ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে তিন নাটকের মঞ্চায়ন

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৪ মার্চ ২০১৫

ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে তিন নাটকের মঞ্চায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন বোর্ডে ঝুলছে বিশ্ববরেণ্য নাট্যকারদের প্রতিকৃতি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, হ্যারল্ড পিন্টার, উৎপল দত্ত, শ¤ু¢ মিত্রের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছেন মুনীর চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল মামুন, সেলিম আল দীনের মতো এই বাংলার নাটকের দিকপালরা। নাট্যানুরাগীরা ঘুরে ঘুরে দেখছেন এসব পথিকৃৎ নাট্যকারদের প্রতিকৃতি। আর বোর্ডগুলোর পাশে একটি অস্থায়ী মঞ্চে নাট্য প্রদর্শনীর আগে জরুরী বৈঠক করছেন কলাকুশলীরা। অন্যদিকে কাউন্টারে উৎসব বুলেটিনসহ নাটকের নানা স্মারকগ্রন্থ সাজিয়ে বসিয়েছেন নাট্যকর্মীরা। শুক্রবার বিকেলে এমন দৃশ্যের দেখা মিলল শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার লবিতে। এভাবেই ধরা দিল দ্বিতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের দ্বিতীয় দিনটি। সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক সেøাগানে বৃহস্পতিবার এই উৎসবের সূচনা হয়। দেশের ২৩টি নাট্যদলের সঙ্গে ভারত, চীন ও যুক্তরাজ্যের ৫টি দলের সমন্বয়ে ২৮টি প্রযোজনা দিয়ে সাজানো হয়েছে এ উৎসব। যৌথভাবে দশ দিনব্যাপী এ উৎসবের আয়োজক ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) বাংলাদেশ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। প্রথম দিনের উৎসবে কোন নাট্য প্রদর্শনী ছিল না। শুক্রবার ছুটির দিনের সন্ধ্যায় একসঙ্গে একাডেমির তিনটি হলে মঞ্চস্থ হলো তিনটি নাটক। জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হয় আরণ্য নাট্যদলের সাম্প্রতিক প্রযোজনা ভঙ্গবঙ্গ। এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় নাট্যদল আগন্তুকের নাটক অন্ধকারে মিথেন। স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রযোজনা কবি। দেশ বিভাগের আলোকে মামুনুর রশীদের রচনা থেকে আরণ্যকের ভঙ্গবঙ্গ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন ফয়েজ জহির। দুই দেশের দুই সীমান্ত অঞ্চল বেনাপোল ও হরিদাসপুরকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে প্রযোজনাটির প্রেক্ষাপট। উপস্থাপিত হয় দুটি স্থলবন্দরকে ঘিরে নানা শ্রেণীর মানুষের প্রতিদিনের কর্মচঞ্চলতা। সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, মানি এক্সচেঞ্জের দালাল, পরিবহন শ্রমিক, চোরাকারবারি, যৌনকর্মীসহ রং-বেরঙের মানুষের আনাগোনা সেখানে। ঘটনাচক্রে এপারের চোরাকারবারি রাজার সঙ্গে ওপারের যৌনকর্মী মালিনীর প্রেম-বিরহ, গলাধাক্কা খেয়ে মাতাল বিশুর জীবনবোধ, কাস্টমস-ইমিগ্রেশনের বাণিজ্য-সঙ্কটসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা উঠে আসে। এত সব ঘটনার মধ্যে হঠাৎ উদ্ভট একজন মানুষের আবির্ভাব নিত্যদিনের আবহ ঘোলাটে করে তুলে। নাটক পুরোপুরি জমে ওঠে এ চরিত্রটির আগমনের মধ্য দিয়ে। নাটকের একপর্যায়ে দেখা যায়, উদ্ভট ওই মানুষটি শিলাইদহ পতিসরে যাবে, নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়াবে প্রমত্তা পদ্মায়। সে বুঝতে চায় না ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, বাংলা ভাষাভাষীদের ভূমির বিভাজন। যেখানে পাখি উড়ে যায়, বাতাস ও নদীর জল অবলীলায় প্রবহমান, সেখানে যাওয়া মানুষের অগম্য কেন হবে? ঘনীভূত হয় সঙ্কট। ইমিগ্রেশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পরিস্থিতি। থেমে যায় সীমান্তের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহ। বন্ধ হয়ে যায় যাত্রীদের স্বাভাবিক চলাচল। হাজার হাজার যাত্রী দুই পারে আটকা পড়ে। কঠোর হয় সীমান্তের পাহারা। রাষ্ট্রের কর্ণধারদের আগমন এক্ষেত্রে কোন আশা জাগাতে পারে না। উদ্ভট মানুষটি অবলীলায় সীমান্ত অতিক্রম করে এ সঙ্কট আরও তীব্র করে তোলে। এমনই গল্পের ভিত্তি নিয়ে নির্মিত নাটক ভঙ্গবঙ্গ। প্রযোজনাটিতে অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, তমালিকা কর্মকার, আরিফ হুসাইন, আমানুল হক, রুবলী চৌধুরী, সাজ্জাদ সাজু, ফিরোজ মামুন, কামরুল হাসান, সাইদ সুমন, হাসিম মাসুদ, মনির জামান, কাজী আল আমিন, পার্থ চ্যাটার্জি, লায়লা বিলকিস প্রমুখ। দুই বাংলার নাট্যমেলার সমাপ্তি ॥ দুই বাংলার ১৩টি দর্শকনন্দিত নাটকে সাজানো উৎসবের শেষ হলো শুক্রবার। নাট্যদল প্রাঙ্গণেমোর আয়োজিত ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা রবীন্দ্রনাট্য ও অন্যান্য’ শীর্ষক এ উৎসবের সূচনা হয় ৬ মার্চ। শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত নাট্যমেলাটি উৎসর্গ করা হয় প্রয়াত নাট্য অভিনেতা ও নির্দেশক খালেদ খানকে। শুক্রবার সমাপনী সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ভারতের নাট্যদল নয়ে নাটুয়ার প্রযোজনা মিসড কল। দেবশঙ্কর হালদার রচনায় গৌতম হালদার নির্দেশনায় নাটকটিতে লালটু চরিত্রে গৌতম হালদার, রনী চরিত্রে দেবশঙ্কর হালদার এবং ড. মিত্র চরিত্রে দ্যুতি ঘোষ অভিনয় করেছেন। নাটকটি লেখা হয়েছে মিথ্যা বা জাল যোগাযোগের নতুন ঘটমান বিষয় সম্পর্কে যেখানে মানুষ মুঠোফোনে মিথ্যা বর্ণনা করে এবং নিজেকে জাহির করে। এ কথা বিশ্বাস করা হয় যে, একজন মানুষের যত বেশি ফোন কল তত বেশি সামাজিকভাবে অত্যবশকীয়। মিসড কল নাটকটি মুরু হয় লালটু ও রনির ভুয়া বা জাল যোগাযোগের দ্বারা পিতামাতার এবং চাপ সংক্রান্ত মারামারির মাধ্যমে। আমিনুল ইসলাম বাদশাকে নিবেদিত স্মারকগ্রন্থ ॥ খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবী, ভাষা সংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, দেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়ামের সাবেক সদস্য কমরেড আমিনুল ইসলাম বাদশার স্মরণে প্রকাশিত হলো স্মারকগ্রন্থ। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর সেগুন বাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে স্মারকগ্রন্থ সম্পাদনা পরিষদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ভাষাসৈনিক আহমেদ রফিক, দেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, আমিনুল ইসলাম বাদশা ফাউন্ডেশনের সাবিরুল ইসলাম বিপ্লব ও জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনীর অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন প্রমুখ। প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আলোচনায় আলোচকরা বলেন, কমরেড আমিনুল ইসলাম বাদশা ছিলেন সমাজতান্ত্রিক আদর্শভিত্তিক রাজনীতির উজ্জ্বল নক্ষত্র। সততা, আদর্শবাদিতা, ত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। দেশকে আদর্শবাদী ধারায় পরিচালিত করতে তার মতো বিপ্লবীদের জীবন ও সংগ্রাম থেকে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা নিতে হবে। অনুষ্ঠানে শুরুতেই ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হল বলিদান’ শীর্ষক দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বাচিকশিল্পী কাজী মদিনা। অগ্নিবীণা ললিতকলা একাডেমির বার্ষিকী উপলক্ষে সঙ্গীতানুষ্ঠান ॥ মুন্সীগঞ্জে অগ্নিবীণা ললিতকলা একাডেমির দ্বাদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সঙ্গীতানুষ্ঠান মালখানগর ডিগ্রী কলেজ হল রুমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যক্ষ শফিউদ্দিন হাওলাদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজদিখান উপজেলা চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ মতিন হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোহরাব হোসেন, মালখানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহম্মদ আমির হোসাইন। এছাড়া এলাকার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে তিন গুণী শিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
×