ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদ্যুত ভবনে গুলির ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ মার্চ ২০১৫

বিদ্যুত ভবনে গুলির ঘটনায় বিব্রত আওয়ামী লীগ

আজাদ সুলায়মান ॥ বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নাশকতা সামাল দিতে পুলিশের অবস্থা যখন গলদঘর্ম, তখন রাজধানীর সবচেয়ে নিরাপদ বিদ্যুত ভবনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গোলাগুলির ঘটনায় খোদ ক্ষমতাসীন দল বিব্রতকর অবস্থায়। এমন কঠিন সময়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের এ ধরনের অপকর্মে সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনেও চলছে সমালোচনা। এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তিরোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ট কর্মী বলেছেন- এমনিতেই পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের চলমান নাশকতারোধে দিবারাত্রি ডিউটি করে ক্লান্ত। তার ওপর যদি সরকারী দলের উচ্ছৃঙ্খলতা ও উৎপাত সামাল দিতে পুলিশকে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেটার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে সাধারণ নাগরিকের ওপর। এতে তৃতীয় পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ পায়। বুধবার বিদ্যুত ভবনে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ ঘটনায় তারাও বিব্রত। এ সময় এক উপ-পরিচালক বলেন, এ জাতীয় ঘটনা পুলিশ ও বিদ্যুত ভবন কর্তৃপক্ষ কিছুটা কৌশলী হলেই এড়ানো সম্ভব হতো। তেমন পদক্ষেপ দূরে থাকÑ ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থা নিতেও চলছে পুলিশের গড়িমসি। মঙ্গলবার এ ঘটনা সংঘটিত হবার ছত্রিশ ঘণ্টার পরও থানায় কোন মামলা হয়নি। প্রকাশ্য দিবালোকে গুলিবিদ্ধ, অস্ত্রের মহড়া, সরকারী সম্পদ বিনষ্টের মতো স্পর্শকাতর ঘটনায় কোন মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করার প্রয়োজনীয়তা মনে করছে না পুলিশ বা বিদ্যুত ভবন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পৌনে এক কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ সেটা বলতেও সাহস পায়নি। শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার জানান, বিদ্যুত ভবনের গোলাগুলির ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোন মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরি করা হয়নি। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলামের ভাষ্য মতে, দুপক্ষের দুুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে ৪ জন গুলিবিদ্ধ হলেও তাদের কারও সঙ্গে কথা বলেনি পুলিশ। কারণ আহত যারা হয়েছে, তাদের তো মামলা করতে থানায় আসা উচিত। তিনি প্রশ্ন রাখেন, আহতরা মামলা করতে কেন থানায় আসছে না? যারা গুলি করে, তারা তো আর মামলা করবে না। কিন্তু যারা গুলি খায়, তারা কেন চুপ? এখন তারা যদি গুলি খেয়েও ঘটনা চেপে যেতে চায়, বিচার না চায় তাহলে পুলিশের আর দায় কি? তারপরও পুলিশ তদন্ত করছে। আলামত সংগ্রহ করছে। তদন্তে যারা দোষী হবে তাদের বিরদ্ধে মামলা নেয়া হবে। বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, সচিবালয়ের পশ্চিম পাশের বিদ্যুত ভবনের চারপাশে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। এমনকি মঙ্গলবার যখন দু’পক্ষের অস্ত্রধারী টেন্ডারবাজরা ওই ভবনে প্রবেশ করে, তখনও গেটের সামনে টহলরত ছিল পুলিশ। তাদের সামনে দিয়ে কোমরে অস্ত্র রেখে দরপত্র জমা দিতে যায় ওরা। পুলিশ এ সময় তাদের কারোর শরীর চেক করেনি। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মী পরিচয় পাওয়ার পর উল্টো সতর্ক সংযত হয়ে পুলিশ আরও দূরে চলে গেছে দেখেও না দেখার ভান করতে। প্রত্যক্ষদর্শী এক নিরাপত্তাকর্মী বুধবার জনকণ্ঠকে বলেন, মাস খানেক আগেও ওই একই অফিসে একই দলের ক্যাডাররা হাঙ্গামা করেছে, বোমা ফাটিয়েছে, সেদিনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যে কারণে মঙ্গলবার তারা আরও বেপরোয়া হয়ে বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসের গাড়িতেও গুলি করার সাহস দেখিয়েছে। (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৬২-৩৩)। একই সময়ে সচিবালয়ের পরিবহন পুলের সামনে দুটি এবং সচিবালয়ের ৫ নম্বর গেটের ভেতরে একটি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বোমা বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকায় পথচারীসহ লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই অফিসের একজন পিয়ন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রায় একই সময়ে সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে ককটেলের শব্দে যখন গোটা এলাকা প্রকম্পিত ও আতঙ্কিত, তখন টেন্ডার দখলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের গোলাগুলিতে এক ভীতিকর অবস্থা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দায় দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপানোর সুযোগ পেত। জানা যায়, ছাত্রলীগের খালেদ মাহমুদ গ্রুপ ও যুবলীগের আরিফ-টিটু ক্যাডারদের মধ্যে গোলাগুলি, ভাংচুর বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিল বিদ্যুত ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরা। তারপরও বিদ্যুত ভবন কর্তৃপক্ষ বা পুলিশ কেউ কোন পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়নি। কেন পুলিশ নীরব ছিল জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সব দোষ পুলিশের ওপর কেন চাপানো হচ্ছে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিরুদ্ধে কি ইচ্ছে করলেই পুলিশ অনায়াসে কোন এ্যাকশন নিতে পারে। ঘটনার পর তো সেখানে পুলিশ ছুটে গেছে। তখন তো কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রকৃত পক্ষে বিদ্যুত ভবনের কর্মকর্তারাও তো থানাকে আগে থেকে অবহিত করতে পারত। বাড়তি নিরাপত্তা চাইতে পারত। সেটা তো করেনি। বিদ্যুত ভবন যদি সত্যিই চাইত এ ঘটনা এড়াতে সেটাও সম্ভব ছিল। তারা সিডিউল জমা দেয়ার একাধিক অফিস যেমন পুলিশ ও অন্যান্য অফিসে করতে পারত। তাহলে প্রকৃত ঠিকাদাররা এখানে না এসে পুলিশ বা ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অফিসে গিয়ে জমা দিতে পারত। এসব পাতি নেতারা কয় জায়গায় গুলি করতে পারত? এছাড়া ই-টেন্ডারেরও মাধ্যমে এ জাতীয় টেন্ডারবাজি প্রতিহত করা যেতো। বিদ্যুত ভবন কর্তৃপক্ষ তো তেমন পদক্ষেপ কিছুই নেয়নি। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিদ্যুত ভবনে দুটো টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে প্রচ- গোলাগুলি ঘটে। এদিন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) অধীনে তেজগাঁও সাব স্টেশন ও মাদারটেক সাব স্টেশনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণের ৪২ লাখ ও ৩১ লাখ টাকার দুটি টেন্ডার ড্রপের শেষ দিন ছিল। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তানভীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানভীর গ্রুপ ও তালুকদার কনস্ট্রাকশনের দুটি এবং মাহবুব আলম কনস্ট্রাকশনের একটি টেন্ডার ড্রপের পর মদীনা গ্রুপের পক্ষে টেন্ডার ড্রপের সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ পরিচয়দানকারী কতিপয় সন্ত্রাসী টেন্ডার ড্রপে বাধা দেয়।
×