ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেট বিজয়ে মাতোয়ারা গোটা দেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ১১ মার্চ ২০১৫

ক্রিকেট বিজয়ে মাতোয়ারা গোটা দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজার খেলা হিসেবে খ্যাত এই খেলায় বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে পাচ্ছে অবিস্মরণীয় সাফল্য। এর অংশ হিসেবে চলমান বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লিখিয়ে ইতিহাস গড়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। অনেকেই বলছেন, ১৯৭১ সালের পর এটাই ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাদেশের সেরা প্রাপ্তি। সোমবার ক্রিকেটের জনক ইংল্যান্ডকে মাটিতে নামানোর পর দেশজুড়ে শুরু হয় আনন্দ, উৎসব। বিজয়ের দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত হয়েছে লাল-সবুজের এই দেশ। বিজয়ের আনন্দের স্র্রোত অব্যাহত আছে এখনও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার সারাদেশে বিজয় মিছিল করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ উৎসব আনন্দে মেতে ওঠেন। শেখ হাসিনার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয় উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর মতিঝিলে বিশাল বিজয় মিছিল করে। অন্যান্য দলও বাংলাদেশের বিজয় নিয়ে বিশেষ কর্মসূচী পালন করে। এ উপলক্ষে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত হরতাল শিথিল করে। টাইগারদের ইতিহাস গড়া জয়ে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগও। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। এতে অংশ নেন সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান ঘুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ গানটির সঙ্গে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন তাঁরা। পাশাপাশি ‘চার ছক্কা হৈ হৈ, বল গড়াইয়া গেল কই’ গানটি গাইতে গাইতে নেচে-গেয়ে আনন্দ মিছিল করে মিছিলে অংশ নেয়া সবাই। একে অপরকে রং মাখামাখিও বাদ ছিল না। এভাবে আনন্দমুখর হয়ে ওঠে পুরো টিএসসি চত্বর। মিছিলে যোগ দেয় বিভিন্ন হল থেকে আসা ছাত্রলীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এ ছাড়া বিভিন্ন অনুষদে ক্লাসরত ও লাইব্রেরিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই মিছিলে অংশ নেন। এ সময় সবার মুখে উচ্চারিত হয় ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, জিতেছে, জিতবেই, ‘জিতল কে? জিতল কে? বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।’ মিছিলে অংশ নেয়া প্রায় সবার মাথায় ছিল জাতীয় পতাকা, শাবাশ বাংলাদেশ সংবলিত ব্যান্ড। মিছিল শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছে তাতে আমাদের প্রত্যাশা তারা অনেক দূর যাবে। একদিন বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হবে। টাইগারদের সুসময় ও দুঃসময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাবে।’ ক্রিকেটারদের অবিস্মরণীয় সাফল্য দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কিছু সময়ের জন্য হলেও থামিয়ে দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা অবরোধের পাশাপাশি হরতালের মতো সহিংসতামূলক কর্মসূচী টানা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুর্দান্ত সাফল্যের কারণেই প্রথমবারের মতো ধ্বংসাত্মক হরতাল কর্মসূচী শিথিল করে বিএনপি। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নাশকতামূলক কর্মকা-ের কারণে এ পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ১০০ জন নিরীহ মানুষ জীবন দিয়েছে। কম সময়ের জন্য হলেও ক্রিকেটারদের গৌরবগাথা অবশেষে সব বিভেদ ভোলাতে সক্ষম হয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, শুধু একটি দিনের জন্য নয়, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সব সময়ের জন্য দেশের মানুষের কল্যাণার্থে কাজ করবে। টিএসসিতে বিজয় মিছিলে যোগ দেয়া সাবেক শিক্ষার্থী মোস্তফা হালিম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক হানাহানি চাই না। শান্তি চাই। দেখুন একটি জয়ে দেশের মানুষ কতটা উল্লসিত হতে পারে। আবেগপ্রবণ এই জাতির চাওয়া-পাওয়ার হিসাবটা বেশি নয়। অল্পতেই তুষ্ট হতে পারে তারা। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আজ সবাই শঙ্কিত। আমরা শুধু একটি দিনের জন্য শান্তি চাই না। সব সময় এমন উৎসবমুখর পরিবেশ চায়। আশা করি প্রধান দু’দল বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবে।’ উৎসব হয়েছে গোটা দেশেই। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, পাড়া-মহল্লায় বিজয় মিছিল করা হয়। তবে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উৎসব যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়! আগে দিনের মতো মঙ্গলবারও নেচে-গেয়ে আনন্দ উৎসবে ভাসেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষও। বাদ্যশিল্পীরা ঢোল, বাঁশি বাজিয়ে সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে তোলেন পুরো এলাকা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগও। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় ‘চার ছক্কা হৈ হৈ, বল গড়াইয়া গেল কই’ এই গানের তালে তালে ঢাকঢোল পিটিয়ে রং ছড়িয়ে, নেচে-গেয়ে আনন্দ-উল্লাস করে টাইগার সমর্থকরা। বিভিন্ন সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে তোলে পুরো ক্যাম্পাস। জবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের সামনে থেকে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। এতে ছাত্রলীগের সকল স্তরের প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে বিজয় মিছিল বের করে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী জয়ের উল্লাসে উল্লসিত হয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়কে উদযাপন করে। এ সময় টাইগার ভক্ত-সমর্থকদের হাতে ছিল বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা, মুখে ছিল বিজয়ের হাসি। বাঙালী জাতি যে একটি চেতনায় এক ও অভিন্ন, আবেগপ্রবণ আর এককাট্টা সেটা আরেকবার বোঝা গেছে বিজয় উৎসবের মধ্য দিয়ে। এদিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই বাংলাদেশের সাফল্যে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসব করেন। ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী মিথিলা মরিয়ম বলেন, ‘কি যে ভাল লাগছে বলে বোঝাতে পারব না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তো দেখতে পারিনি। ক্রিকেটারদের সাফল্যে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ যেন আরেকটি যুদ্ধজয় করেছে। এ তো যুদ্ধ জয়ই! কারণ ক্রিকেটের জনকদের হারিয়ে ইতিহাসের সেরা সাফল্য। শাবাশ বাংলাদেশ।’
×