ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিশুদের আনন্দঘন দিন

দিনভর বঙ্গবন্ধু পাঠ নাচ গান কবিতায় প্রিয় পিতাকে স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৮ মার্চ ২০১৫

দিনভর বঙ্গবন্ধু পাঠ নাচ গান কবিতায় প্রিয় পিতাকে স্মরণ

মোরসালিন মিজান ॥ হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি/ শিশুপার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি/একদিন সব জানতে পারবে...। সেই জানার আকাক্সক্ষা এবং জানানোর দায়িত্ব থেকেই মঙ্গলবার রাজধানীতে আয়োজন করা হয় নানা উৎসব অনুষ্ঠানের। উপলক্ষ- জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মদিন। একইদিন জাতীয় শিশু দিবস হওয়ায় প্রায় সব অনুষ্ঠানেই উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের। এইটুকুন বাচ্চারা বড়দের মতো করে বঙ্গবন্ধুর ছবি এঁকেছে। গানে গানে প্রিয় পিতার প্রতি ভালবাসার কথা জানিয়েছে। শেখ মুজিবের পাঠ নিয়েছে ইতিহাস থেকে। এভাবে দারুণ সুন্দর একটি দিন পার করেছে শিশু-কিশোররা। এদিন সকাল থেকেই শিশু-কিশোরদের কলকাকলিতে মুখরিত ছিল বাংলা একাডেমি চত্বর। বিশাল বটবৃক্ষের নিচে সমবেত হয়েছিল ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল ও নীলক্ষেত স্কুলের ছেলে-মেয়েরা মনোযোগ দিয়ে শুনেছে বঙ্গবন্ধুর কথা। হ্যাঁ, বড়রাই শুনিয়েছেন। তবে বড়দের মতো করে নয়। শিশুতোষ উপস্থাপনা। ফলে সময়টা বেশ উপভোগ করে শ্রোতারা। ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনো’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। এ উদ্যোগ প্রথমে একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলা একাডেমি। অনুষ্ঠানের শিরোনামে আয়োজকরা ‘গল্প’ শব্দটি যোগ করলেও, আদতে তা ছিল ইতিহাস পাঠ। গল্পের মতো করেই বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস কিংবা ইতিহাসের বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করা হয়। আলোচনা করেন বেগম মমতাজ হোসেন, আলী যাকের, অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ, বুলবুল মহলানবীশ, তারানা হালিম, ডাঃ আব্দুন নূর তুষার, শমী কায়সার ও ডাঃ নুজহাত চৌধুরী। তাঁদের টুকরো টুকরো উপস্থাপনাকে এক করলে যথেষ্টই প্রকাশিত হন শেখ মুজিব। মহান নেতার ছেলেবেলা, শিক্ষাজীবন, রাজনীতির খুঁটিনাটি ওঠে আসে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুভাষ সিংহ রায়। প্রায় একই সময় শিশুদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠেছিল জাতীয় জাদুঘর এলাকা। দিবসটি উপলক্ষে এখানে শিশু চিত্রকলা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। জাদুঘরের প্রধান লবিতে আয়োজিত প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, মোট ১০০ ছবি। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আঁকা বহু ছবি থেকে এসব ছবি বাছাই করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলোর বিষয় বঙ্গবন্ধু। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা নিজেদের ভাবনা থেকে প্রিয় নেতাকে এঁকেছে। অধিকাংশ ক্যানভাসে পতাকার লাল সবুজ। উজ্জ্বল রঙে তারা বাংলাদেশ এঁকেছে। বঙ্গবন্ধুকে এঁকেছে। বাচ্চাদের মনোজগতে বাস করা মুজিব দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলাও শিখছে আগামীর নাগরিকরা। বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অবিসংবাদিত নেতাকে বর্ণনা করেছে তারা। প্রতিযোগিতায় ঢাকার খ্যাতনামা ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৮ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সভাকক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম. আজিজুর রহমান। সকালের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। বিকেলের অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক বিভাগে ৩ জন করে মোট ৬ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীকে ১টি করে বঙ্গবন্ধুর জীবনীগ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ উপহার দেয়া হয়। বিকেলে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে শিল্পকলা একাডেমি। জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শিশু সমাবেশ, আলোচনা, শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গানের প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে উপস্থিত পঙ্ক্তি রচনা প্রতিযোগিতা ও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনা করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পরে বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেয় খেলাঘর, পিপলস লিটল থিয়েটার, রণতা শিল্পী গোষ্ঠী ও শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ বিভাগের শিশুরা। নাচ গান ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এবং কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠের আয়োজন ছিল উপভোগ্য। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপন করা হয়। প্রতিটি আয়োজনই শিশু-কিশোরদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
×