ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রামে তথ্য প্রদানকারীরা উৎকণ্ঠায়

পরিচয় গোপন থাকছে না নাশকতা-তথ্যদাতাদের

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পরিচয় গোপন থাকছে না নাশকতা-তথ্যদাতাদের

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ গাড়িতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের ধরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখার কথা থাকলেও তা প্রকাশ্যে চলে আসছে। এতে ভবিষ্যতে তথ্য প্রদানকারী বা তার পরিবারের ওপর হামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সিএমপির পক্ষ থেকে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়া হয়েছে এবং সাহসিকতার পরিচয় প্রকাশ হওয়াকে শ্রেয় মনে করা হচ্ছে। কারণ, সাহসী যোদ্ধার মৃত্যু একবারই হয়। সোমবার সিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে খুলশী থানা এলাকার চার ব্যক্তি এ ধরনের সাহসিকতার আর্থিক পুরস্কার নিয়ে তা চমেক বার্ন ইউনিটে মৃত্যু শয্যায় থাকাদের চিকিৎসার্থে প্রদান করেছেন। এদিকে, র‌্যাব সেভেনের পক্ষ থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি হেলিকপ্টারযোগে নাশকতাপ্রবণ এলাকায় লিফলেট ছাড়া হয়েছে। ঐ তথ্য প্রদানকারীদের রক্ষায় লিফলেটে পুরস্কারের পাশাপাশি পরিচয় গোপনের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। উভয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দু’ধরনের নীতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, সরকারের পক্ষ থেকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীকে হাতেনাতে বা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ধরিয়ে দিতে পারলে একলাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নাশকতাকারীকে ধরিয়ে দিলে তথ্য গোপন থাকবে নাকি প্রকাশ হবে এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ। কারণ, যা আগামী রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটলে তথ্য প্রদানকারীরা রোষানলে পড়বে কিনা তা উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। এ ব্যাপারে সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, যারা সাহসী তাদের মৃত্যু একবারই হয়। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছেন তারা। এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা এক ধরনের সম্মানী। তবে আগামীতে সনদ প্রদানের মাধ্যমেও সাহসীদের উৎসাহী করে তোলার চিন্তা ভাবনা চলছে। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় সিএমপির ১৬ থানায় মোট ৭৮ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় চিহ্নিত নাশকতাকারী হিসেবে ১ হাজার ৮৭৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭৩ জনকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্য থেকে ১০ জন চট্টগ্রাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল কবির গ্রেফতারের পর চট্টগ্রামের পতেঙ্গা জোনে থাকা জ্বালানি তেলের ডিপো ও শোধনাগারে নাশকতা চালানোর তথ্য ও পরিকল্পনা উদঘাটন হয়। এ বিষয়ে শিবিরের এনামুল কবিরসহ ৩ জনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে সিএমপিতে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ও দেশব্যাপী নাশকতার তথ্য উদঘাটনে চারটি কমিটিও গঠিত হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। শুধু তাই নয়, তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযানও চালাচ্ছে পুলিশ। এদিকে, গত সোমবার সিএমপি কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং শেষে নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেয়ার সাহসিকতায় খুলশী থানা এলাকার ৪ জনকে নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরা হলোÑ মোস্তফা আমিন, আবদুল মান্নান, শহীদুল ইসলাম জুয়েল ও নাসিম। মোস্তফা আমিন জানান, গত ১০ ফেব্রুয়ারি খুলশী থানা এলাকায় ডিজেল কলোনি থেকে ২ জন নাশকতা চালানোর চেষ্টা করলে তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়। শহীদুল ইসলাম জুয়েল জানান, গত ২ ফেব্রুয়ারি রুবেল নামের একজনকে ডিজেল কলোনি এলাকায় ৩টি বোমাসহ পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়। বয়োবৃদ্ধ নাসিম ককটেলসহ মনির নামের একজনকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খুলশী থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। আবদুল মান্নান গত ১৮ জানুয়ারি গরিবুল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় সোহেল রানা নামের একজনকে ৯ ককটেলসহ পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছেন। তবে ঐ সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে থেকে ১০/১২ জনকে ধাওয়া করেছিল। কিন্তু ধরতে পারেনি বলে জানিয়েছেন পুরস্কারপ্রাপ্ত মান্নান। সিএমপি কমিশনার তাদের প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন। তবে চারজনই তাদের টাকা পুলিশের মাধ্যমে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসারতদের প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে চসিকের ১৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরণ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আগামীর কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগের ছেলেরা বাসায় বসে নেই। তারা নাশকতাকারীদের দমনে রাস্তায় রয়েছে। ফলে পুলিশের হাতে সোপর্দ করতে দ্বিধাবোধ করেনি পুরস্কারপ্রাপ্তরা। সরকার পরিবর্তনের বিষয় নয়, বরং নাশকতাকারীদের দমন করাই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কাজ। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের পক্ষ থেকে নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে এমনকি হাতেনাতে ধরিয়ে দিতে পারলে একলাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সাহসিকতার পরিচয় দেয়া এ চার ব্যক্তিকে কেন মাত্র ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হলো তা প্রশ্নবিদ্ধ। অপরদিকে, র‌্যাব সেভেনের লিফলেট থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ছবি মোবাইলে অথবা ক্যামেরায় ভিডিও চিত্র ধারণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরবরাহ করলে ১০ হাজার টাকা, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীর সঠিক তথ্য প্রদান করলে ২০ হাজার টাকা, হাতেনাতে ধরিয়ে দিতে পারলে ২৫ হাজার টাকা, পেট্রোলবোমা পরিকল্পনাকারী বা নিক্ষেপকারী সংগঠনের তথ্য র‌্যাবকে দিতে পারলে ৫০ হাজার টাকা এবং এ ধরনের পরিকল্পনাকারী ও নিক্ষেপকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে র‌্যাব সেভেনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম, ফেনী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলায় লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। ঐ লিফলেটে র‌্যাব সেভেনের পাবলিক রিলেশন কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার (০১৭৭৭৭১০৭০৩) সন্নিবেশিত রয়েছে।
×