ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যার বিচার না হলে কোন দেশে আইনের শাসন সম্ভব নয়

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ মার্চ ২০১৫

গণহত্যার বিচার না হলে কোন দেশে আইনের শাসন সম্ভব নয়

তৌহিদুর রহমান ॥ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গণহত্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডেনিয়েল ফেইরিস্টেন বলেছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার বিচার বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। এই বিচার প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে বিভিন্ন দেশের গণহত্যা বিচারে সহায়তা করবে। কোন দেশে গণহত্যার বিচার না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। জনকণ্ঠকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণহত্যা ও ন্যায়বিচার’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে সম্প্রতি ঢাকায় আসেন অধ্যাপক ডেনিয়েল ফেইরিস্টেন। ঢাকায় অবস্থানকালে জনকণ্ঠকে তিনি এই বিশেষ সাক্ষাতকার দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারের সভাপতি ডেনিয়েল ফেইরিস্টেন বলেন, ১৯৭১ সালে এখানে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। তাই বাংলাদেশের গণহত্যার বিচার বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্বের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাংলাদেশে ভয়াবহ গণহত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। এখন বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে গণহত্যার বিচার শুরু করেছে। এই বিচার প্রক্রিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বকেই প্রভাবিত করবে। এই বিচার প্রক্রিয়া বিভিন্ন দেশের গণহত্যা বিচারে সহায়তা করবে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় নারী নির্যাতনের বিচার করা এখনও সম্ভব কি-না জানতে চাইলে অধ্যাপক ডেনিয়েল বলেন, এখানে ১৯৭১ সালে অনেক নারী ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। সাক্ষী ও তথ্য প্রমাণ থাকলে এই বিচার এখনও করা সম্ভব। বীরঙ্গনাদের সম্মান দেখাতে না পারলে, বাংলাদেশ জাতি হিসেবে পিছিয়ে থাকবে। সে কারণে নারী নির্যাতনের বিচার অবশ্যই হতে হবে। বর্তমানে গঠিত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে নারী নির্যাতনের বিচার হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিশ্বে গণহত্যা প্রতিরোধে কি কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা বিভাগের অধ্যাপক ডেনিয়েল ফেইরিস্টেন বলেন, গণহত্যা প্রতিরোধকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। কোন দেশে যেন গণহত্যা না ঘটে, সে বিষয়ে সকলকেই সচেতন হতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্ন ধরনের চিন্তা ও আদর্শ চাপিয়ে দেয়ার জন্যও গণহত্যা করা হয়। এসব বিষয়েও লক্ষ্য করা প্রয়োজন। মানবতাকে উর্ধে তুলে ধরে গণহত্যা প্রতিরোধ করতে হবে। একই সঙ্গে সকল দেশে গণহত্যার বিচার হতে হবে। তাহলেই গণহত্যার সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। ‘গণহত্যা ও সামাজিক অনুশীলন’ শীর্ষক বইয়ের লেখক ডেনিয়েল ফেইরিস্টেইন বলেন, গণহত্যা একটি সমাপ্ত অপরাধ। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় গণহত্যার বিচার বিভিন্ন দেশে দেশে হয়েছে। এখনও বিভিন্ন দেশে গণহত্যার বিচার চলছে। মানবতার স্বার্থেই গণহত্যার বিচার হতে হবে। কোন দেশে গণহত্যার বিচার না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কোথাও কোথাও গণহত্যার বিচার দীর্ঘ মেয়াদে হয়েছে। আবার কোথাও খুব দ্রুত গতিতে হয়েছে। তবে যেভাবেই বিচার হোক না কেন, বিচারটি স্বচ্ছতার সঙ্গে হতে হবে। তা না হলে বিচার নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তবে বাংলাদেশে যে গণহত্যার বিচার হচ্ছে, সেটি স্বচ্ছতার সঙ্গেই হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ডেনিয়েল বলেন, যে কোন দেশে গণহত্যার বিচার করতে গেলে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হয়। জনসমর্থন ও জনসম্পৃক্ততা ছাড়া কোন সরকারই গণহত্যার বিচারে সফল হতে পারে না বলে তিনি জানান। আর্জেন্টিনায় সংঘটিত গণহত্যার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ফেইরিস্টেন বলেন, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সামরিক সরকার সেখানে গণহত্যা চালায়। সে সময় সরকার বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো হয়েছিল। সে সময়ে সংঘটিত গণহত্যার বিচার এখন চলছে। আজেন্টিনার গণহত্যার সঙ্গে জার্মানির নাজি বাহিনীর সংঘটিত গণহত্যার সঙ্গে মিল রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় সামাজিক সম্পর্ককে ধ্বংস করার জন্যই গণহত্যা চালানো হয়। আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের গণহত্যার বিষয়ে কোন সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখা যায় কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেনিয়েল ফেইরিস্টেন বলেন, বাংলাদেশ ও আর্জেন্টিনার গণহত্যার প্রেক্ষপট ভিন্ন। আর্জেন্টিনায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল সামরিক সরকারের মাধ্যমে। আর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে গণহত্যা হয়। তবে এখন উভয় দেশেই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেটা খুবই ইতিবাচক।
×