ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে একাধিক নাট্যোৎসব

সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১০ মার্চ ২০১৫

সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের চলমান সহিংসতা সত্ত্বেও সক্রিয় রয়েছেন দেশের নাট্যাঙ্গণের সংশ্লিষ্টরা। দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সহিংসতামূলক কর্মসূচীকে উপেক্ষা করে তাদের নাট্যচর্চা অব্যাহত রেখেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীতে একের পর এক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবের আয়োজন করছেন বিভিন্ন নাট্য সংগঠন। এসব আয়োজনের নামও দেয়া হচ্ছে ‘সহিংসতার বিরুদ্ধে নাটক’। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি শেষ হয়েছে পথনাট্য উৎসব। বর্তমানে শিল্পকলায় চলছে প্রাঙ্গণে মোর নাট্যদলের উদ্যোগে দুই বাংলার নাট্যমেলা। এ উৎসবে প্রতিদিন শিল্পকলায় দুই দেশের জনপ্রিয় সব নাটক দেখতে আসছেন দর্শকরা। এ কারণে প্রতিদিনই শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থাকছে উৎসব মুখর। এছাড়া আগামী ১২ মার্চ থেকে ঢাকায় আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে। ঢাকায় আবার আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব : ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কেন্দ্র ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বিতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। আগামী ১২ মার্চ শুরু হয়ে চলবে ২১ মার্চ পর্যন্ত। জানা গেছে, এবারের নাট্যোৎসবে দেশের প্রায় ২৩টি দলের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করতে আসবে চারটি বিদেশী দল। প্রদর্শনী হবে জাতীয় নাট্যশালার মূলমঞ্চ, পরীক্ষণ থিয়েটার হল এবং স্টুডিও থিয়েটার হলে। এ প্রসঙ্গে আইটিআই, বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ জানান, ‘সহিংসার বিরুদ্ধে নাটক’ এবং ‘নাটক : শিল্পের প্রত্যুত্থান’ শিরোনামে নাট্যবিষয়ে দুটি সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। আজ ১০ মার্চ জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে সকাল ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তাারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি। শিল্পকলায় দুই বাংলার নাট্যমেলা : বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্সের (আইসিসিআর) সহযোগিতায় ঢাকা-কলকাতার ১২টি নাটক নিয়ে ৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘দুই বাংলার নাট্যমেলা-২০১৫’। প্রয়াত নাট্যনির্দেশক ও অভিনেতা খালেদ খানকে উৎসর্গ করা হয়ছে এ নাট্যমেলা। এ নাট্যমেলার আয়োজনে আছে দেশের শীর্ষস্থানীয় নাট্য সংগঠন প্রাঙ্গণেমোর। গত ৬ মার্চ শুক্রবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নাট্যমেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামন নূর এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন অভিনেতা ও নাট্য নির্দেশক আতাউর রহমান, সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বাংলাদেশের পরিচালক সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতি লিয়াকত আলী লাকী। উৎসবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে প্রাঙ্গণেমোর ‘শ্যামাপ্রেম’ এবং পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটক নাট্যতীর্থে ‘কঙ্কাল’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে নাটক ভারতের কল্যাণী নাট্যচর্চার ‘তৃতীয় আরেকজন’ এবং পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মহাকাল নাট্যসম্প্রদায়ের ‘নিশীমন বির্সজন’ নাটকটি মঞ্চস্থ হবে । পথনাটক পরিষদের উৎসব : বর্তমান সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চা করছে সংস্কৃতি কর্মীরা। এর মাধ্যমে চলমান সহিংসতার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। এমনটাই মনে করেন নাট্যকার অভিনেতা ও নির্দেশক মান্নান হীরা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পাদদেশে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদের উদ্যোগে ‘পথনাটক উৎসব ২০১৫’ হয়ে গেল। এবারের উৎসবের সেøাগান ছিল ‘আগুনে পুড়ছে দেশ বাঁচাও জীবন বাঁচাও প্রতিবেশ’। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রায় ৫০টি দলের পরিবেশনায় পথনাটক মঞ্চায়ন হয়। উৎসব উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। এবারের উৎসবের আয়োজন প্রসঙ্গে মান্নান হিরা বলে রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল নয়, তবুও আমরা এ উৎসব অব্যাহত রেখেছি। আমরা শিল্প ও সংস্কৃতি দিয়ে এ সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে চাই। এ কারণেই আমরা এবারের উৎসবের সেøাগান ছিল ‘আগুনে পুড়ছে দেশ বাঁচাও জীবন বাঁচাও প্রতিবেশ’। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়েই পথ নাটক হয়। মৌলবাদের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাধীনতার চেতনাকে বিস্তৃত করাই পথ নাটকের কাজ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক এটাও আমাদের একটা দাবি ছিল। আমাদের পথ নাটকও এক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করেছে। বর্তমানে আমরা মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নাটক নির্মাণে জোর দিয়েছি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক যে সহিংসতা চলছে তারও প্রতিবাদে নাটক তৈরি করছি। আমি মনে করি যে কোন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পথ নাটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
×