ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রক্তাক্ত বেহুলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৮ মার্চ ২০১৫

রক্তাক্ত বেহুলা

গাঙুড়ের গাঙে নিথর স্বামীর দেহ কোলে নিয়ে উত্তাল স্রোতে বিধবার শাদা শাড়িতে একলা ভেসে চলা নয়, রক্তে ভেসে যাওয়া শরীরে ষোলো কোটি মানব-দেবতার কাছে স্বামীকে বাঁচানোর আকুল প্রার্থনা তোমার, পাশে নিথর লখিন্দর কালনাগিনীর ছোবলে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। বেহুলা, বোন আমার, দেবতার সভায় নেচেছিলে তুমি স্বামীর জীবন বাঁচানোর আকুল আকুতি নিয়ে, যে দেবতারা মেতে থাকে নাচ গান আর স্বর্গীয় যত সুখে, মানবিকতা ছোঁয় না যাদের। তারাও কেঁদে উঠেছিলো তোমার আকুতি ভরা ছন্দে। এবার বেহুলা তুমি, ষোলো কোটি নরদেবতার সামনে রক্ত ভেজা শরীরে ইন্দ্রের সভাকেও ম্লান করে দিলে মহাকাল কেঁপে ওঠা হৃদয়ের শেষ তার ছেঁড়া সুতীব্র আকুতিতে তোমার উত্তুঙ্গ পদক্ষেপে কেঁপে উঠল ভূম-লের গলিত লাভাও অথচ কাঁপেনি হৃদয় ষোলো কোটি নরদেবতার। গাঙুড়ের গাঙে নিঃসঙ্গ ভেলায় নয়, মানুষে সরব রাজপথে তুমি আরো একা- আরো একা। কালো রাজপথ যেন গভীর অমাবস্যার নিঃশব্দ গাঙুড়ের গাঙ। ওই গাঙ শুকিয়ে জেগে ওঠা জনপদে এখনও বাতাসে ভাসে কি বেহুলার দীর্ঘশ্বাস! জানে কি কেউ বাংলার মাঠে গভীর নিশীথে ভাট ফুল কাঁদে কি এখনও বেহুলার পায়ের ছন্দে? কেউ কিছুই কি জানে এখন? রক্তাক্ত বোন বেহুলা, তোমার প্রতি মাথা নত করে বলি, এখনও কি নমিব নরদেবতারে! দুহাত জোড়ে বলবো ক্ষমা করো বেহুলা বোন আমার! এ ক্ষমা প্রার্থনার শান্ত বাতাস কোথায় পাব? এখন তো দারুণ চৈত্র, হু হু করে বয়ে যায়, বাংলার সব মাঠে-প্রান্তরে শুকিয়ে গেছে সব ভাট ফুল, সবুজ ঘাসের পাতা, শিশিরের কণা। এই দারুণ চৈত্রের রৌদ্রে কেউ কি নেই সমুদ্রের উন্মাতাল ঢেউয়ের হুঙ্কারে বলে বেহুলার রক্তের ধারায় রক্তাক্ত গাঙুড়ের গাঙ বয়ে যাক এই বাংলায়। পলিবাহী স্রোতে নয়, রক্তের স্রোতে ফিরে আসুক বাংলার মাঠে ভাট ফুল, শিয়াকুল, সবুজ ঘাস আর শিশিরের কণা পরম ¯েœহের সূর্যালোকে। বেহুলার রক্তের ওমে আর স্নেহমাখা সূর্যের পরশে কচি অঙ্কুশ বেরিয়ে আসুক, আবার শরতের কাশফুলের বার্তা নিয়ে নদী কূলে কূলে। সেখানে বেহুলা তুমি উদ্দাম ছুটো, লুটোপুটি খেয়ো তোমার জীবনের বন্ধুর হাত ধরে, রক্ত নয়, আকুতি নয় দেবতার সভায় পায়ের ছন্দে বাংলার নদী মাঠের কান্না নয়, পদ্মার বুকে বয়ে যাওয়া উদ্দাম বাতাসের মতো তোমার হাসিতে ভেসে যাক বাংলার মাঠ, রাজপথ, নদীকূল। আর সেদিনই কেবল রবীন্দ্রনাথ দূর আকাশে দাঁড়িয়ে বলুন, আজ আমি নমিব নরদেবতারে। ৬ মার্চ ২০১৫
×