ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছেলের সাফল্যে উদ্বেলিত পিতা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ মার্চ ২০১৫

ছেলের সাফল্যে উদ্বেলিত পিতা

ফজলুল বারী, এডিলেড থেকে ॥ বৃহস্পতিবার নেলসনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্কটল্যান্ড ৩১৮ করার পর উত্তেজনায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মাশরাফির বাবা গোলাম মর্তুজা। সেই রানের পাহাড় ডিঙ্গিয়েও যে বাংলাদেশ জিতেছে এটিকে তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট বদলে যাওয়ার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখেন। দলের সমর্থনে ক্যাপ্টেন ছেলের সমর্থনে এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড চষে বেড়াচ্ছেন এই বাবা। সিডনি থেকে এডিলেড আসার পথে এই বাবা বলেছেন তার ছেলে কৌশিকের দেশ-বিদেশে খ্যাতিমান ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ তথা মাশরাফি বিন মর্তুজা হওয়ার গল্প। নানাবাড়িতে জন্ম মাশরাফির। বড়ও হয়েছে নানাবাড়িতে। কারণ তার নানির ধারণা-বিশ্বাস ছিল মাশরাফির মা বাচ্চা লালন-পালনের উপযুক্ত নয়! মায়েদের কাছে সব মেয়েরাই ছোট থাকে। তবে নানাবাড়ির লাগোয়া প্রাইমারী স্কুলে পড়লেও এসএসসি-এইচএসসি পাস করেছে নড়াইল সরকারী স্কুল ও কলেজ থেকে। বাবার কথা, পড়াশোনায়ও খুব মেধাবী ছিল মাশরাফি। তার এসএসসি-এইচএসসির রেজাল্টও ছিল খুবই ভাল। এইচএসসির পর দর্শন শাস্ত্রে অনার্স কোর্সে ভর্তি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের দর্শন আর কামিয়াবি শাস্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাওয়াতে তার একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করা হয়নি। মাশরাফির ক্রিকেট আসক্তি কী করে শুরু হলো? তাঁর বাবা গোলাম মর্তুজা ছিলেন এ্যাথলেট। হাইজাম্প, লং জাম্পে বাংলাদেশ অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছেন। তবে তাঁর ক্রিকেট ভাল লাগত না। কলেজজীবনের হোস্টেলের রুমমেট ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেটের বল-ব্যাট এসব বাক্সবন্দী করে রাখতেন রুমে। কিন্তু গোলাম মর্তুজার যেহেতু ক্রিকেট পছন্দ ছিল না, ক্রিকেটের বল-ব্যাটের বাক্সটি মজা করে মাঝে মধ্যে রুমের বাইরে ফেলে দিতেন! সেই বাবার ছেলে মাশরাফি কী করে শৈশব থেকে হয়ে উঠলেন ক্রিকেটের পোকা! যিনি কিনা আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক! গোলাম মর্তুজা বলেন, ছেলেবেলায় স্কুলের মাঠে বড়দের ক্রিকেট খেলা দেখে দেখে মাশরাফির ক্রিকেটের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। প্রথমে সে উইকেটকিপার হতে চায়। উইকেটকিপারের হাতে গ্লাভস থাকে। তার হাতেতো গ্লাভস নেই। দু’হাতে দুটি স্যান্ডেল গ্লাভসের মতো লেপটে ধরে সে উইকেটকিপারের পাশে দাঁড়িয়ে যেতে চায়। বড়রা সেখান থেকে তাকে সরিয়ে দিলে তার মন খারাপ হয়। কিন্তু যার ক্রিকেট নিয়ে এত আগ্রহ তাকে তো কেউ আটকে রাখতে পারে না। মাশরাফিকেও পারেনি। স্কুলের ক্রিকেট, নড়াইলের ক্রিকেট ধরে সে পৌঁছে যায় অনুর্ধ ১৯ দলে। সে সময় এন্ড্রু নামের এক বোলিং কোচের হাতে পড়ে পাল্টে যায় মাশরাফি। অনুর্ধ ১৯ দলে থাকতে হৈচৈ ফেলে দেয়ায় জিম্বাবুইয়ে দলের বিরুদ্ধে খেলায় মাশরাফির ডাক পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা হয়। কারণ মাশরাফি ঢাকার কোন সিনিয়র ডিভিশন লীগেও খেলেনি! তখন এসব সমালোচনার জবাবে মিডিয়া মোকাবেলায় অনভ্যস্ত মাশরাফি নড়াইলের ভাষাতেই চাছাছোলা বলে ফেলেছিলেন, এমন বল করমু না, জিম্বাবুইয়ের এন্ড্রু-গ্রান্ট ফ্লাওয়ার দুই ভাইসহ পাঁচ উইকেট নিমুনে। সেই সিরিজে মাশরাফি এক ম্যাচে পাঁচ উইকেটই নিয়েছিলেন! কিন্তু গ্রান্ট ভ্রাতৃদ্বয়ের শুধু এন্ড্রুর উইকেট নিতে পেরেছিলেন। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে তার নাম হয়ে যায় ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। এরপর ইনজুরি ছাড়া আর কেউ মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আটকাতে পারেনি। নড়াইলে একসময় নেপাল দাশ নামের সবার প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন শৌখিন একজন গনকও। নেপাল দাশ একবার মাশরাফির হাত দেখে তার বাবাকে বলেছিলেন, তোমার এই ছেলে হয় দেশের নামকরা কেউ হবে অথবা চূড়ান্ত খারাপ কেউ হবে। মাশরাফি কী হয়েছেন? বাবার কাছে তার কৌশিক তথা মাশরাফি সাদা মনের আমুদে ছেলে একজন। নানা বিষয়ে বাবার সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন কথা হয় ছেলের। ক্রিকেট নিয়ে কম কথা হয়। তার বাবা এমনিতে একটু ঘরকুনো স্বভাবের। সে কারণে ছেলে এত বছর ধরে ক্রিকেট খেললেও এর আগে কোন দিন ছেলের খেলা দেখতে কখনও দেশের বাইরে যাননি। এবারেও প্রথম দেশের বাইরে এলেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে। এই সফরে তাঁর চার লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এই টাকার কিছু তাঁর নিজের, কিছু মাশরাফির দেয়া। কী আশা নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছেন? জানতে চাইলে বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেনের জনক বলেন, আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ডের পাশাপাশি আশা ছিল দল শ্রীলঙ্কা-ইংল্যান্ডকে হারাবে। এর মাঝে আমরা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেছি। বাকি আছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলা দেখতে হ্যামিলটন যাবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এটা তিনি ঠিক করবেন সোমবার এডিলেডে ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলার পর। মাশরাফির বাবার মতোই বাংলাদেশ অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে এডিলেডের সোমবারের ম্যাচের দিকে।
×