ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বরেকর্ড-২১৫ রান (১৪৭ বল), ১ বাউ-ারি, ১৬ ছক্কা

বিশ্বকাপে বিশ্ব কাঁপিয়ে দিলেন গেইল

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিশ্বকাপে বিশ্ব কাঁপিয়ে দিলেন গেইল

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের নতুন রেকর্ড গড়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। মঙ্গলবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ১৪৭ বলের ইনিংসটি ১০টি চার ও ১৬টি ছক্কার মার। বিশ্বকাপে এটাই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান ও প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির প্রথম ঘটনা। রেকর্ড গড়ে গেইলের ফর্মে ফেরা দিনে নির্ধারিত ৫০ ওভারে তার দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২ উইকেটে ৩৭২ রানে পাহাড় গড়ে। রেকর্ড পার্টনারশিপ জুটির পথে সেঞ্চুরি তুলে নেন সঙ্গী মারলন স্যামুয়েলসও। ইনিংসের শেষ বলে গেইল আউট হলেও ১৫৬ বলে ১১ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন স্যামুয়েলস। বেশ কিছুদিন ফর্মে নেই। বিশ্বকাপে আগের দুই ইনিংসে করেন ৩৬ ও ৪ রান। গেইলকে নিয়ে তাই কথা হচ্ছিল। সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ তারকা। সমালোচকদের জবাব দিয়ে ফিরলেন নিজের মতো করে। গড়লেন রেকর্ডও। কেবল ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসই নয়, গেইলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের দিনে স্যামুয়েলসের সঙ্গে জুটিতে সর্বোচ্চ রানসহ রেকর্ড হয়েছে বেশ কয়েকটি। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলার পথে ব্রায়ান লারার (১০,৩৪৮) পর দ্বিতীয় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে ৯ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন গেইল (৯,১৩৬)। ২৬৬তম ওয়ানডেতে এটি তার ২২ নম্বর সেঞ্চুরি ইনিংস। বিশ্বকাপে আগের সর্বোচ্চ ছিল গ্যারি কার্স্টেনের। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে রাওয়ালপিন্ডিতে আরব আমিরাতের বিপক্ষে ১৮৮ রানে অপরাজিত ছিলেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা। ১৮৩, ১৮১ ও ১৭৫* রান নিয়ে রেকর্ডের তালিকায় পরের তিনটি স্থানে আছেন যথাক্রমে সৌরভ গাঙ্গুলী (১৯৯৯), ভিভ রিচার্ডস (১৯৮৭) ও কপিল দেব (১৯৮৩)। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে গেইলের ইনিংসটা ঠিক তার মতো ছিল না। সাধারণত শুরু থেকেই প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে থাকেন ৩৫ বছর বয়সী জ্যামাইকান তারকা ব্যাটসম্যান। ফর্মে ফিরতে কাল শুরু করে দেখেশুনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিল্ডার ও বোলারদের বদান্যতায় একাধিকবার জীবনও পান, যেটির সদ্ব্যবহার করেন রেকর্ড গড়ে! ২৬ বলে ২৪ রান করা গেইল হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৫১ বলে, ৪ চার ও ২ ছক্কায়। এমনকি সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতেও ছিলেন ধীরস্থির। ১০৫ বলে সেঞ্চুরি পূরণের পথে চার ও ছক্কা মারেন সমান ৫টি করে। সেই তিনিই ২১৫ রানে শেষ করেন ১৪৭ বলে! ভয়ঙ্কর মূর্তিটা ফুটে ওঠে তখনই। যেখানে চারের চেয়ে ছক্কা বেশি (এবি ডি ভিলিয়ার্স ও রোহিত শর্মার সঙ্গে রেকর্ড ১৬টি ছক্কা), সেই ইনিংস কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে মাঠে উপস্থিত ও টিভির সামনে দর্শকরা তা দেখেছেন। পরের শতরান যোগ করার পথে গেইলের ব্যাটিংকে হাইলাইটস বলেই ভ্রম হয়েছে। গোটা ইনিংস ছিল গেইলের কীর্তিগাথায় ভরপুর। বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, ওয়ানডেতে যৌথভাবে সর্বাধিক ছক্কার মার, একই দিনে ক্যারিবিয়ান তারকা প্রবেশ করেছেন ৯ হাজারি রানের ক্লাবেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইতিহাসের জৌলুস বাড়িয়েছেন আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। শুরুতে চেনা গেইল ছিলেন খুবই শান্ত, ক্লেসিক্যাল। খেলেছেন মধ্য ব্যাটে, মাঝে মধ্যে অবশ্য খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসে ছক্কাও হাঁকিয়েছেন। এভাবেই পেরিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির কোটা, অতঃপর তুলে নিয়েছেন ২২তম সেঞ্চুরি। ১০৫ বলে। এরপরই রক্ষনাত্মক খোলসটাকে একেবারে ছুড়ে ফেলে স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছেন তিনি। স্যামুয়েলস অন্যপ্রান্তে কেবল যোগ্য সহায়তাই দিয়েছেন। আর চেনা গেইল একের পর এক ছক্কায় ভাসিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। ১০০ থেকে ২০০ রানে পৌঁছাতে মাত্র ৩৩ বল খেলেছেন, ১৩৮ বলে গড়েছেন দ্রুততম ডাল সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ডও! আগের দ্রুততম ছিল শেবাগের ১৪০ বলে। একে একে নিজের ক্যারিয়ার সেরা, এরপর বিশ্বকাপের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরিসহ অনেক কিছু। পেছনে ফেলেন গ্যারি কার্স্টেনের ১৮৮ রানের রেকর্ড। ভারতীয়দের বাইরে প্রথম কোন ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান গেইল। ওয়ানডে ইতিহাসে এটি পঞ্চম ডাবল সেঞ্চুরি। আগের চারটিই ভারতীয়দের। যার মধ্যে দুটি আবার রোহিত শর্মার। গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরের সৌজন্যে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরি দেখেছিল ওয়ানডে ক্রিকেট, গোয়ালিয়রে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পরের বছর ২০১১ সালে বীরেন্দর শেবাগ ২১৯ রান করে শচীনকে পেছনে ফেলেন, ২০১১ সালে ইন্দোরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ২০১৩ সালের নবেম্বরে ব্যাঙ্গালোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় ভারতীয় হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি (২০৯) হাঁকান রোহিত শর্মা। এক বছরের ব্যবধানে গত নবেম্বরে কলকাতায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬৪ রানের অতিমানবীয় ইনিংস। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দু-দুটি ডাল সেঞ্চুরির পাশাপাশি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড হিসেবে রোহিতের সেই ইনিংস এখনও টিকে আছে। গেইলের দানবীয় ব্যাটিংয়ের কাছে চাপা পড়ে গেছে স্যামুয়েলসের সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পাশাপাশি ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ১৩৩ রান করেন তিনি। আগে তার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছিল অপাজিত ১২৬। গেইলের সর্বোচ্চ ছিল অপাজিত ১৫৩। তবে কাল জুটিতে রেকর্ড হয়েছে ঠিকই। দু’জনে মিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তুলেছেন ৩৭২ রান। বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসে যে কোন জুটিতেই সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড এটি! বিশ্বকাপে আগের সর্বোচ্চ ৩১৮ রানের জুটি ছিল সাবেক ভারতীয় জুটি রাহুল দ্রাবিড় ও সৌরভ গাঙ্গুলীর, ১৯৯৯-এ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সর্বোপরি ওয়ানডেতে আগের সর্বোচ্চ জুটি ৩৩১ রানের, শচীন ও দ্রাবিড়ের, ১৯৯৯-এ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। রেকর্ড ইনিংসে সন্তোষ প্রকাশ করে গেইল বলেন, ‘কিছুদিন রানের মধ্যে না থাকায় অনেক কথা শুনতে হয়েছে, বিশেষ করে বিশ্বকাপ সামনে রেখে। আত্মবিশ্বাস ছিল ফিরতে পারব। বিশ্বকাপে এমন একটি ইনিংস খেলতে পেরে ভাল লাগছে। যদিও শেষ বলে আউট হওয়াটা দুঃখজনক!’
×