ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা

খালেদার আবেদনের বিষয়ে রায় ৫ এপ্রিল

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৬ মার্চ ২০১৫

খালেদার আবেদনের বিষয়ে রায় ৫ এপ্রিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আবেদনের বিষয়ে রায় ঘোষণার দিন ফের পিছিয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে আদালতে উপস্থিত না হয়ে সময় আবেদন করলে এ আবেদনের বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ৫ এপ্রিল দিন ঠিক করেন আদালত। অন্যদিকে ড্যান্ডি ডাইংয়ের ৪৫ কোটি টাকা খেলাপী ঋণের মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং তাঁর ছোট ছেলের স্ত্রী ও দুই নাতনিকেও বিবাদী করার অবেদন করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত ৮ মার্চ ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতে এ আবেদন করা হলেও রবিবার বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে পারেন। রবিবার বিচারপতি মোঃ মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা বাতিল বিষয়ে দ্বিতীয় দফা রায়ের এ দিন পুনর্নির্ধারণ করে। এর আগে ৫ মার্চ হরতাল-অবরোধে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অনুপুস্থিতিতে মামলা বাতিলের বিষয়ে রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ১০ মার্চ রায়ের দিন নির্ধারণ করেছিল হাইকোর্ট। এরপর ৮ মার্চ শুনানিতে অংশ নেয়ার বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা আবেদন মঞ্জুর করে আদালত ১৫ মার্চ রায়ের দিন পুনর্নির্ধারণ করে। রবিবার রায়ের নির্ধারিত দিনে খালেদা জিয়ার পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ আলী আদালতে বলেন, ‘মামলার ফাইলিং ল’ইয়ার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্পাদক প্রার্থী। তাই তিনি ব্যস্ত আছেন। আমরা তাঁর পক্ষে শুনানির জন্য সময় চাই।’ পরে আদালত বলে, ৫ এপ্রিল রায় ঘোষণার নতুন দিন নির্ধারণ করছি। তবে এর আগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের শুনানিতে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। জরুরী অবস্থার সময়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মোঃ সামছুল আলম। মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এতে চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মরহুম), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরহুম), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সমাজ কল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল। পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বেআইনী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। পরে সময়ে সময়ে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া। ড্যান্ডি ডাইং মামলায় খালেদাকেও বিবাদী করার আবেদন ॥ ড্যান্ডি ডাইংয়ের ৪৫ কোটি টাকা খেলাপী ঋণের মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং তাঁর ছোট ছেলের স্ত্রী ও দুই নাতনিকেও বিবাদী করার অবেদন করা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে গত ৮ মার্চ ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতে এ আবেদন করা হলেও রবিবার বিষয়টি সাংবাদিকরা জানতে পারেন। এ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রোকসানা আক্তার হ্যাপী আজ সোমবার আবেদনটির ওপর শুনানি এবং ‘ইস্যু গঠনের’ দিন রেখেছেন। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত কোকো মারা যাওয়ায় তাঁর জায়গায় নতুন করে এই চারজনকে বিবাদী করতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘অর্থঋণের মামলায় কোন বিবাদী মারা গেলে তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদের বিবাদী হিসেবে স্থলাভিষিক্ত করার নিয়ম রয়েছে। এ কারণেই আমরা আবেদন দিয়েছি।’ খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি তিনজন হলেন- কোকোর স্ত্রী শার্মিলা রহমান সিঁথি ও তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান। গত জানুয়ারিতে কোকোর মৃত্যুর পর দেশে এলেও দাফন শেষে মেয়েদের নিয়ে মালয়েশিয়া ফিরে যান শার্মিলা রহমান। মুদ্রাপাচার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কোকো গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে পরিবার নিয়ে সেখানেই বসবাস করছিলেন। ড্যান্ডি ডাইং মামলার ১০ নম্বর বিবাদী মোজাফফর আহমেদের মৃত্যুর পরও তাঁর স্ত্রী শামসুন্নাহার ও ছেলে মাসুদ হাসানকেও বিবাদী করেছিল সোনালী ব্যাংক। ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা ঋণখেলাপের অভিযোগে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম অর্থঋণ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য বিবাদীরা হলেনÑ ড্যান্ডি ডাইং লিমিটেড, খালেদার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদার ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের ছেলে শামস এস্কান্দার, সাফিন এস্কান্দার, মেয়ে সুমাইয়া এস্কান্দার, স্ত্রী নাসরিন আহমেদ, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, তাঁর স্ত্রী শাহিনা বেগম ও কাজী গালিব অহমেদ। মামলার আর্জিতে বলা হয়, ১৯৯২ সালে তিন কোটি টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে ড্যান্ডি ডাইং লিমিটেড। ১৯৯৩ সালের ৫ মে সোনালী ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নেন বিবাদীরা। এরপর ১৯৯৬ সালে সাঈদ এস্কান্দারের আবেদনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবার ঋণ মঞ্জুর করে। ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ড্যান্ডি ডাইংকে দেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ কোটি ৬৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সোনালী ব্যাংক বলছে, ড্যান্ডি ডাইং খেলাপী হয়ে পড়লে কিস্তি পরিশোধের জন্য বার বার তাগাদা দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করেছিল।
×