ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয়ভাবে নববর্ষ উদযাপনে সাড়ম্বর আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৬ মার্চ ২০১৫

জাতীয়ভাবে নববর্ষ উদযাপনে সাড়ম্বর আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃতিতে এখন বিরাজমান ঋতুরাজ বসন্ত। দখিনা হাওয়ায় দোলা সবুজ পত্রপল্লব ও বাহারি ফুলের হাতছানি শেষে প্রখর খরতাপ নিয়ে আসবে গ্রীষ্মের বৈশাখ। আর বৈশাখের আগমনী বার্তায় পুরনো বছর বিদায় নিয়ে আসবে বাংলা নববর্ষ। ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুরে বরণ করা হবে ১৪২২ বঙ্গাব্দকে। সেই সূত্রে জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচী। ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সকল উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা ও আলোচনাসভাসহ বর্ণিল আয়োজনে রবণ করা হবে নতুন বাংলা বছরকে। জাতীয়ভাবে নববর্ষ উদ্্যাপনের লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার হলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে জাতীয়ভাবে নববর্ষ উদ্্যাপনে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচী বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমজাদ আলী, বিটিভির মহাপরিচালক আবদুল মান্নান, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলা নববর্ষ উদ্্যাপনের বিষয়টি পরিণত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে। বাঙালী জাতিসত্তার এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবটি ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূত অংশগ্রহণে এটি এখন বিবেচিত হয় বাঙালীর প্রাণের উৎসব হিসেবে। তাই নববর্ষ উদ্্যাপনে সরকারী উদ্যোগের চেয়ে বেসরকারী উদ্যোগই অনেক বেশি থাকে। উৎসবের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলেন, এবারের উৎসবকে স্বার্থক করতে নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা নববর্ষ উদ্যাপনে প্রভাব ফেলবে না উল্লেখ করে বলেন, বইমেলা সফলভাবে সমাপ্তির মাধ্যমে আমরা ভয়কে অতিক্রম করেছি। অভিজিৎ হত্যার পরের দিনও মেলায় প্রচ- ভিড় ছিল। এর মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয়েছে জনগণ সকল ভয়ভীতিকে পাশকাটিয়েই উৎসবে শামিল হন। অতীতেও এরকম অনেক ভীতিকর পরিবেশ ছিল যাকে জনগণ উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসব-আয়োজনে অংশ নিয়েছে। জাতীয়ভাবে নববর্ষ উদ্্যাপনের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সকল উপজেলায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রামীণ মেলা ও আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে। পয়লা বৈশাখ থেকে তিন দিনব্যাপী নববর্ষের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে নববর্ষের অনুষ্ঠানমালা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাংলা নববর্ষের মেলা, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে বাংলা একাডেমি ও বিসিক। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসসহ মিশনসমূহে থাকবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। সোনারগাঁওয়ের বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্পী ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্্যাপন করা হবে নববর্ষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কতিক একাডেমিসমূহ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উদ্্যাপন করবে নববর্ষ। বৈশাখের প্রথম প্রহরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজনটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। গণগ্রন্থাগারের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। বর্ষবরণের আয়োজনের অংশ হিসেবে উন্মুক্ত রাখা সকল জাদুঘর ও প্রতœস্থান। অভিজাত হোটেল ও ক্লাবে নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও ঐতিহ্যবাহী বাঙালী খাবারের আয়োজন থাকবে। ছাফিয়ার শীলু আবেদ কারুশিল্পী পুরস্কারপ্রাপ্তি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নাবালক দুই ভাইসহ সংসারের হাল ধরেছিলেন ছাফিয়া বেগম। ঢাকার অদূরে গাজীপুরের গারালিয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। ১৯৭৩ সালে গ্রামটিকে ‘কোর-দি জুট ওয়ার্কস’-এর কর্ম-এলাকা ঘোষণা করা হয়। আর ছাফিয়া তখন গারালিয়া দলের নেত্রীর কাছে কাকুতি-মিনতি জানায় তাকে যেন দলে নেয়া হয়। শারীরিক অক্ষমতার জন্য দলে নিতে প্রথমে নারাজ হলেও মানবিক কারণে তাঁকে দলের সদস্য করে নেয়া হয়। সুযোগ পেয়েই ছাফিয়া তার কর্ম-দক্ষতার পরিচয় দেন। এরপর পাটপণ্য তৈরি করে তাঁর জীবন চাকা ঘুরতে থাকে আপন গতিতে। যা আজও সচল রয়েছে। জীবনসংগ্রামে ৬৫ বছর বয়সী এই ছাফিয়া বেগম কখনও হেরে যাননি। শারীরিক প্রতিবন্ধদাকে পাশকাটিয়ে জয়ী হয়েছেন জীবনসংগ্রামে। হয়ে উঠেছেন অনুকরণীয়। কারুশিল্পের অন্যতম মাধ্যম ‘প্রাকৃতিক তন্তু-পাট’ পণ্যসামগ্রী দেশে ও দেশের বাইরে জনপ্রিয় করার পেছনে রয়েছে তাঁর অনন্য অবদান। সেই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেলেন শীলু আবেদ কারুশিল্পী পুরস্কার ২০১৫। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টার মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাফিয়া বেগমের হাতে পুরস্কাস্বরূপ এক লাখ টাকার চেক, স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন ব্র্যাকের চেয়ারম্যান স্যার ফজলে হাসান আবেদ। শীলু আবেদ ট্রাস্টের পৃষ্ঠপোষকতায় কারুশিল্পী পরিষদ আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আরও পাঁচজন কারুশিল্পীকে সম্মাননাসূচক সনদপত্র দেয়া হয়। তারা হলেনÑসরলা গোমেজ, আনোয়ারা বেগম, মেরেজান বেগম, রাজিয়া বেগম ও সন্ধ্যা ম-ল। হুইল চেয়ারে বসে ছাফিয়া বেগম পুরস্কারপ্রাপ্তি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, অভাবের তাড়নায় ছোটবেলা থেকে এই পাটের কাজ করছি। মা-বাবাকে হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা তখন পাটের কাজ করে ছোট ভাইবোনকে লালন পালন করেছি। পাট দিয়ে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করতে আমার ভাল লাগে। সেই ভাল লাগা থেকে ৬৫ বছর বয়সেও কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় কারুশিল্পী পরিষদের নির্বাহী সভ্য শেখ সাইফুর রহমানের উপস্থাপনায় শিলু আবেদের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোকপাত করেন আড়ংয়ের সিওও মোহাম্মদ আবদুর রউফ। স্মৃতিচারণ করেন শীলু আবেদের বোন মালেকা খান। অনুষ্ঠানে প্রাকৃতিক পাটতন্তু বিষয়ক অডিও ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা করা হয়। জাতীয় কারুশিল্পী পরিষদের সভাপতি চন্দ্রশেখর সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিষদের কোষাধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম। গ্যালারি কায়ায় যৌথ চিত্র প্রদর্শনী শুরু আজ রাজধানীর উত্তরার গ্যালারি কায়ায় আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। জলরং ও ছাপচিত্র মাধ্যমে সৃজিত সমকালীন ১০ শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। কনটেম্পোরারি ভাইবস শীর্ষক এ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেনÑ আলপ্তগীন তুষার, আনিসুজ্জামান, নগরবাসী বর্মণ, আজমীর হোসেন, শেখ মোঃ রোকনুজ্জামান, আশরাফুল হাসান, কামাল উদ্দীন, সোহাগ পারভেজ, রুহুল আমিন তারেক ও শাহনূর মামুন। আজ শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী অধ্যাপক আবুল বারক্্ আলভী। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন। জলরং এবং ছাপচিত্রের এচিং, লিথোগ্রাফ ও উডকাট মাধ্যমের ৪৯টি চিত্রকর্ম ঠাঁই পাবে প্রদর্শনীতে। আগামী ১৭ মার্চ চলমান প্রদর্শনীটি সকাল ১১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শহীদ মিনারে পাঁচ পথনাটকের প্রদর্শনী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে সপ্তাহব্যাপী পথনাটক উৎসব। ‘আগুনে পড়–ছে দেশ বাঁচাও জীবন বাঁচাও প্রতিবেশ’ সেøাগানে পথনাটক পরিষদ আয়োজিত উৎসবের পঞ্চম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভাষা শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত প্রাঙ্গণে পরিবেশিত হয় পাঁচটি পথনাটক। অপেরা পরিবেশন করে মান্নান হীরা রচিত ও রেজাউর রহমান সবুজ নির্দেশিত নাটক ‘বৌ’। আব্দুল হালিম আজিজের রচনা ও বৈদ্যনাথ অধিকারীর নির্দেশনায় দৃষ্টিপাত নাট্যদল মঞ্চস্থ করে ‘আলোর প্রদীপ জ্বালো’। থিয়েটার আর্ট ইউনিট পরিবেশন করে জনম ‘দুখি মা’। এস এম সোলায়মানের রচনায় প্রযোজনাটির নির্দেশনায় ছিলেন মোহাম্মদ বারী। লোক নাট্যদল (বনানী) উপস্থাপন করে শুভংকর চক্রবর্তী রচিত ও ড. প্রণবানন্দ চক্রবর্তী নির্দেশিত নাটক ‘মড়া’। বগুড়ার নান্দনিক নাট্যদল পরিবেশন করে ‘বর্ণচোর’। মমতাজ উদ্দীন আহমদের রচনায় নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন খলিলুর রহমান চৌধুরী।
×