ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনার ননি ও তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ মার্চ ২০১৫

নেত্রকোনার ননি ও তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেত্রকোনার মুসলীম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটসহ ৬ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে এই দুই অপরাধীর বিচার শুরু হলো। অভিযোগ গঠন করে সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ৫ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত মহেশখালীর দুই রাজাকারকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। এদিকে আইসিসির ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস কে স্টুয়ার্ড সোমবার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। বিচার বিষয়ে তিনি সন্তেুাষ প্রকাশ করেছেন। আতাউর রহমান ননি ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটসহ ৬ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল জানান, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অপরাধের অভিযোগে ননি ও তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিচার শুরু হলো। ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা কাঞ্চন বাদী হয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ননি ও তাহেরসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এ দুই আসামিকে গ্রেফতারের করে ১৩ আগস্ট তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ৫ নবেম্বর একটি মামলার আসামি ওবায়েদুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননির বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই দুই রাজাকারের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটের মোট চারটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট। ১৫ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হত্যা, প্রায় সাড়ে ৪শ’ বাড়িঘরে লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ। তদন্ত সংস্থা চারটি অভিযোগ থেকে প্রসিকিউশন যাচাই বাছাই করে পরবর্তীতে ছয়টি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ চার্জ-১ : একাত্তরের ১৭ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে রাজাকাররা নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা থানার বাউসী বাজার থেকে ফজলুর রহমান তালুকদারকে অপহরণ করে। এরপর নেত্রকোনা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় নির্যাতনের পর ত্রিমোহনী ব্রিজে হত্যা করে। হত্যাকা-ের পর বাউসী বাজারের ৪০০-৪৫০টি দোকান ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। চার্জ-২ : ৪ অক্টোবর ১৯৭১, সকাল আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডস্থ শ্রী শ্রী জিউর আখড়ার সমানের রাস্থা থেকে আসামিরা কৃতী ফুটবলার দাবির হোসেনকে অপহরণ করে। এরপর নির্যাতন চালিয়ে মোক্তারপাড়া ব্রিজের নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। চার্জ-৩ : ২৯ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা অনুমান সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা বারহাট্টা থানার লাউফা গ্রামে মশরফ আলী তালুকদারসহ ১০ জনকে অপহরণ করে ঠাকুরাকোনা ব্রিজে ৭ জনকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। চার্জ-৪ : রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার আতাউর রহমান ননি ও অন্য রাজাকাররা শহরের মোক্তার পাড়ায় মলয় বিশ্বাসের বাড়ি এবং এ্যাডভোকেট শ্রীষ চন্দ্র সরকারের বাড়ি দখল, মানসিক নির্যাতন ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। চার্জ-৫ : ১৫ নবেম্বর ১৯৭১ সকাল ১১টার দিকে আসামিরা বিরামপুর বাজার থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বাদিউজ্জামান মুক্তসহ ৬ জনকে অপহরণ করে। এরপর লক্ষ্মীগঞ্জ ও মোক্তারপাড়া ব্রিজে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। চার্জ-৬ : অক্টোবরের মাঝামাঝি শিক্ষক কামিনী চক্রবর্তীসহ ২৭ জনকে হত্যা। তাদের নেত্রকোনা জেলগেট থেকে ধরে এনে নেত্রকোনা ত্রিমোহনী ব্রিজের কাছে নিয়ে হত্যা করা হয়।
×