ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দু’পক্ষই জয়ে আশাবাদী

সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী প্রচার জমে উঠেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৮ মার্চ ২০১৫

সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী প্রচার জমে উঠেছে

বিকাশ দত্ত ॥ জমে উঠেছে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী প্রচার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ (সাদা) তার নেতৃত্ব ফিরে পেতে, অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল) নেতৃত্ব ধরে রাখতে প্রাণপণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রার্থীরা ভোটারের কাছে ভোট চাচ্ছেন, তারা আগামী দিনে আইনজীবীদের জন্য কে কি করবেন তাও তুলে ধরছেন। এবারের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে উভয় প্যানেলই নির্বাচনে জয়লাভে আশাবাদী। ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনের সুপ্রীমকোর্টের ৪ হাজার ৩৬২ জন ভোটার এক বছরের জন্য তাদের নেতা নির্বাচিত করবেন। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। নির্বাচনী কার্যক্রমে ইতোমধ্যে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন ও দ্বিধাবিভক্ত গণতান্ত্রিক আইনজীবী উভয় পক্ষকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্যপ্যানেল এক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। সাদা ও নীল প্যানেলের নির্বাচনী প্রচারে সুপ্রীমকোর্ট অঙ্গন এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সুপারিনটেনডেন্ট নিমেশ চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টে ভোটোরের সংখা ৪৩৬২ জন। প্রেসিডেন্ট ও সম্পাদকসহ মোট ১৪টি পদে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩১ জন। দুটি প্যানেলের বাইরে দুইজন প্রেসিডেন্ট ও একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রয়েছেন। প্যালেনের বাইরে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোঃ ওবায়দুল হক পিরজাদা ও ড. ইউনুস আলী আকন্দ। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন নজরুল ইসলাম। এছাড়া আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলে প্রেসিডেন্ট পদে মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও সম্পাদক পদে মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী। বিএনপির নেতত্বাধীন নীল প্যানেলে প্রেসিডেন্ট পদে খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন জনকণ্ঠকে বলেছেন, প্রার্থী হয়েছি। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করে সমিতিকে সত্যিকার অর্থে বিজ্ঞ সদস্যদের কল্যাণের জন্য পেশাজীবী সংগঠনের পরিণত করার লক্ষ্যেই আমার প্রার্থিতা। সাম্প্রতিক সময়ে আইনজীবীদের কল্যাণ, পেশাগত উৎকর্ষতা সাধন, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক সৃষ্টির যে একটি দলে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের সমিতিকে নগ্নভাবে ব্যাবহার করছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। আদালত অঙ্গনে সভা সমাবেশের নামে নগ্ন রাজনৈতিক সেøাগান মিছিল, বিচার কাজে বাধা দেয়া, আইনজীবীদের বিচারিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণে যেভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে তা কোনভাবেই সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবীদের সমিতির গঠনতন্ত্র অনুমোদন করে না। গত দুই মাসে আইনজীবীদের নানাভাবে পেশাগত চরম ক্ষতির মুখোমুখি করছে। বর্তমান কমিটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে সমিতির সদস্যদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সমিতিকে রাজনৈতিক ব্যবহার থেকে মুক্ত করতেই আমার প্রার্থিতা। আমার বিশ্বাস সমিতির বিজ্ঞ সদস্যরা তাদের সুচিন্তিত মতামত দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করবেন। অপর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বর্তমান বারের প্রেসিডেন্ট বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, শামসুল হক চৌধুরী ৭ বার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। দেশে গণতন্ত্র উদ্ধার আইনের শাসন উদ্ধার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপি জামায়াতের সাবাই তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তখন কার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। আমরাও একইভাবে আজকে দেশে আইনের শাসনকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। বিচার বিভাগ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিম্ন আদালত কাজ করছে। এখানে নামমাত্র সুপ্রীমকোর্টের কথা বলা হচ্ছে। আমরা দক্ষ ও যোগ্য বিচারক নিয়োগের কথা বলেছি। এখনও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এসব কাজের জন্য মাঠে আছি। ইনশাল্লাহ থাকব। সরকার যদি আইনের শাসনের ওপর আঘাত হানে তাহলে সরকারদলীয় প্রার্থীরা তাদের পক্ষে থেকে প্রতিবাদ করা সম্ভব হয় না। সেজন্য আমরা প্রতিবাদ করে থাকি। ঢাকা বারে যেমন আমাদের বিজয় হয়েছে। আমরা আশা করি সুপ্রীমকোর্ট বার নির্বাচনেও আমাদের ঐতিহাসিক বিজয় হবে। তিনি আরও বলেন ক্ষমতায় থাকাকালে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবীদের জন্য অনেক কিছু করেছি। পুনরায় নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের জন্য যেসব সমস্যা রয়েছে তার সমাধান করা হবে। প্যানেলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আরও বলেন, আমরা সমিতিতে থাকা অবস্থায় অনেক কিছু করেছি। এর মধ্যে সুপ্রীমকোর্ট ৩৫ বছর যাদের বয়স হয়েছিল, তাদের বেনাপোল ফান্ডের সুযোগ দেয়া হয়নি। তাদের জন্য ভিন্ন ফান্ড করেছি। আমরা এবার বিজয়ী হলে অবশ্যই তাদের জন্য এটার ব্যবস্থা করব। ক্যান্টিনে যাতে আইনজীবীরা ভালমানের খাবার পান তার ব্যবস্থা করা হবে। সুপ্রীমকোর্টের সব উন্নয়ন বিগত বছরে করেছি। আইনজীবীরা এর জন্য কাপড় ধোয়া থেকে ভাল ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করেছি। মহিলাদের জন্য ডে কেয়ারের সুবিধার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। নির্বাচন বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রীমকোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার মোঃ বদরুদ্দোজা বাদল জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা আশা করছি আমাদের পূর্র্ণ প্যানেল জয়ী হবে। তার কারণ বারের নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি সরকারী দলের হয় তা হলে সরকার ও বার এক হয়ে যাবে। দাবি দাওয়া বিচার বিভাগের দলীয়করণ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবে না। প্রতিবাদ করার কেউ থাকবে না। গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার যাই বলেন, বিরোধী দলে থেকেই প্রতিবাদ করা সম্ভব। সুপ্রীমকোর্ট ভিতরে বহিরাগত যে তা-ব হয়েছিল তার জন্য আওয়ামী আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেনি। দেশের ৬৪টি জেলার বারের নির্বাচিত বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে যখন গ্রেফতার করা হলো তখন আওয়ামী আইনজীবীরা প্রতিবাদ করেনি। এসব কারণেই সাধারণ আইনজীবীরা আমাদের পক্ষে রায প্রাদন করবেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সম্পাদক পদে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী জনকণ্ঠকে বলেন, আমি নির্বাচনে জয়লাভের আশাবাদী। আমি এবং আমার সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেল বিজয়ী হবে। এটা আমার প্রত্যাশা। আইনজীবীরা সুপ্রীমকোর্ট বারের পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিবে। যারা সুপ্রীমকোর্ট বারের নেতৃত্বে আছে তারা আদালত বন্ধ করে দিয়েছে। সাধারণ সভা করে। আমরা চাই আদালত সচল থাকুক। আদালত বন্ধ করে বিচার বন্ধ করে কোন আইনজীবীর দের সমর্থন পাওয়া যায় না। আমরা আদালত সচল থাকার পক্ষে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমাদের ভাল প্রস্তুতি আছে। ইনশাল্লাহ আমরা জয়লাভ করব। আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে নীল প্যানেল জয়লাভ করবে। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ব্যানারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ। সাধারণ আইনজীবীরা পেশাগত স্বার্থে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা আদালতের কার্যক্রম কোনরূপ বিঘœ যাতে সৃষ্টি না হয় সে কারণে সাদা প্যানেলের মধ্যে রায় প্রদান করবে বলে আমার বিশ্বাস। নির্বাচনী কার্যক্রমে ইতোমধ্যে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় আইনজীবী পরিষদ, জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশন ও দ্বিধাবিভক্ত গণতান্ত্রিক আইনজীবী উভয় পক্ষকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। সিনিয়র আইনজীবী নেতাদের মধ্যে ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, আব্দুস বাসেত মজুমদার, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, মনসুরুল হক চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, এএফ এম মেজবাহউদ্দিনসহ সমন্বয় পরিষদসহ নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সম্পাদকদের সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। সমন্বয় পরিষদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম হচ্ছে বার সমিতিকে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী বাস্তবায়নের কর্মকা-ের মধ্য থেকে বেরিয়ে আনা এবং আদালত পরিচালনার সমিতির পক্ষ থেকে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে তা অবমুক্ত করা। নির্বাচনের সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল ছাড়াও সভাপতিপদে আরও দুইজন এবং ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এ প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। এই প্যানেলে অন্যরা হলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল খায়ের, মোঃ তাহেরুল ইসলাম, সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী, কোষাধ্যক্ষ মোঃ আমির হোসেন, সহ-সম্পাদক পদে মোঃ দেলোয়ার মোস্তফা চৌধুরী (মধু) এবং মোঃ সুজা আল-ফারুক। সাতটি সদস্য পদে এ প্যানেল রয়েছেন একেএম দিদারুল রহমান মিনা, অমিত দাশ গুপ্ত, খান মোহাম্মদ শাহীন আজিজ, মহিউদ্দিন শামীম, মোঃ আবদুল আজিজ মিয়া মিন্টু, মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব এবং সাবিনা ইয়াসমিন (সাবিনা ইসলাম)। বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে প্রেসিডেন্ট পদে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট এ এস এম মোস্তার কবির খান, মোঃ আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সম্পাদক-এ এ মাহবুব উদ্দিন (খোকন), কোষাধ্যক্ষ শওকত আরা বেগম দুলালীসহ সম্পাদক-দুটি পদে মাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারী উজ্জ্বল, মোঃ ইউসুফ আলী। ৭টি সদস্য পদে রয়েছেন মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, মোঃ ফাইজুর রহিম, মোঃ জসিম সরকার, মোঃ নাসির উদ্দিন খান সম্রাট, মির্জা আল মাহমুদ, রেজাউল করিম, শামীমা সুলতানা দীপ্তি।
×