ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এম শামসুর রহমান

আবদুল জলিল ॥ অনন্য এক রাজনীতিক

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৬ মার্চ ২০১৫

আবদুল জলিল ॥ অনন্য এক রাজনীতিক

উত্তরবাংলার ঐতিহ্যবাহী নওগাঁ কে ডি উচ্চ বিদ্যালয় (স্থাপিত ১৮৮৪ খ্রি.)। ১৯৫১ সাল। পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে এক কিশোর। নওগাঁর দক্ষিণে অনতিদূরের গ্রাম চকপ্রাণ থেকে এসেছে। বৃত্তি পাওয়া মেধাবী ছাত্র। ছেলেটি নম্র স্বভাবের। সুদর্শন। আচার-আচরণ মার্জিত। কে ডি স্কুলে আমি তার এক বছরের সিনিয়র। বাড়ি নওগাঁ শহরে। বিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থা থেকেই আমাকে তিনি বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করতেন। কালক্ষেপণ না করে বলি- ছেলেটির নাম মোঃ আবদুল জলিল। স্কুলের গ-ি পেরিয়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন রইল না। জলিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হলেন। ফজলুল হক হলে থাকতেন। ঢাকায় এলে জলিলের সঙ্গে দেখা করতাম। ১৯৬৫ সাল। আবদুল জলিল লন্ডন চলে গেলেন ব্যারিস্টারি পড়তে। পরের বছর কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে আমিও পাড়ি দিলাম ইংল্যান্ডের উদ্দেশে। ১৯৬৬-এর ১৪ সেপ্টেম্বর, আজও মনে পড়ে, লন্ডন হিথরো বিমানবন্দরে তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ। পরের দিন কিছু কেনাকাটায় জলিল লন্ডনের দোকানপাটে আমাকে নিয়ে গেলেন। দু’দিন বাদেই আমি চলে গেলাম আমার গবেষণা কর্মস্থল লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। জলিল যথারীতি লন্ডনে থেকে গেলেন। মাঝেমধ্যে তাঁর লন্ডনের বাসায় এসেছি। আমার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ হতো। ৬৮-এর ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ’৬৯-এর ১ জানুয়ারি ভোর অবধি নতুন খ্রিস্টীয় বছরকে স্বাগত জানিয়ে আমরা হৈহুল্লোড় করেছি। সঙ্গে ছিল আমারই স্কুল সহপাঠী ও বাল্যবন্ধু (বর্তমানে নওগাঁয় বসবাসরত) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। পাকিস্তানের তৎকালীন একমাত্র স্নাতকোত্তর ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপনার পাট চুকিয়ে ’৭০-এর ডিসেম্বরের শেষভাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে যোগ দিই। ’৭১-এর দীঘ নয় মাস উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঢাকাতেই কাটালাম। সে সময়ের কিছু ঘটনাপ্রবাহ পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরতাম। আবদুল জলিল তখন ওপার বাংলায় মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার। আমার অনুজ মোঃ শাহিদুর রহমান (বর্তমানে নওগাঁর তুলাপট্টি জনতা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র অফিসার) তাঁর অধীনে মক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকায় আবদুল জলিলের ফিরে আসা এবং বৃহত্তর রাজনীতিতে প্রবেশ। নওগাঁর নানান উন্নয়নকর্মে আবদুল জলিলের আবদান অপরিমেয়। ব্যাংকের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতেও তিনি নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। সমস্যাপীড়িত মানুষের প্রতি নিরন্তর তিনি তাঁর অকৃপণ সাহায্যহস্ত বাড়িয়ে দিতেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে উর্ধে তুলে রেখেছেন তিনি সব সময়ই। মৌলবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক-বাহক ছিলেন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নিজের নীতি থেকে বিচ্যুত হননি। সজ্জন ও মুক্তিচিন্তার মানুষ হিসেবে নিজের দল ও প্রতিপক্ষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন এই নেতা। আজ মৃত্যুবাষিকীতে তাঁকে স্মরণ করি। লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
×