ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনন্য জয়-

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১২ মার্চ ২০১৫

অনন্য জয়-

এবারের বিশ্বকাপে এক অনন্য বিজয় কেতন উড়াল বাংলাদেশের মাশরাফি বাহিনী। এক ম্যাচ হাতে রেখেই ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করল বাংলাদেশ। সোমবার এ্যাডিলেডে এই জয়ের মধ্য দিয়ে এক অনন্য ইতিহাস গড়ল টাইগাররা। যেন বাঘের হুঙ্কারে কাঁপল বিশ্ব। এই জয়ে খুলে গেল স্বপ্নের দরজা। ক্রিকেটে বনেদী পরিবারের সদস্য ইংল্যান্ড এই হারের মধ্য দিয়ে শুধু একটি ম্যাচই হারেনি, চলতি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকেও বিদায় নিয়েছে। প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে দেশের পক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েছেন মাহমুদুল্লাহ। মাহমুদুল্লাহ স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর পারফরম্যান্স দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর জ্বলে ওঠার আগামবার্তা। ইংল্যান্ডের ম্যাচে সেটির প্রমাণও দিলেন। দলের ধারাবাহিক সাফল্যের নায়ক মুশফিক তাঁর অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ৮৯ রান করে লড়াইয়ের পুঁজি গড়তে সহায়তা করেছেন। অধিনায়ক মাশরাফি ৪৮ রানে ২ উইকেট নিয়ে জেতায় ভূমিকা রেখেছেন। তাসকিন ২ উইকেট নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। রুবেল ৪ উইকেট নিয়ে ঐতিহাসিক এই জয়টা সুনিশ্চিত করেছেন। বলা যায়, এই ত্রিমুখী আক্রমণেই হার মানল ইংল্যান্ড। আরও সহজ করে বললেÑ জয়ের দুই নায়ক মাহমুদুল্লাহ ও রুবেল হোসেন। স্বাধীনতার মাসে এই জয় দেশবাসীকে ভাসিয়েছে অনাবিল আনন্দের জোয়ারে। আনন্দিত সারাবিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীও। মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারাদেশে আনন্দ মিছিল করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পরিণত হয় জনসমুদ্রে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা টিএসসির সামনে মিলিত হয়। জাতীয় পতাকা সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, শাবাশ বাংলাদেশ সংবলিত ব্যান্ড মাথায় বেঁধে সেøাগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে চলে গান বাজিয়ে নাচ আর রংয়ের খেলা। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে ১৯৯৭ সালে, আইসিসি ট্রফি জিতে। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে আয়োজিত ৭ম বিশ্বকাপে শক্ত প্রতিপক্ষ পাকিস্তানকে ৬২ রানে এবং স্কটল্যান্ডকে ২২ রানে হারিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন প্রত্যাশার জন্ম দেয় বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত নবম বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে সুপার সিক্সে খেলেছে বাংলাদেশ। এটাই এতদিন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় সাফল্য। বিশ্বকাপের চলতি আসর ছাড়া আরও তিনটি আসরে অংশ নেয় বাংলাদেশ। ২০১১ সালে বিশ্বকাপের সহযোগী আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। সেবার ঘরের মাঠে হতাশা ছাড়া কিছুই পায়নি দেশ। তবে এবারের গল্প একেবারে ভিন্ন। প্রথমে আফগানিস্তান ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয়, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হার, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ আটে অবস্থান করে নেয় টাইগাররা। বাংলাদেশে ক্রিকেটে এই জয় একটা মাইলফলক অর্জন। তবে এই জয়ের আনন্দে আত্মহারা হওয়া নয়, আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগাতে হবে, পরবর্তী ম্যাচগুলোয় যাতে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখা যায় সেই চেষ্টা থাকতে হবে। দেশকে জেতাতে হবে। আরও শাণিত করতে হবে নিজেদের দক্ষতা। প্রমাণ করতে হবে আমরা পারি, যে কোন অবস্থানে যে কোন পরিবেশে। ক্রিকেটপ্রেমীদের বিশ্বাস মাশরাফি যেভাবে হাল ধরেছেন, তার নেতৃত্ব এই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে শক্ত হাতে। ধৈর্য ও সাহসিকতা দিয়ে আগামী দিনের স্বপ্ন পূরণের অগ্রযাত্রায় মাশরাফি বাহিনী আরও দৃঢ় ও সফলকাম হবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×