ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফারাবীর চবি ছাত্রত্ব অধ্যায়ের কিছু চিত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৪ মার্চ ২০১৫

ফারাবীর চবি ছাত্রত্ব অধ্যায়ের কিছু চিত্র

চট্টগ্রাম অফিস/রহমান শোয়েব, চবি ॥ লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রত্ব শেষ করতে না পারা সফিউর রহমান ফারাবী। মুক্তমনা লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজনক আসামি হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে র‌্যাব তাকে গ্রেফতার করেছে। এর আগেও গ্রেফতার হয়েছিলেন আরেক নিহত ব্লগার রাজীবের জানাজা পড়ানো ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থী তার জঙ্গী তৎপরতার কারণে পড়ালেখায় সময় দিতে পারেননি। ফেল করেছেন একাধিকবার। হারিয়েছেন ছাত্রত্বও, শেষ করতে পারেননি তার শিক্ষাজীবন। তবুও থেমে নেই তার অপতৎপরতা। চবিতে পড়ার সময়ই ২০১০ সালে তিনি জড়িয়ে পড়েন নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রমের সঙ্গে। হয়ে ওঠেন হিজবুত তাহরীরের একজন সক্রিয় কর্মী। এরপর ২০১০ সালে চবিতে বর্ধিত বেতন ফি বিরোধী আন্দোলনে চবিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়। তখন গ্রেফতার হন ফারাবী। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে যে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে হিযবুত তাহরীরের কর্মীরা এ সময় ভাংচুরে অংশ নেন। এ উদ্দেশ্যে তারা নগরীর বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকও করেছিলেন। ২০০৯ সালের শেষ থেকেই তিনি ফেসবুকে হিযবুত তাহরীর ও ইসলাম নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। ফেসবুকে ব্লগার রাজীবের জানাজার ইমামকে হত্যার হুমকিও দেন তিনি। পরে গ্রেফতার হন ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। চবির দুই নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকা থেকে হাটহাজারী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছিল। মূলত এরপর থেকেই অধিক পরিচিত হয়ে ওঠেন ফারাবী। একই বছরের ২১ আগস্ট তিনি জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু তবুও তার অপকর্ম চলতেই থাকে। জামিন পেয়েই রাজীব হত্যার দায়ে গ্রেফতার ছয় আসামির মুক্তি দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। পাশাপাশি তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরও লিখেন ‘আমার দৃষ্টিতে নাস্তিকরা হচ্ছে পেকামাকড়। আর পোকামাকড়দের মরে যাওয়াই ভালো।’ তার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মূলত ফারাবী একটু ভীত প্রকৃতির ছিল। কিন্তু সে নিজের পরিচিতি ও খ্যাতির জন্য ফেসবুক ও ব্লগে লেখালেখি করত। মূলত ইসলাম ধর্ম নিয়ে এবং কথিত নাস্তিকদের বিরুদ্ধে লিখত। তাছাড়া বর্তমান সরকারকে জালিম ও নাস্তিক সরকার উল্লেখ করেও সে অপপ্রচার চালাতে থাকে। ফলে সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন একটি গোষ্ঠী তার ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষী হয়ে ওঠে। চবি পদার্থবিদ্যা বিভাগের বর্তমান সভাপতি প্রফেসর ড. মিহির কুমার রায় বলেন, ফারাবী তৃতীয় বর্ষে উঠার আগেই কয়েকবার ফেল করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়।’ তিনি আরও জানান, ‘ফারাবী হিযবুত তাহরীরের কর্মী ছিল। তবে তার আচরণে সেগুলো কখনও বোঝা যেত না। সে গোপনে কাজ করত। তবে রাজীব হত্যাকা-ের পর যখন সে গ্রেফতার হয় তখনই বিষয়টি জানাজানি হয়।’ নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ফারাবী প্রথমে ফেসবুক ও ব্লগে বিভিন্ন লেখালেখি করলেও পরে ‘ফারাবী ব্লগ’ নামে নিজস্ব ব্লগ চালু করেন। সেখানেই তিনি নিয়মিত ইসলাম ধর্ম ও কথিত নাস্তিকদের নিয়ে লেখালেখি করতেন। তার অধিকাংশ লেখাই আক্রমণাত্মক। তার মতের সঙ্গে মিল না হওয়ায় তিনি কথিত নাস্তিক ব্লগারদের বিভিন্ন ব্লগের বিরোধিতা করতে থাকেন। আর মতপার্থক্যের কারণে ব্লগার রাজীব, আসিফ মহিউদ্দিন, অভিজিৎ রায়, তসলিমা নাসরিন, দাঁড়ি পাল্লা ধমাধম, দিগম্বর-পয়গম্বর, সানতুনু মহাপাত্র, অগ্নিবীন, আল্লামা শয়তান (মশিউর রহমান), সানতুনু আদিম, প্যানগান দেবতা এবং হিন্দু যোদ্ধা নামের ব্লগারদের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে তার তর্ক-বিতর্ক হয়। এদের মধ্যে তিনি আসিফ মহিউদ্দিনকে হত্যার হুমকিও দেন। সেখানেও ছিল ইসলাম ধর্মকে অবমাননার অভিযোগ। এদিকে ফারাবীর বিরুদ্ধে রয়েছে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগও। তিনি ইসলাম ধর্মের কথা বলে ধর্মভীরু মেয়েদের কাবু করার চেষ্টা করতেন। কেউ তার ফাঁদে পা দিলে তিনি কৌশলে তার থেকে টাকা পয়সা দাবিও করতেন। শুধু মেয়েদের কাছ থেকে নয়, এ ফারাবী বিভিন্ন কৌশলে আরও অনেকের কাছ থেকেই অর্থ আদায় করত বলে অভিযোগ রয়েছে।
×