ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য

সেনা সমর্থনে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন মান্না

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৮ মার্চ ২০১৫

সেনা সমর্থনে সরকার উৎখাত করতে চেয়েছিলেন মান্না

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতার মধ্যে সেনাবাহিনীর সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ফের ১০ দিনের রিমান্ডে আনার পর এ ধরনের কথা বলেছেন তিনি। অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতার মধ্যে মান্না গণফোরাম প্রধান ড. কামাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গুলশানের বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে যেসব কথাবার্তা বলেছেন সেই বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে। তদন্তকারী সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সেনা বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার আদালতে হাজির করে ফের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আরও ১০ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে মান্নাকে। জিজ্ঞাসাবাদে মান্না বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের অনির্দিষ্টকালের টানা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংসতা সত্ত্বেও সরকারের পতন ঘটানো যাচ্ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার মাধ্যমে অবরোধ-হরতালের সহিংস আন্দোলনকে আরও জোরদার করে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছিল। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য উস্কানি দেয়া হচ্ছিল। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের জন্য আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন তারা। এজন্য তারা কিছুটা সফল হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন মান্না। মান্না জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ফোনালাপ কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার আগেই শান্তি ও সংলাপের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল বের করার কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়। তার কর্মসূচীতে ব্যাপক লোক সমাগম করার জন্য মানুষজনের যোগান দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। মানুষজন যোগান দেন নিউইয়র্কে অবস্থানরত খোকাও। এ সময় নাগরিকদের মাধ্যমে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ নামক সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন, সুশীল সমাজ গড়ে তুলে রাজনৈতিক দলগুলোকে আরও সক্রিয় করার চেষ্টা করা হয়। এই চেষ্টার ফলে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ সরব হয়ে ওঠেন। এমনকি বিএনপি-জামায়াতপন্থী সাংবাদিক সংগঠন, আইনজীবী সংগঠন, শিক্ষক সংগঠনসহ পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে অবরোধ-হরতালের সহিংসতার আন্দোলনে সক্রিয় করা হয়। এই আন্দোলনে অংশ নিতে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে অবস্থারত খালেদা জিয়ার সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছেন সামরিক বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত, চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারাও। তবে ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেন মান্না। ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ॥ শনিবার বিকেলে মান্নাকে আদালতে হাজির করেন গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফিরোজ আহমেদ। তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা। রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আদালতের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল। শুনানি শেষে তার পক্ষে চাওয়া জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম আতাউল হক। জামিন নামঞ্জুর ॥ মান্নার পক্ষে রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন জানান তার আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান। এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে মান্না নিজেও শুনানিতে অংশ নেন। এর আগে ডিবি পুলিশ সেনা বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগের মামলায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে মান্নাকে। সেনা বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার মামলায় মান্নার রিমান্ড চলাকালেই গত বৃহস্পতিবার তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকেও। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নার সঙ্গে নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খোকার টেলিফোন আলাপের একটি অডিও ক্লিপ গত ২২ ফেব্রুয়ারি ফাঁস হয়। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে জাতীয় শান্তি ও সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা মান্নার এই কথোপকথন ফাঁসের পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। ফাঁস হওয়া টেলিফোন কথোপকথনে ঢাকার সাবেক মেয়র খোকার সঙ্গে আলাপচারিতায় সেনা বিদ্রোহে উস্কানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা, সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় মান্নাকে। মান্না গ্রেফতারের আগে সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিউইয়র্কে অবস্থারত খোকার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে স্বীকার করেছেন। একই দিন অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গেও মান্নার কথোপকথনের আরেকটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংসতার চলমান পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করতে শোনা যায় মান্নাকে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মান্না ২০০৭ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর তিনি আওয়ামী লীগ থেকে ছিটকে পড়ে গড়ে তোলেন নাগরিক ঐক্য। চিকিৎসার উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত খোকা সেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচীতে সক্রিয় তৎপরতা চালাচ্ছেন। এই তৎপরতার মধ্যেই সেনা বিদ্রোহের উস্কানি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার জন্য খোকার সঙ্গে ফোনালাপ করেন মান্না। ফোনালাপ ছাড়াও মান্না বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনার মধ্যেই গণফোরাম প্রধান ড. কামাল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে তাদের কি কথাবার্তা হয়েছে তা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে হয়েছে।
×