ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাণিজ্যের উদারীকরণ মেনেই নতুন আমদানি নীতি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাণিজ্যের উদারীকরণ মেনেই নতুন আমদানি নীতি হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ উদারীকরণ বাণিজ্য নীতির ওপর বিশ্বাস রেখে আমদানি নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। আর রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে রফতানি নীতি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ২০১৫-১৮ তিন বছরের জন্য আমদানি-রফতানি নীতিমালা এখন প্রায় চূড়ান্ত। ইতোমধ্যে আমদানি-রফতানি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি বৈঠক করেছে। আগামীতে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও সচিবের নেতৃত্বে আরও ২টি বৈঠক করা হবে। ওই বৈঠকের পর নীতিমালা দুটো মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী জুন মাসের মধ্যেই। আগামী ৩০ জুন আমদানি ও রফতানি নীতিমালা ২০১২-১৫ মেয়াদকাল শেষ হয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে নতুন নীতিমালা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্রমতে, আমদানি-রফতানি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের মতামত ও সুপারিশ গ্রহণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমনভাবে রফতানি নীতিমালা করা হয়েছে যাতে দেশীয় শিল্প বিকাশের পথ আরও সুগম হয়। রফতানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে নতুন নীতিমালায়। এছাড়া নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফরমালিন আমদানিতে কঠোর বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে আমদানি নীতিমালায়। যদিও অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত ফরমালিন আমদানি বন্ধে ইতোমধ্যে আইন করেছে সরকার। আমদানিকারকদের স্বার্থও যাতে বিঘিœত না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে সরকার। বর্তমান সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান ও আয়ের ব্যবস্থা করা যাতে চলতি বছরের মধ্যে দারিদ্র্যতার হার বর্তমান স্তর থেকে অর্ধেকে নামিয়ে আনা যায়। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের রফতানি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ২০১৫-১৮ তিন বছরের জন্য নতুন আমদানি-রফতানি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন নীতিমালায় জনস্বার্থ অক্ষুণœ রেখে স্টেক হোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় বিষয়টি নজরে নিয়েছে সরকার। আমদানি-রফতানি নীতিমালা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে দেশীয় শিল্পের বিকাশ হয়। এছাড়া যারা আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাচ্ছেন তারা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে ২০১৫-১৮ তিন বছরের জন্য আমদানি-রফতানি নীতিমালা কার্যকর হবে। এর আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পাবে নতুন নীতিমালা। এদিকে, নতুন নীতিতে রফতানিমুখী শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো, কমপ্লায়েন্স ও স্ট্যান্ডার্ড সংক্রান্ত বিষয়গুলো যথাযথ প্রতিপালন, পণ্যের গুণগতমান উন্নয়ন, পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ, রফতানিকারকদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ ব্যয় কমাতে তথ্য প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া নতুন রফতানি নীতিতে সেবা খাতকেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে নতুন রফতানি নীতিতে শ্রমঘন শিল্পের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং সব রফতানিমুখী শিল্পের জন্য ব্যাংক ঋণের সুদহার কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। তাঁরা বিদ্যমান রফতানি নীতির কয়েকটি ধারার পরিবর্তনও চেয়েছেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এমসিসিআই, বেসিস, বিএফএফইএ, বাংলাক্রাফট, দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা তাদের মতামত পাঠিয়েছেন। রফতানি খাতকে আরও গতিশীল করতে ব্যাংকের সুদহার কমানো, চিংড়িসহ হিমায়িত খাদ্যপণ্যে নগদ সহায়তা দেয়া, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য বহুমুখীকরণে নীতি গ্রহণ, বিমানবন্দর এলাকায় হিমাগার প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, রফতানিমুখী শিল্পকে প্রাধান্য দিয়ে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমদানি নীতিতে বেশকিছু পরিবর্তন আসছে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগতমান, শিল্পায়ন ও রফতানি বৃদ্ধিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় ক্ষতিকর পদার্থ আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারে অবাধ প্রযুক্তি আমদানির সুযোগ থাকছে। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা অধিক শিথিল করাসহ শিল্পের কাঁচামাল সহজলভ্য করা ও পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধির সুযোগ থাকছে এ নীতিতে। জানা গেছে, অধিকতর উদারমুখী, প্রতিযোগিতার সহায়ক এবং ব্যবসা বান্ধব করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে নতুন আমদানি নীতিতে। পণ্য ও সেবার চলাচল, গুণগতমান ও স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য যৌক্তিক মূল্যে সরবরাহ এবং বিশ্ববাজার অর্থনীতির আদর্শ ও উদ্দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পণ্য ও সেবার আন্তর্জাতিক চলাচলের ওপর আরোপিত প্রতিবন্ধকতা যথাসম্ভব দূর করে ভোক্তার নিকট ন্যায্যমূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, নিরাপত্তা, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিধি-বিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমদানির ক্ষেত্রে সীমিত সংরক্ষণনীতি অনুসরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
×