ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ব্যতিক্রমী বিয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৮ মার্চ ২০১৫

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ব্যতিক্রমী বিয়ে

মশিউর রহমান খান ॥ বাদীর বিরুদ্ধে প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ। এলাকাবাসী মিলে তা ধামাচাপা দিয়ে আপোসের চেষ্টা করা হলেও মানেনি বিবাদীর পরিবার। পরে মামলা দায়ের করা হলো থানায়। অতঃপর বিবাদী কারাগারে। তারপর হাইকোর্টের আদেশে কারাগারেই হলো তাদের বিয়ে। বিয়েতে কোন প্রকার উসুল ছাড়াই ২ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করা হয়। শনিবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এমনই একটি ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করা হয়। বর পেশায় গাড়িচালক, কনে গার্মেন্টস কর্মী। উভয়ের মাঝে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের শেষ পরিণতি বিয়েতে ঠেকল। বর কারাগারে থাকায় দেনমোহরের টাকা উসুল করতে পারেনি। বিয়েতে বর-কনেকে বিয়ের কোন পোশাক পরতে দেখা যায়নি, বাজেনি বিয়ের সানাই; তবে উভয় পক্ষের সাড়ম্বর উপস্থিতিতেই সম্পন্ন হয় ব্যতিক্রমী এ বিয়ে। বর গত ৬ মাস যাবত ওই মামলায় হাজতবাস করছেন। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের আদেশে কারা কর্তৃপক্ষ এ বিয়ের আয়োজন করে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপার উচ্চ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে ডেপুটি জেলার মোঃ আরিফুর রহমানকে বিয়ে সম্পন্নের দায়িত্ব দেন। পরে ডেপুটি জেলার আরিফ বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে বর-কনে উভয়পক্ষকে সাক্ষীসহ মুরব্বিদের নিয়ে শনিবার বেলা ১১টায় কারা অফিসকক্ষে হাজির থাকতে অনুরোধ করেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে কারাগারের অফিস কক্ষে এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলার আসামি বাচ্চু আকন্দের (২৫) সঙ্গে ওই মামলারই বাদী চম্পা বেগমের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে ছিলেন বাচ্চুর ভাই কামাল আকন্দ ও চম্পার ভাই আলাউদ্দিন। বিয়েতে বর-কনে ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রায় অর্ধশত অতিথি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে বরকে কারাগারে গোসল করানো হয়। পরে ওজু করিয়ে বিয়ের কাজ শুরু করা হয়। কারাগারের অফিসকক্ষেই হাসি-আনন্দের মাঝে অনুষ্ঠিত হলো এ বিয়ের কার্যক্রম। বিয়েতে বর ও কনে উভয়পক্ষের মুরব্বি ও আত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া কয়েকজন কারা কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থার গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, সাংবাদিক, দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষী, হাজতি, কয়েদিসহ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও এ বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার কাজী মাওলানা মোঃ নাসির উদ্দীন এ বিয়ে পড়ান। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে কেন্দ্রীয় কারাগার মসজিদের ইমাম নববিবাহিত এ দম্পতির জন্য উপস্থিত সবাইকে নিয়ে দোয়া পরিচালনা করেন। দোয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ উপস্থিত সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন। বাচ্চু আকন্দ ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানার দেউলা গ্রামের মোঃ মফিউল্লাহর ছেলে। চম্পাও একই জেলার লালমোহন থানার মৃত ইউসুফ মিয়ার মেয়ে। তারা উভয়েই দীর্ঘদিন যাবত ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। বিয়ের পর কনে চম্পা প্রতিবেদককে জানান, আমার সঙ্গে বাচ্চুর দীর্ঘদিনের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। আমরা একে অপরকে ভালবাসি। তারা বিয়ে করতে চাইলেও তাদের এলাকার একটি কুচক্রী মহল এ বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ও ফুসলিয়ে থানায় মামলা করতে বাধ্য করে। কিন্তু আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। পরে আমাদের উভয় পরিবারের মধ্যে আলোচনাসাপেক্ষে আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত বিয়ের নির্দেশ দেয়। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আশা করি বিয়ের পর আমরা উভয়েই সুখে থাকব। কারা সূত্র জানায়, সুপ্রীমকোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবীর আন্তরিক সহায়তায় উচ্চ আদালত এ বিয়ের নির্দেশ দেয়। বর বাচ্চু আকন্দ তৎকালীন একজন সাবেক সংসদ সদস্যের গাড়িচালক ছিলেন। তাই মামলা দায়ের ও গ্রেফতারের পরও কনে চম্পাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিয়েতে রাজি হয়। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
×