ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাশিয়ায় বছরে এক লাখ টন আলু রফতানির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১৭ মার্চ ২০১৫

রাশিয়ায় বছরে এক লাখ টন আলু রফতানির উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ শ্রীলঙ্কার পর এবার রাশিয়ায় আলু রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রাশিয়ায় প্রতিবছর ১ লাখ টন আলু রফতানি হতে পারে। তবে আলু হতে হবে সম্পূর্ণ ভাইরাসমুক্ত। এছাড়া রফতানির আগে পরীক্ষাগারে ফাইটো স্যানিটারি (পিসি) পরীক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে উদ্যোক্তারা মানহীন আলু রফতানি করায় জটিলতা তৈরি হয়। এতে আলু না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেয় আমদানিকারকরা। তবে এই সমস্যা দূরীকরণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রাশিয়ায় আলু রফতানিতে সরকারী সহযোগিতা প্রদান করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, রফতানিকারকরা মানহীন ও ভাইরাসযুক্ত আলু রফতানি করায় ইতোমধ্যে কিছু চালান বাতিলের শঙ্কা দেখা দেয়। এ শঙ্কা দূর করে ভাবমূর্তি রক্ষায় এখন কাজ করছে সরকার। বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কয়েকটি সমন্বয় সভা করেছে। এসব সভায় রফতানি আলুর মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, কারা রফতানি করতে পারবে, কোথায় মান পরীক্ষা করা হবে এবং মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা কী হবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী জনকণ্ঠকে বলেন, আলু রফতানির বিষয়টি নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু মানহীন ও ভাইরাসযুক্ত আলু রফতানির কারণে ইতোমধ্যে কয়েকটি চালান নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শাকসবজি রফতানিতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। এবার আলু রফতানির ক্ষেত্রেও এই জটিলতা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে আলু রফতানি হতে পারে। তাই নিজেদের ইমেজ ধরে রেখে যাতে ভালমানের আলু রফতানি হতে পারে সে বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, রফতানিকারকরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায়ই সিংহভাগ আলু রফতানি করেন। এছাড়া গ্রিস, হংকং, যুক্তরাজ্য, ব্রুনাই, বাহরাইন, ইতালি, কম্বোডিয়া, কুয়েত, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, নেপাল, ওমান, পোল্যান্ড, টঙ্গো ও ভিয়েতনামে স্বল্প পরিসরে আলু রফতানি হয়। সম্প্রতি সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে দেখা দিয়েছে রাশিয়া। গত বছর দেশটিতে আলু রফতানি শুরু হয়। কিন্তু শুরুতেই মান নিয়ে বাধে বিপত্তি। রফতানিকারকরা মানহীন ও ভাইরাসযুক্ত আলু রফতানি করায় চালান বাতিলের শঙ্কা দেখা দেয়। জানা গেছে, প্রতিবছর আলু উৎপাদন বাড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও বিপণনে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। উৎপাদিত আলু ও মজুদ আলু নিয়ে হিমাগার মালিক-কৃষক উভয়ই মহাসঙ্কটে থাকেন। আলুর বিকল্প ব্যবহার ও শিল্পে ব্যবহারসহ রফতানিতে প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি করা হলেও এতে নজর দেয়া হয়েছে কম। গত বছর থেকে দেশে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত আলু উৎপাদনে ভারসাম্য আনতে উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। প্রণোদনা হিসেবে আলু রফতানির ওপর নগদ সহায়তা ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, শিল্প খাতে আলুর ব্যবহার বাড়াতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে অল্প সুদে ঋণসহ পটেটো ফ্লেক্স কারখানাগুলোকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়া এবং কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্যে আলু বিক্রি করতে পারেন এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। জানা গেছে, ভারত ও পাকিস্তানে এবার আলুর ফলন কম হয়েছে। মিসর থেকে রাশিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আলু রফতানি হতো। কিন্তু এবার মিসরেই আলুর দাম আকাশচুম্বী। এ কারণে এ বছর আলু রফতানির জন্য বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে প্রথম বাংলাদেশ থেকে আলু রফতানি শুরু হয়। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, চীন বিশ্বের বৃহৎ আলু উৎপাদনকারী দেশ। চীন বছরে প্রায় এক কোটি ৩৫ লাখ টন আলু উৎপাদন করে। এর পরই আলু উৎপাদনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
×