ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার

নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ॥ বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৭ মার্চ ২০১৫

নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ॥ বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই বাগেরহাটের ভৈরব (দড়াটানা) নদীর ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫/৩ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ধসে যাচ্ছে বাঁধের প্রতিরক্ষায় ফেলা ব্লক। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫/৩ পোল্ডারের বেড়িবাঁধের মেরামত ও নদীর তীর রক্ষা কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও চুক্তি আনুযায়ী কাজ না করার কারণে বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে বলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের নোনা পানি থেকে বাগেরহাট জেলা সদরসহ কয়েকটি এলাকার লক্ষাধিক মানুষকে রক্ষায় নব্বইয়ের দশকে পাউবো নির্মাণ করে ৩৫/৩ পোল্ডার। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই পোল্ডারের ভৈরব (দড়াটানা) নদী তীদের রাধাবল্লভ, পঞ্চমালা অংশে মারাত্মক ভাঙন দেখা দেয়। এতে ঝুঁকিতে পড়ে পাউবোর এ বেড়িবাঁধ। ফলে বছর বছর বর্ষা মৌসুমে নদীর এই অংশে ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করায় জোয়ারের সময় ভেসে যায় আশপাশের হাজারও মানুষের ফসল, মাছের ঘের ও বসতবাড়ি। অব্যাহত এ ভাঙন ঠেকাতে ও বর্ষার জোয়ারে পানি থেকে রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পোল্ডারের এই অংশে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের অক্টোবরে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বাঁধের ৩৭৫ মিটার এলাকায় ব্লক ফেলা হয়। কিন্তু পুরো কাজ শেষের আগেই ধসে পড়ে ব্লকের অনেক জায়গা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বিশ^ব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৩৫/৩ পোল্ডারে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্যাকেজে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ২০১০-১১ অর্থবছরে দরপত্র আহ্বান করে। চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক এই পোল্ডারের ৩৭৫ মিটার ব্লক এবং প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষার জন্য ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। সরেজমিন বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ভৈরব (দড়াটানা) নদী তীরে রাধাবল্লভ এলাকায় সদ্য ব্লক ফেলা বাঁধের ৩৭৫ মিটারের অন্তত তিনটি স্থান দেবে গেছে। এতে কয়েক জায়গায় ধস দেখা দিয়েছে। ইউনিয়নের রাধাবল্লভ, পঞ্চমালা, খেগড়াঘাট, মাদারদিয়া বাঁশবাড়িয়াসহ কয়েকটি গ্রামের হাজারও মানুষের বসবাস এই ভৈরব নদী তীরে। বাঁধের পাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে তাদের মাছের ঘের, ফসলি জমি ও বসতঘর। আর এ বাঁধকেই রাস্তা হিসাবে ব্যবহার করেন এ এলাকার মানুষ। তাই এবারের বর্ষা মৌসুমের আগেই বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি ছিল এলাকার সাধারণ মানুষের। কিন্তু নির্মাণের ১৫ দিনের মাথায় বাঁধের ব্লকে ধস নামায় ক্ষুব্ধ তারা। বাঁধ তৈরির আগেই যদি ধসে বা ভেঙে যায় তবে এবারের বর্ষা মৌসুমে তাদের কি হবে এ চিন্তায় অস্থির নদী তীরবর্তী এসব মানুষ। তাদের দাবি আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই বাঁধটি পুনর্নির্মাণ করা হোক। ভৈরব নদী তীরের পঞ্চমালা গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণী পড়ুয়া রাসেল নকিব। সে জানায়, জেলা শহরের বাসাবাটি স্কুলে তার যাতায়াতের একমাত্র পথ এই বাঁধ। কিন্তু প্রতিবছরই বর্ষায় ভাঙ্গনের কারণে এ এলাকা পানিতে ডুবে যায়। তখন স্কুলে যেতে পারে না তারা। বাঁধ সংলগ্ন জমির ঘের মালিক মোঃ রেজাউল শেখ টিপু জানান, গত ৪/৫ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বাঁধের এই অংশে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে। জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসল, মাছের ঘের, বসতবাড়ি সবকিছু। দীর্ঘদিন ধরে এখানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের দাবি ছিল। কিন্তু কাজ শুরু হলেও মান ভাল নয়। ব্লক বসানোর সময় ভেতরে পাথর ফেলার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তাই কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাধাবল্লভ এলাকার কৃষক হারুণ শেখ জানান, বাঁধের পাড়ে তাদের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ৫/৬টি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বাস। বছর বছর ভাঙ্গনের কারণে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে তাদের জমি। বাঁধ না থাকায় গত বছর তাদের পানিবন্দী থাকতে হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাগেরহাটে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাইন উদ্দিন বলেন, কাজটি মূলত বিশ্বব্যাংকের। ওখানে এক কিলোমিটার অংশে কাজ করার কথা। পিস মিল কাজ আসলে টেকসই হয় না। ওখানে ডাম্পিংয়ের কাজও এখনও শেষ হয়নি।
×