ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২ মার্চ ২০১৫

অগ্নিঝরা মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যাঁরা, আমরা তোমাদের ভুলব না...’। একাত্তরের রণাঙ্গনের সাড়াজাগানিয়া এই অমর গানটি আবারও বেজে উঠেছে বাঙালীর হৃদয়ে। মাসজুড়ে নানা কর্মসূচীতে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রের স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, একাত্তরের বীর শহীদদের। একই সঙ্গে ঘৃণা-ধিক্কার জানাবে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ও তাদের দোসরদের। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালী তার আত্মপরিচয়ের সন্ধান পেল যে মাসে, তার নাম মার্চ। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ। কয়েক শতাব্দীর ঔপনিবেশিক দুঃশাসনের পাথার পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে ‘পাকিস্তান’ নামে বাঙালীর ভাগ্যে যা জুটেছে, তা ভিন্নরূপে আরেক অপশাসন, নির্যাতন আর বঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। বাঙালী জাতি ওই শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পেতে নেমে পড়ে রাজপথে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সীমাহীন দেশপ্রেম, তুলনাহীন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, অসীম সাহস, দুরদর্শিতা আর দৃঢ় নেতৃত্বে এই পলল ভূখ-Ñ একাত্তরের মার্চে এসে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অগ্নিঝরা মার্চের দ্বিতীয় দিন আজ। একাত্তরের এই দিনে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক বিক্ষুব্ধ জনপদে। এদিন ওড়ানো হয়েছিল মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। এর আগের দিন ১ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন শাসক ইয়াহিয়া খান এক ফরমানের মাধ্যমে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেন। তার সেই অবৈধ এবং স্বৈরাচারী ঘোষণার মাধ্যমে বাঙালী জাতির কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করা ছাড়া অধিকার আদায়ের আর কোন বিকল্প নেই। পাকিস্তানী শাসকদের এই মনোভাবের বিস্ফোরণ ঘটেছিল ২ মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র এ দিন বটতলায় এসে জমায়েত হন। বটতলার সমাবেশে ইয়াহিয়ার স্বৈরাচারী ঘোষণার ধিক্কার জানানো হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। বটতলার ঐতিহাসিক সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আসম আবদুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাটি উত্তোলন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস এই পতাকাই বিবেচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে। এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ডাকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আহূত ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল করার প্রস্তুতি চালায় আওয়ামী লীগ। আর এ জনসভাকে কেন্দ্র করে মুক্তিপাগল বাঙালীর মধ্যে এক অন্য ধরনের গণজাগরণের সৃষ্টি হয়। পাক হানাদার বাহিনীর কর্তাব্যক্তিদের ললাটেও তখন চিন্তার বলিরেখা। ওই জনসভায় বঙ্গবন্ধু কি স্বাধীনতার ডাক দেবেন? দিলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবেÑ এ নিয়ে পুরো পাকিস্তানেই তোলপাড় চলছিল। একদিকে জনসভার প্রস্তুতি, অন্যদিকে গোটা বাংলাদেশেই উত্তাল আন্দোলন-বিক্ষোভে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রতিটি বাঙালীর চোখে-মুখে একই প্রত্যাশা পাকিস্তানী দখলদারদের হটিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ছিনিয়ে আনা। আর সেই লক্ষ্যে পূরণেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালীর দামাল ছেলেরা সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২ মার্চ স্বাধীনতার প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলÑ জেএসডি নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠন মোমবাতি প্রজ্বলন, শপথ গ্রহণসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে মার্চ মাসের মাসব্যাপী কর্মসূচী শুরু করে।
×