপ্ন দেখলে বড়ই দেখতে হয়। বিশ্বকাপে খেলতে নামার আগে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারানো। তা সহজেই পারা গেছে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্নও পূরণ হয়ে গেছে। যেহেতু স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, পরের ধাপের স্বপ্নও দেখা যায়। দল তো আর খারাপ খেলছে না। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ পরপর দুই সেঞ্চুরি করেছেন। মুশফিকুর রহীমও আছেন ফর্মে। সাকিব আল হাসান ব্যাটিং ভাল করছেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে বোলিংয়ের ধারটাও বেড়ে গেছে। সাব্বির রহমান রুম্মনও ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত করছেন। সৌম্য সরকার তো কোন বোলারকেই পাত্তা দিচ্ছেন না। ব্যাটিংয়ে এসে যত নড়বড়ে অবস্থাই থাকুক, এমন সব শট খেলছেন, প্রতিপক্ষ বোলারদের নড়বড় করতে আর নিজ দলের পরের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে মূল ভূমিকাটাই পালন করছেন। এ ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে এখন তামিম শুরুটা করে দিতে পারলেই হয়ে যায়। আবার বোলিংয়ে মাশরাফি যে কী, তা এর আগেও বুঝেছে ভারত। মাশরাফি যেদিন শুরুতেই প্রতিপক্ষ ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামান, সেদিনও ভাল দিনের দেখাই মিলে। ভারতের বিপক্ষে যে বাংলাদেশ ২৭ ম্যাচ খেলে ৩ জয় তুলে নিয়েছে, তিনটিতেই মাশরাফি উজ্জ্বল নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে তো শুরুতেই ধস নামান মাশরাফি। আর ২০১২ সালে সেঞ্চুরিয়ান টেন্ডুলকরের উইকেটটি তুলে নেন। মাশরাফির সঙ্গে বোলিংয়ে আছেন রুবেল। যিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে কিভাবে ম্যাচ জেতালেন, তা এখনও সবার চোখে ভাসে। তাসকিন আহমেদও আছেন। আছেন সাকিব আল হাসানও। যাকে নিয়ে বিশেষ ভাবনায় আছে ভারতও। ভারতকে তাই হারানো অসম্ভব নয়। তবে সবকিছুই বাংলাদেশের পক্ষে আসবে যদি ব্যাটিংয়ে তামিম দুর্দান্ত শুরু করার পর সৌম্য, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিবরা তা ধরে রাখতে পারেন। আর বোলিংয়ে শুরুতেই মাশরাফি, রুবেলরা কিছু করে দেখাতে পারেন। তখন ধাওয়ান, কোহলি, রায়না, ধোনি, সামি, অশ্বিনরা অসহায় হতে বাধ্য! ব্যাটিং-বোলিংয়ে মেলবন্ধনের সঙ্গে আরেকটি দিকও বাংলাদেশকে খেয়াল রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে ফিল্ডিং। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড এমনিতেই অনেক বড়। এ মাঠে এর আগেও গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। ফিল্ডিং হয়েছে যাচ্ছে তাই। বড় ব্যবধানে হেরেছেও। কোন ম্যাচে জয় পাওয়ার পূর্বশর্তই হচ্ছে, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং সব বিভাগেই ভাল করতে হবে। কোন একটি বিভাগে খারাপ করলেই শেষ। আবহাওয়াও খানিকটা চোখ রাঙ্গাচ্ছে। মেলবোর্নে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই প্রভাব আজও থাকতে পারে। ম্যাচ আজ না হলে শুক্রবার ‘রিজার্ভ ডে’তে হবে। তাও যদি না হয় তাহলে বিশ্বকাপে পরের ধাপে ওঠার নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপ পর্বে যে দল পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে থাকবে, তারাই পরের ধাপে যাবে। সেই হিসেবে খেলা না হলে ভারতই সেমিফাইনালে উঠবে। তবে সব অন্ধকার, ধোয়াশা কেটে মাঠে খেলা হোক এবং ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত খেলা দেখিয়ে বাংলাদেশই ম্যাচ জিতে নেক সেটাই প্রত্যাশা। পারবে বাংলাদেশ সেই প্রত্যাশা মেটাতে? স্বপ্ন এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। বিশ্বাসও আছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সেই স্বপ্ন আর বিশ্বাস পুঁজি করে মাঠের লড়াইয়ে এখন ভারতকে হারাতে পারলেই তো হলো।
×