ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগার আতঙ্কে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৭ মার্চ ২০১৫

টাইগার আতঙ্কে ভারত

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মেলবোর্নে প্রথমবার খেলার স্মৃতিটা সুখকর হয়নি বাংলাদেশ দলের জন্য। গ্রুপপর্বে শ্রীলঙ্কার কাছে এ ভেন্যুতেই হেরেছে বড় ব্যবধানে। সেখানেই এবার অন্যতম ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতের মুখোমুখি হবে টাইগারবাহিনী। সেই ভারত আবার বিশ্ব ক্রিকেটকে ঢেলে সাজার জন্য ‘বিগ থ্রি’ প্রস্তাবনার অন্যতম রূপকার ও প্রধান ‘মোড়ল’। ‘বিগ থ্রি’ থেকে ইতোমধ্যেই এক মোড়ল ইংল্যান্ডকে শিকার করে ফেলেছে বাংলাদেশ। বিদায় দিয়েছে তাদের গ্রুপপর্ব থেকেই। এবার ভারতকে মোকাবেলার জন্য জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মাশরাফি বিন মর্তুজা শিবির। অতীতে তিনবার ভারতকে হারিয়ে দিলেও সেসব ভুলে এবার নতুন করে আলাদা পরিকল্পনা আঁটছেন বাংলাদেশের কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহে। আর টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি তো হুঙ্কার দিয়েই দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিলেনÑ ছোট থেকে ‘বড়’ দল হয়ে ওঠার লড়াই এবার। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে আয়োজিত বিশ্বকাপে এশিয়ার দলগুলোর ঈর্ষণীয় সাফল্যে এখন নড়েচড়ে বসেছেন বিশ্বের ক্রিকেটবোদ্ধারা। গতি ও বাউন্সে ভরপুর উইকেটে এশিয়ার দলগুলোর সাফল্য পাওয়া নিয়ে যাদের সন্দেহ ছিল তাঁরা এখন উল্টো ধরেই নিচ্ছেন এশিয়াতেই শিরোপা যাবে ১৯৯২ সালের মতো। এমন চিন্তার জন্ম দিয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান গ্রুপপর্বে দুর্দান্ত সাফল্য দেখিয়ে। বুধবার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে লঙ্কানদের জন্য তাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভাবতে হচ্ছে অনেক ধরনের ভাবনা এবং নিতে হচ্ছে বিশেষ পরিকল্পনা। ২৩ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাঠ থেকে বিশ্বকাপ নিয়ে এসেছিল পাকিস্তান। এবার দীর্ঘ সে সময় শেষে আবারও ট্রান্স-তাসমান অঞ্চলে বিশ্বকাপ। তবু সাম্প্রতিক সময়ে (বিশ্বকাপের আগে) যারা ফেবারিট সেই এশিয়ার দলগুলোর হতাশাব্যঞ্জক নৈপুণ্য হিসাবের বাইরে রেখেছিল তাদের। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং গত দুইবারের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কাকেও কেউ বিবেচনায় রাখেননি। তবে গ্রুপপর্ব শেষ হওয়ার পর এখন এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর শক্তি বাংলাদেশকেও রাখতে হচ্ছে বিবেচনায়। চারটি দলই কোয়ার্টার নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের কাছে হেরে বাদ পড়েছে ইংল্যান্ডের মতো ক্রিকেট ‘মোড়ল’। ৬ ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ, তীব্র লড়াই করেছে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। একটি ম্যাচেই কিছুটা সহজ আত্মসমর্পণ করেছে কুমার সাঙ্গাকারার অতিমানবীয় নৈপুণ্যে দুরন্ত শ্রীলঙ্কার কাছে। ভারতের সঙ্গে এবার যুদ্ধটা হুট করেই নিজেদের অস্তিত্বটাকে বড় পরিসরে জানান দেয়া বাংলাদেশের। ‘মোড়ল’ ভারতকে হারিয়ে দিতে পারলেই আমূল পরিবর্তন ঘটবে ক্রিকেট বিশ্বে, পরিবর্তন হয়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটও। এ বিষয়ে তাই অধিনায়ক মাশরাফি গর্জন ছাড়লেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে ভাল করে আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে যেতে চাই অন্য এক উচ্চতায়। যেখান থেকে কেউ যেন আমাদের নিয়ে কটাক্ষ করার সাহস না পায়। এটা আমাদের বড় দল হয়ে ওঠার লড়াইও।’ সত্যি ভারতকে হারিয়ে দিতে পারলেই বিশ্বে নতুন ক্রিকেট পরাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা না করে উপায় থাকবে না কারও। ইতোমধ্যেই কি বাংলাদেশ প্রমাণ দেয়নি যে তারা আসলে গায়ে সেঁটে থাকা ‘ছোট’ তকমার আড়ালে ‘বড়’ দল? কে হিসেব করেছিলেন এবার বিশ্বকাপে টাইগাররা শেষ আটে উঠবে? ভারতকে ২০০৭ বিশ্বকাপে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই হারের বেদনা ভুলতে পারেনি ভারত। কারণ গ্রুপপর্ব থেকেই ছিটকে যেতে হয়েছিল তাদের। সেই আক্ষেপেই হয়ত ২০১১ সালের পরের বিশ্বকাপে শিরোপাটাই ঘরে তুলল ভারত! তবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নামার আগে পুরনো ক্ষতটার কারণেই টাইগারদের বিরুদ্ধে নামার পর কিছুটা ভীত থাকবে তারা। কিন্তু পুরনো কথা মনে রাখতে নারাজ বাংলাদেশ কোচ হাতুরাসিংহে। তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারব না অতীতে আসলে কী ঘটেছিল? এখন যেটা আমি বলতে পারি তা হচ্ছে নিজেদের ওপর আমাদের যথেষ্ট বিশ্বাস আছে এবং নিজেদের সামর্থ্য অনুসারে নৈপুণ্য দেখাতে চাই। সেজন্য যতটা সম্ভব সেরা প্রস্তুতিই গ্রহণ করব আমরা। আমরা দেখছি ভারতের বিরুদ্ধে কিভাবে ম্যাচ খেলা যায়। আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে ভারতীয় শক্তিকে মোকাবেলার জন্য আমাদের কী কী শক্তি মজুদ রয়েছে এবং আমরা কিভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’ প্রথম দুই ম্যাচ হারলেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানও। টানা চার ম্যাচ জিতে আরেকবার ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা থাকার প্রমাণ দিয়েছে। আর বিশ্বকাপের আগে টানা দুই মাস অস্ট্রেলিয়া সফরে থেকে জয়শূন্য ভারত গ্রুপপর্বে ৬ ম্যাচ জিতে অপরাজিত! লঙ্কানরাও দুর্দান্ত খেলে উঠেছে কোয়ার্টারে। এশিয়ার হুঙ্কারে এখন অন্য দলগুলোও আতঙ্কিত। বিশ্বকাপ আবারও চলে যেতে পারে এশিয়াতে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ওয়াসিম আকরাম তেমনটাই বলছেন। তিনি বলেন, ‘এশিয়ার কোন দেশ শিরোপা জিতবে না- এবার তা ভাবার কারণ নেই। দলগুলো অনেক ভাল খেলেছে এবং শেষ পর্যন্ত যাওয়ার উপযুক্ত। যদিও নকআউটে এসে অতীত নৈপুণ্য আর বিবেচনার বিষয় নয়। নির্দিষ্ট দিনে কেমন খেলছে সেটার ওপরই নির্ভর করছে সব।’ বুধবার প্রথম কোয়ার্টারে তাই লঙ্কানদের বিরুদ্ধে নামার আগে দারুণ হিসেব করতে হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা বলেন, ‘অধিকাংশ ক্রিকেটারই বেশ ফুরফুরে ও তরতাজা আছেন। কিন্তু অন্য অনেক দলই এখানে দীর্ঘদিন ধরে থাকার কারণে আমাদের মতো চাঙ্গা নেই। শ্রীলঙ্কা চ্যালেঞ্জিং দল এবং নকআউটে আমাদের ভাল করার ইতিহাস কম। আর সেজন্যই আমরা এবার কিছু করতে উদগ্রীব হয়ে আছি।’
×