ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সামনে পহেলা বৈশাখ-মহাব্যস্ত দেশী পোশাক প্রস্তুতকারকরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ মার্চ ২০১৫

সামনে পহেলা বৈশাখ-মহাব্যস্ত দেশী পোশাক প্রস্তুতকারকরা

এম শাহজাহান ॥ পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে অর্থনীতি চাঙ্গা করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দেশের অর্থনীতির প্রাণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা আশাবাদী হয়ে উঠছেন। তাঁদের কারখানায় তৈরি হচ্ছে বৈশাখের শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, থ্রি-পিস, ফতুয়া, টি-শার্ট, পাঞ্জাবিসহ নাম না-জানা বাহারি সব পোশাক। এসবই দেশী পোশাক। বৈশাখেই যেন আমরা বাঙালী। তাই এই উৎসব ঘিরে দেশী পোশাকের যত কদর। ব্লক, বাটিক, বুটিক ও কারুশিল্পের সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও এখন দম ফেলার সময় নেই। দেড় মাস বাকি থাকতেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এদিকে, উৎসব ঘিরে আনন্দের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের চিন্তাও কম নয়। তাঁদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য হবে তো? নাকি হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতায় মূলধন খুইয়ে নিঃস্ব হবেন তাঁরা। এ কারণে বৈশাখ সামনে রেখে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করার দাবি রয়েছে তাঁদের। অবিলম্বেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সহিংস রাজনীতি বন্ধে রাজপথে মানববন্ধন, পতাকা মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছেন। উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশ ও মানুষের জন্য যদি রাজনীতি হয় তাহলে বিএনপি-জামায়াতকে এসব ধ্বংসাত্মক কর্মসূচী প্রত্যাহার করতে হবে। শুধু তাই নয়, পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে সব ধরনের সহিংস কর্মসূচী থেকে বিএনপি জোটের সরে আসা উচিত। কারণ, পহেলা বৈশাখ এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এছাড়া জঙ্গীবাদ নির্মূল ও হরতাল-অবরোধ বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাঁরা বলছেন, অর্থনীতিতে বৈশাখী উৎসবের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বুটিক হাউস ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পলী রশীদ জনকণ্ঠকে বলেন, বৈশাখ উৎসব সামনে রেখে ফ্যাশন হাউস, ব্লক, বাটিক, বুটিক ও কারুশিল্পের উদ্যোক্তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁদের কারখানায় তৈরি হচ্ছে বৈশাখী পোশাক ও বাহারি সব পণ্য। দেশী পণ্যের কদর এ সময়টাতে সবচেয়ে বেশি। এ কারণে এ বছর ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি অনেক ভাল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবসা হবে কিনা সেটা নিয়েই উদ্যোক্তারা চিন্তায় আছেন। এর আগে ২০১৩ সালে বুটিক হাউসের ব্যবসায়ীরা থালা হাতে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। ওই সময় দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল। এবার আবার বিএনপি-জামায়াত জোট লাগাতার হরতাল-অবরোধ পালন করছে। এই বাস্তবতায় বৈশাখী উৎসবের বাণিজ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, আশা করছি, পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া হরতাল-অবরোধ বন্ধে সরকারের পক্ষ থেকেও যাতে পদক্ষেপ থাকে সেটাই ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা। জানা গেছে, পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছেন। ব্যাংক ঋণ নিয়ে কারখানায় উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ কারণে বৈশাখী বাণিজ্য ভাল হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে সারাদেশে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার ফ্যাশন হাউসে উঠবে নতুন পোশাক। এছাড়া রাজধানীরও প্রায় ৫ শতাধিক ফ্যাশন হাউস নতুন পোশাকের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। দেশী কাপড় দিয়ে এদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে রুচিশীল ও মানানসই পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। মার্কেট বা শপিংমলগুলোতে বছরের অন্য সময়ে বিদেশী পোশাকের কদর বেশি হলেও এ সময়টাতে তার উল্টোবস্থা বিরাজ করছে। এখন দেশী পোশাকের জুড়ি নেই। ঢাকার কেরানীগঞ্জ, সদরঘাট, জিঞ্জিরা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা হয়েছে বৈশাখী পোশাক। এ প্রসঙ্গে আজিজ সুপার মার্কেটের সাবেক সভাপতি আলমগীর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছরই বৈশাখী জামা-কাপড়ের চাহিদা বেড়ে চলেছে। ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জায়গার উদ্যোক্তারা এসব পোশাক রাজধানীতে সরবরাহ করে থাকেন। তিনি বলেন, বুটিক ও ফ্যাশন হাউসগুলো পাইকারি দরে পোশাক কিনে বিক্রি করে থাকেন। এবারের পহেলা বৈশাখের উৎসবে শতাধিক ভিন্ন ডিজাইন ও ভিন্ন নামের পোশাক বাজারে আসবে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি ভাল হলেও হরতাল-অবরোধের কারণে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। তাই সত্বরই মার্কেটের সামনে হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা বন্ধে মানববন্ধন করা হবে। মিরপুর বেনারসি পল্লীর তাওছীফ বেনারসি ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী মোঃ তাওছীফ জনকণ্ঠকে বলেন, পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে তাদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বৈশাখী শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি। ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ ডিজাইনের নতুন শাড়ি আনার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া থ্রি-পিস, সালোয়ার- কামিজ ও মেয়েদের ফতুয়াসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধ হলে গতবারের চেয়ে এ বছর আরও ভাল ব্যবসা হবে বলে তিনি আশাবাদী। জানা গেছে, উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে রোজার ঈদ ও কোরবানির ঈদের পরই পহেলা বৈশাখের অবস্থান। পোশাকআশাকের পাশাপাশি এই সময় ইলিশ উৎসব হয়ে থাকে। প্রতিটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চলে নববর্ষের হালখাতা। এজন্য প্রয়োজন হয় বিপুল পরিমাণ দই ও মিষ্টির। এছাড়া এই উৎসব সামনে রেখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েক হাজার শিল্পে গতি ফিরে আসে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৬ লাখ দোকান রয়েছে। পহেলা বৈশাখের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রায় সবাই পয়েলা বৈশাখের কোন না কোন মার্কেট ধরতে চায়। ইতোমধ্যে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যেও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি দোকানপাট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন যেমন খোলা আছে বৈশাখ সামনে রেখেও ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক কর্মকা- চালিয়ে যাবেন।
×