ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপনি আচরি ধর্ম

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৬ মার্চ ২০১৫

আপনি আচরি ধর্ম

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউকের নির্দিষ্ট বিধিমালা রয়েছে। সেসব বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে মহানগরীর উন্নয়নের স্বার্থেই। বলা বাহুল্য, ব্যাপকহারে সেসব বিধিমালার লঙ্ঘন ঘটেছে বলেই ঢাকা আজ পরিণত হয়েছে ইট-কাঠ-পাথরের জঙ্গলে। ওদিকে বিশেষজ্ঞরা রাজউকের কার্যক্রমকে তিন ভাগে ভাগ করার সুপারিশ করেছেন। এর একটি অংশ ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) বাস্তবায়ন করবে, একটি অংশ ভবন নির্মাণ পর্যবেক্ষণ করবে এবং অপর অংশটি নগর উন্নয়নের কাজ করবে। দুঃখের বিষয়, এ পরামর্শ মেনে সুষ্ঠু ও পরিকল্পনামাফিক কাজ হয়নি। তারপরও বসবাসের জন্য বিপজ্জনক ঢাকাকে বাঁচানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। নগর-মহানগর উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা ও ড্যাপকে পাশ কাটিয়ে বা উপেক্ষা করে যাতে নগর উন্নয়ন কর্মকা- না হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে তা নিশ্চিত করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে। রাজধানীর চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনার কথা সংসদেই উচ্চারিত হয়েছে বার বার। ভূমিদস্যু ও নদীহন্তারকরা আইন-আদালতের তোয়াক্কা করে না। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জরিপ পর্যালোচনায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে দেশের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার বিষয়টি। ঢাকার ফুসফুসকে সুস্থ করে তুলতে হলে যে জলাধার স্থাপন এবং উদ্ধার জরুরী এটা অনুধাবনের জন্য নগর বিশারদ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ঢাকায় জলভাগের তুলনায় ১৯৬০ সালে নগরায়িত স্থলভাগের পরিমাণ ছিল পাঁচগুণ বেশি। কিন্তু ৪০ বছর পর জলভাগের অনুপাত চারগুণ কমে যায়। এখন জলভাগের পরিমাণ আরও কম। গবেষকরা দেখিয়েছেন এক বছরে (২০১২ সালে) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাত হাজার ৩শ’ ৬৫ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ নষ্ট হয়েছে ঢাকার পানি দূষণের কারণে। নতুন জলাধার গড়ে তোলার কাজ কি শুরু করেছে রাজউক? প্রপার্টি ডেভেলপার তথা বহুতল ভবন ব্যবসায়ীরা আগে যেভাবে ঢাকায় জমি কিনে যত্রতত্র আকাশছোঁয়া অট্টালিকা বানিয়ে ফেলেছে, আগামীতে যাতে সেটি আর সম্ভব না হয় সে বিষয়ে কি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? আমরা আশা করব, এখন থেকে ঢাকায় পরিকল্পনাবিহীনভাবে আর একটিও ভবন নির্মাণ করা হবে না। ঢাকা শহরে বহু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালও নির্মাণ করা হয়েছে নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। এতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটেছে। রাজধানীতে আবাসিক এলাকা আর বাণিজ্যিক এলাকা যখন একাকার হতে শুরু হলো, তখন কি রাজউক দীর্ঘ শীতনিদ্রায় গিয়েছিল! কথায় বলে, ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও’। রাজউক তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করলে আজ ঢাকা মহানগরীর এমন করুণ দশা হতো না। ভবন নির্মাতাদের উদ্দেশে তাদের সুপরামর্শ নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু কথা হলো, নিজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেলায়ও তারা একই নীতি অনুসরণ করছে কি-না। অপরকে সচেতন করার আগে আত্মসচেতনতা জরুরী। সম্প্রতি দশ কাঠার প্লটে ইমারত বা বিল্ডিং নির্মাণ হলে সেই প্লটে ১৫ শতাংশ বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তার উঠে এসেছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য। এটা ইতিবাচক। অতীতে রাজউকের অনিয়ম, ত্রুটি এবং কর্তব্যে অবহেলার কারণে ঢাকার যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা শুধরে নেয়ার পথ প্রথমে খুঁজে বের করা দরকার। আগামীতে রাজউক যদি আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে আপন কর্তব্য পালন করে তবে সেটাই হবে রাজধানীবাসীর জন্য বড় প্রাপ্তি।
×