ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেধাবীদের টেলিপ্যাথি ফেসবুক

মেধার খেলা- উন্মুক্ত হচ্ছে ভাবনার জগত

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১০ মার্চ ২০১৫

মেধার খেলা- উন্মুক্ত হচ্ছে ভাবনার জগত

সমুদ্র হক ॥ একটা সময় ঘড়ি ও কলম (কখনও নোট বুক ও ছাতা) ছিল পোশাকের অংশ। ইংরেজীতে পার্ট অব ইউনিফর্ম। অর্থাৎ শরীরে জামা কাপড় চশমা জুতো বা স্যান্ডেল চড়ানোর পর ঘড়ি কলম সঙ্গে থাকতেই হবে। আকাশে কৃত্রিম গ্রহের চরম ও প্রবল দাপটে লাখ-কোটি নক্ষত্রের সমষ্টি ছায়াপথ (মিল্কিওয়ে) যখন খেই হারিয়ে ফেলেছে তখন গোটাবিশ্বে পার্ট অব ইউনিফর্মের পরিবর্তন হয়েছে। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পাবলিক বাসে দরোজায় লেখা ‘জনাব কিছু ফেলে গেলেন কি’র মতো মনে করতে হয় সেলফোনটা (মোবাইল ফোন) নেয়া হলো কী। সেলফোন না থাকলে কি যে অবস্থা হয়! মনে হবে হাতের মুঠোয় বিশ্বের সকল যোগাযোগ বন্ধ। সেলফোন নানা প্রজাতির হয়েছে। সাধারণ সেলফোনের পাশাপাশি স্মার্টফোনের যে কত কারুকাজ তার ইয়ত্তা নেই। হালের স্মার্টফোনে কী নেই! দেশে-বিদেশে বন্ধু-স্বজনের সঙ্গে লাইভ কথা বলতে স্কাইপি, ভাইবারসহ নানা সার্চ শৈলী আছে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শীর্ষস্থানে অবস্থান নেয়া ফেসবুকও ঢুকে পড়েছে পকেটে ভরে রাখার স্মার্টফোনে। এর পাশাপাশি বইয়ের মাপে কম পুরুত্বের ট্যাব নেটবুক ছেলেদের হাতে ও মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগে থাকছে। সহজে বহন করা যায়। যে যেখানে খুশি সেখানে বসে কম্পিউটারের সকল কাজই করতে পারে। ফেসবুক টুইটারে স্ট্যাটাস দেয়া, ছবি পেস্ট করা, চ্যাটিং করা তো ডালভাত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক বন্ধু নিজেদের মধ্যে লেখাপড়ার পাঠ ও সাধারণ কৌতুহলে ছোট্ট লেখালেখি শুরু করেছিল ফেসবুক নামে। বছর না ঘুরতেই তা বন্ধুত্বের সীমানা পেরিয়ে টেলিপ্যাথি ও প্রেমের দেবতা কিউপিডের তীরে বিদ্ধ হয়ে বন্ধু থেকে মানুষে-মানুষে সামাজিক যোগাযোগের এক অব্যর্থ মাধ্যমে পরিণত হলো। অতি মেধাবী বন্ধু জুকারবার্গ তা ছড়িয়ে দিলেন বিশ্বময়। জুকারবার্গ হয়ে গেলেন ফেসবুকের জনক। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আগামীতে ফেসবুকের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে নতুন কোন কিছু, নতুন কোন অধ্যায়। যেখানে টিকবে মেধাবীরা। ছিটকে পড়বে উটকো মেধাহীনরা। এ বিষয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক জানান, ফেসবুকে মেধাবীদের টেলিপ্যাথি শুরু হয়ে গেছে। টেলিপ্যাথির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা হলো, মানুষের মস্তিষ্কে ১০ হাজার কোটি নিউরোন সেল আলোর সেল আলোর গতিতে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। একটি নিউরোন এক্সএন আরেকটি নিউরোনের ডেনড্রাইটে তথ্য প্রেরণ করে। তখন তাদের মধ্যের অতিসূক্ষ্ম ফাঁকে (এক সিনা পেস) মৃদু ম্যাগনেটিক ওয়েভের সৃষ্টি হয়। কারও মস্তিষ্কে সৃষ্ট এই তরঙ্গ যে কোনকিছুই ভেদ করে আরেকজনের মস্তিষ্কে পৌঁছতে পারে, যার মস্তিষ্কে যাচ্ছে সেও এই সিগন্যাল শনাক্ত করতে পারে। টেলিপ্যাথিক যোগাযোগ ঘটেছে এমন দু’জনের মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রো এনসিফিলোগ্রাফ পরীক্ষা করে এই ব্রেনওয়েভ পাওয়া গেছে। এই গবেষকের কথাÑ ফেসবুক টুইটারে কোন মেধাবী কোন ক্রিয়েটিভ লেখা পাঠ করার সঙ্গেই ইলেক্ট্রো এনসিফিলোগ্রাফে লাইক মাইন্ডেড কাউকে দ্রুত পার করে দেয়। প্রকৃতি শুরু করে দেয় মেধার খেলা। এভাবেই এগিয়ে যাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মেধাবীদের ভাবনার জগত উন্মুক্ত হচ্ছে নানাভাবে। বিশ্বে ফেসবুকের ইউজার কত, তার সঠিক হিসাব নেই। বলা হয় দুই বিলিয়ন। তবে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ক্যার্লিফোনিয়ায় একজন গবেষক বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের সাইলেন্ট ইউজার অনেক, যারা নির্দিষ্ট সময়ে লগ অন করে। তা ছাড়া ফ্রেন্ডস রিকোয়েস্ট পাঠালে তা মাল্টিপল হয়ে যায়। একটা সময় এই ফেসবুক নিয়ে কতই না কথা হয়েছে। ‘গেল গেল সব রসাতলে’ বলে কি চেঁচামেচি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে নানা ধরনের ছবি ট্যাগ নিয়ে, ইউরোপ আমেরিকায় পার্সোনাল আইডি হ্যাকিং নিয়ে কী জ্বালাতনই না শুরু হলো (যা এখনও কাটেনি)। এর মধ্যেই গেল বছরের শেষদিক থেকে ফেসবুক পাতায় সৃষ্টিশীল মেধাবীদের প্রবেশ ঘটছে। দিনে দিনে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। ফেসবুক শুরুর পর অতি কৌতূহলীদের একটা থাবা কখনও কালো থাবায় পরিণত হয়। কে যে কাকে কী আবেদন নিবেদন করতে থাকে, তার কোন মাথামু-ু নেই। কেউ নিজের বেঢং চেহারা লুকিয়ে সুদর্শনের ছবি পোস্ট করে (প্রকৃত সুদর্শন বেচারা বিপাকে পড়ে)। কেউ আবার নিজেকে মেয়ে পরিচয় দিয়ে রংঢং করতে থাকে। কাউকে যদি বলা হয় ফেসবুক ফ্রেন্ড কত! তা চার ডিজিট পেরিয়ে কখনও পাঁচ ডিজিটেও ঠেকে (ভাবা যায়)। ওই সময়েই বলাবলি হচ্ছিল এই অবস্থা থাকবে না। একটা সময় মেধাবী ও সৃষ্টিশীলদের পদচারণায় ফেসবুক সুন্দর বাগনে পরিণত হবে। এই ধারা শুরু হয়েছে বলা যায়। অনেক সাহিত্যিক লেখক সৃষ্টিশীল ভাবনায় কেউ ছোটগল্প কেউ অনুগল্প লিখে ফেসবুকের মাধ্যমে নানা সাইটে পেস্ট করছে। এ সব সাইট ফেসবুকে ইন করা আছে। সেখানে শুধু লিখলেই তা পোস্ট হবে না। এজন্য একটি বোর্ডের সদস্যরা যাচাই বাছাই করে যেটা উন্মুক্ত করা দরকার তা রিলিজ করবে। এরপর পাঠকদের মতামতের জন্য উন্মুক্ত হবে। পরবর্তী পর্যায়ে লেখক এসব মন্তব্যের উত্তর দেবেন। তাও উন্মুক্ত থাকবে। এমন সৃষ্টিশীলতা প্রজন্মের ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমেই সৃষ্টি হবে নতুন কিছু, যা করবে মেধাবীরাই।
×