ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বান্দরবানে দফায় দফায় পাহাড়ী-বাঙালী সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১২ মার্চ ২০১৫

বান্দরবানে দফায় দফায় পাহাড়ী-বাঙালী সংঘর্ষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি, ১১ মার্চ ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার বান্দরবান সফরকে কেন্দ্র করে জাগো পার্বত্যবাসীর ডাকা ৭২ ঘণ্টার হরতালের প্রথমদিনে জেলা শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। বান্দরবান সফরকালে লারমার গাড়িবহরে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জেএসএস। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে জাগো পার্বত্যবাসীর নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ট্রাফিক মোড়ে মং টিং মার্মা নামে এক আদিবাসী ছবি তুলতে গেলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে বান্দরবান প্রেসক্লাবে অবস্থান নিলে সেখানে গিয়েও মং টিং মার্মাকে হামলা চালায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লারমার গাড়িবহর রাঙ্গামাটি থেকে বান্দরবান শহরের বালাঘাটা দিয়ে প্রবেশ করার সময় স্বর্ণমন্দির এলাকার একটি ব্রিজের পাটাতন খুলে ফেলে হরতালকারীরা। পরে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় ব্রিজটি ঠিক করা হলে সন্তু লারমা বান্দরবানে প্রবেশ করে শহরের সার্কিট হাউজে অবস্থান নেয়। এ সময় বালাঘাটায় জেএসএসকর্মী ও হরতালকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা, বিজিবি ও অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। জানা গেছে, বালাঘাটায় সংঘর্ষে মংবাথোয়াই কার্বারী (পাড়া প্রধান), উশৈথোয়াই মার্মা, পরিমল চাকমা, রকি তঞ্চঙ্গ্যা, রিপন তঞ্চঙ্গ্যা ও রাম বাবু মার্মাসহ ২০ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত মং মং চাকমা, পাইহ্লা অং, পুছো থোয়াই মারমাসহ ৫ আদিবাসীকে স্থানীয় সাংবাদিক, পুলিশ ও সেনাসদস্যরা উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে। পরে অবস্থার অবনতি হলে দু’জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে হস্তান্তর করা হয়। বালাঘাটা এলাকার ব্যবসায়ী আলিম বলেন, প্রথমে জেএসএস কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষের সূচনা হয়, পরে বাঙালীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। শহরের জর্জকোর্ট এলাকায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা করে হরতালকারীরা। এ ঘটনায় হুমায়ন নামে এক পিকেটারকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে হরতালে জেলা শহরের সব রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয়রা। এদিন জেলা শহরের সব ব্যবসায়িক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল বলে জানা গেছে। সংঘর্ষের ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী মুজিবর রহমান ও পৌর মেয়র জাবেদ রেজাকে দায়ী করেছেন। তবে পার্বত্য জাগোবাসীর নেতারা দাবি করেন, জেএসএস কর্মীদের উস্কানিতে এ ঘটনা ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিসহ- তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা জানান, হামলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান সদর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক পুছোথোয়াই মারমা, পাহাড়ী ছাত্রপরিষদের সদস্য পরিমল চাকমা, রকি তঞ্চঙ্গ্যা, স্বপন তঞ্চঙ্গ্যা, জনসংহতি সমিতির সদস্য মংবাথোয়াই মারমা ও রামবাবু মারমা গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান। এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বান্দরবান শাখার সাধারণ সম্পাদক ক্যাবা মং মার্মা বলেন, বিশেষ রাজনৈতিক দলের দুই নেতার উস্কানিতে এ ঘটনা ঘটে, আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পাহাড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সন্ত্রাস, ব্যাপক চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যার প্রতিবাদে জাগো পার্বত্যবাসী নামের বাঙালীদের এই নতুন সংগঠনটি গত ১০ মার্চ বান্দরবান প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে হরতালের ডাক দেয়। অন্যদিকে বান্দরবানের ফারুকপাড়ায় পাহাড়ী ছাত্রপরিষদের ১৩ মার্চের সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য বুধবার বান্দরবান সফরে আসেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। একে কেন্দ্র করে শান্ত বান্দরবান পার্বত্য জেলায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সকাল থেকে শক্ত অবস্থান নেয় পুলিশ। নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি থেকে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার পূর্ব-নির্ধারিত বান্দরবান সফর কালে তার গাড়িবহরে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। বুধবার বান্দরবান যাওয়ার পথে সদর উপজেলার বালাঘাটা নামক স্থানে সন্তু লারমার গাড়িবহরের উপর এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জেএসএস দাবি করেছে। হামলায় তাদের ৪ নেতা আহত হয়েছে বলে জেএসএস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে।
×