ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে টনক নড়েছে রেল বিভাগের

প্রাণঘাতী কৈডাঙ্গা সেতুর গার্ডার উঁচু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৯ মার্চ ২০১৫

প্রাণঘাতী কৈডাঙ্গা সেতুর গার্ডার উঁচু হচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৮ মার্চ ॥ ঢাকা-ঈশ্বরদী রেলপথের প্রাণঘাতী নিচু পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ২৪ নং কৈডাঙ্গা ও ২৩ নং বড়ালব্রিজের অবকাঠামো উঁচু করার কাজ অবশেষে শুরু করেছে রেল বিভাগ। স্থানাভাবে অসচেতন যাত্রীরা ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের সময় ব্রিজ দু’টির নিচু অবকাঠামোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রতিবছর অসংখ্য যাত্রী মৃত্যুর ঘটনা নিয়তির মতো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের পাকশী ডিভিশন সেতু দু’টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেই দায়িত্ব শেষ করে বসেছিল দীর্ঘ বছর। উল্লেখ্য, ব্রডগেজ লাইনের ট্রেনের ছাদ থেকে এই ব্রিজ দুটোর উপরের অবকাঠামোর মাত্র আড়াই ফুট হওয়ায় এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে চলছিল। রেলওয়ের জিআরপি পুলিশ সিরাজগঞ্জের এক পরিসংখ্যানের দাবি মতে, ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ওই দু’টি ব্রিজের গার্ডারের আঘাতে প্রায় ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকারী যাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরও অন্তত ২৩০ যাত্রী। ব্রিজের অবকাঠামো উঁচু করার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে ওই এলাকার শুভ চেতনার মানুষ কয়েক দফা মানববন্ধন করে রেল বিভাগকে স্মারকলিপিও দিয়েছে। উর্ধতন রেল কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার পর সেতু পরিদর্শন করেছেন বহুবার। কিন্তু কাজ হয়নি। বন্ধ হয়নি মরণ ফাঁদ ওই সেতুর প্রাণহানি। এ বিষয়ে ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বিস্তারিত সরেজমিন সচিত্র একটি প্রতিবেদন ‘কৈডাঙ্গা রেলসেতু কি মরণফাঁদ’ শিরোনামে গুরুত্ব সহকারে ‘জনকণ্ঠ’সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। একই সময়ে অন্যান্য প্রিন্ট মিডিয়াতেও ওই বিষয়ে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। অবশেষে এই বেঘোরে প্রাণহানীর খবর নিয়মিত হয়ে দাঁড়ায় মিডিয়াতে। দুর্ঘটনা ঘটলে ওই এলাকার মানুষেরা নিজ উদ্যোগে মুঠোফোনে খবর দিতেন সংবাদকর্মীদের। বিষয়টি এতোটাই পীড়াদায়ক হয়ে দাঁড়ায় যে, এলাকাবাসীরাও ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েন এইসব প্রাণহানীর ঘটনায়। অবশেষে বিলম্বে হলেও রেল বিভাগের টনক নড়ে। প্রথমে রেল বিভাগ সেতু দু’টির সামনে ট্রেন থামিয়ে তারপর ধীর গতিতে ব্রিজ অতিক্রমণের উদ্যোগ নেয়। এরপরই কর্তৃপক্ষ ব্রিজ উঁচু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ‘ম্যাকডোনাল স্টিল বিল্ডিং প্রডাক্ট লিমিটেড’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে সম্প্রতি। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে ভাঙ্গুড়ায় গিয়ে সেতু এলাকায় কথা হয় এই প্রকল্পের সুপারভাইজার রঞ্জিত কুমার রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, ব্রিজের অবকাঠামোর উপরিভাগে ‘ম্যাটারিয়াল উইন সিষ্টেম বেচিং’ বসানোর কাজ চলছে। তবে আজ কাজ বন্ধ আছে। কয়েকদিন পর নির্মাণসামগ্রী এলে আবার শুরু হবে। তিনি আরও জানান, পুরনো টপ কেটে ফেলা হচ্ছে। নতুন গার্ডার বসানো হচ্ছে। এটা বসানো হলে ট্রেনের ছাদ থেকে নতুন অবকাঠামোর টপের দূরত্ব হবে আড়াই মিটার বা ৮ ফুট। ফলে ট্রেনের ছাদে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকলেও দুর্ঘটনা আর ঘটবে না।
×