ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি রফতানি দশ শতাংশ হ্রাস

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ১৩ মার্চ ২০১৫

সবজি রফতানি দশ শতাংশ হ্রাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রতিদিনই বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতি। এ অস্থিরতা অবসানে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের আহ্বানে সাড়াও মিলছে না। গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে সৃষ্ট এ সঙ্কটে ভরা মৌসুমেও কম দামে সবজি পাননি ক্রেতারা। আর কৃষক বঞ্চিত হয়েছেন ন্যায্যমূল্য থেকে। জানা যায়, চলমান হরতাল-অবরোধে পরিবহন ব্যয়সহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় কমছে সবজি রফতানিও। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই- ফেব্রুয়ারি) সবজি রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ সময়ে সবজি রফতানি হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ কম। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি কমেছে ১০ দশমিক ০২ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মোট সবজি রফতানি হয় ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সবজি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রফতানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলারের। এ সময়ে রফতানি হয়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের সবজি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সবজি রফতানি কম হয়েছে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের বা ৩০ শতাংশ কম। অন্যদিকে, গত অর্থবছরের একই সময়ে সবজি রফতানিতে আয়ের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসেবে রফতানি কম হয়েছে ৮৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলারের। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি কমেছে ১০ দশমিক ০২ শতাংশ। রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে মৌসুমী ফল ও সবজির কদরই বেশি। এখন অনেক দেশে বেগুন, আলু, লাউ, কুমড়া, পটল, ঢেঁড়স, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, কাঁচামরিচ, বরবটি, শিম, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজি রফতানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এসব সবজির চাহিদা বেশি। সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি সবজি রফতানি হয়। এছাড়া বাহরাইন, তুরস্ক, কাতার, ওমান, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্স, সুইডেন, জার্মানি, জাপান, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরেও বাংলাদেশ থেকে সবজি রফতানি হচ্ছে। এ বিষয়ে কথা হয় মালিবাগের সবজি রফতানিকারক হুমায়ুন রশিদের সঙ্গে। তিনি যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ায় সবজি রফতানি করেন। হূমায়ুন রশিদ বলেন, হরতাল-অবরোধের আগে প্রতিদিন এক থেকে দেড় টন সবজি বিদেশে রফতানি হতো। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে সবজির দাম বেড়ে গেছে। এতে রফতানির পরিমাণও কমাতে হচ্ছে। এখন প্রতিদিন এক টন পুরোপুরি রফতানি করতে পারি না। সবজির দাম বেশি হওয়া প্রসঙ্গে কারওয়ান বাজারের শামছু নামের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, হরতাল-অবরোধে আগের চেয়ে ট্রাক ভাড়া (পরিবহন ব্যয়) অনেক বেড়েছে। এ কারণে সবজির দাম বেশি নিতে হচ্ছে। সবজি রফতানির পরিমাণ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস এ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিমানে পরিবহন সমস্যার কারণে রফতানি কমে গেছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থায় যুক্ত হওয়া তিনটি বোয়িংয়ে (বিমান) ৩০ টন করে সবজি নিলে ৯০ টন সবজি বিদেশে রফতানি সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ বিমানে ভাড়া বেশি হওয়ায় রফতানিকারকরা বাংলাদেশ বিমানে মালামাল পাঠাতে চান না। বিদেশী বিমানগুলো প্রতিকেজি সবজির ভাড়া ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা নিলেও বাংলাদেশ বিমান নিচ্ছে ১৮২ টাকা। এছাড়া কুল চেইন ব্যবস্থার (রফতানির প্রতিটি ধাপেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা) অভাবে সবজি রফতানিতে সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিদেশী ক্রেতাদের শর্ত অনুযাযী পণ্য পাঠাতে হলে প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্যের বাজারে আসা পর্যন্ত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতে হয়। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু সমস্যা রয়েছে; তবে বেশিদিন থাকবে না।
×