ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্কুল ব্যাংকিং

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

স্কুল ব্যাংকিং

আগে অনেকেই বাঁশের খুঁটিতে টাকা জমাত। কেউ কেউ মাটির ব্যাংকেও টাকা জমিয়েছে। সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অনেক বাবা-মা এমন প্রক্রিয়ায় টাকা জমাতেন। সময়ের বিবর্তনে সেই সঞ্চয়ের ধরন পাল্টেছে। এখন সামান্য কয়েক টাকায় একজন শিক্ষার্থীও তার নামে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন। ‘স্কুল ব্যাংকিং’ নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রকল্পটি এখন শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানকে ব্যাংক হিসাবের খাতা খুলে দিচ্ছেন। দেশে চালু ৫৬ ব্যাংকের মধ্যে ৪৯টিতে স্কুল ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে। যদিও এই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ভূমিকা আশানুরূপ নয়। এখন পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোই এগিয়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আগ্রহ ও সহযোগিতা যেভাবে প্রত্যাশিত ছিল সেটা এখনও সম্ভব হয়নি। জানা যায়, ২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও স্কুলের শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। ওই বছরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের ব্যাংকগুলোতে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আমানত রাখে। চার বছরের ব্যবধানে ক্ষুদে সঞ্চয়ীদের ব্যাংক হিসাবে জমা পড়েছে ৭১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০ শিক্ষার্থী এ্যাকাউন্ট খোলে। গত ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার ৩০৩টি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সক্রিয় হলে এই সংখ্যা আরও সমৃদ্ধ হতে পারে তাতে কোন সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্য সঞ্চয়ের মাধ্যমে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। আপাতত এ ক্ষেত্রে সফলও বলা যায়। গত চার বছরে এর বিস্তৃতি রীতিমতো বিস্ময়কর। ৬ থেকে ১৮ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীরা স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খুলতে পারছে। জানা গেছে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব থেকে স্কুলের বেতন বা পরীক্ষার ফি ট্রান্সফার করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এমনকি স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাব পরবর্তী সময়ে অন্য হিসাবে রূপান্তর করা যাবে। দেশের মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশই স্কুল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সেই উদ্যোগের বিষয়টি এখনও মূলত শহরকেন্দ্রিক। গ্রামে বা মফস্বলে এই উদ্যোগের তেমন প্রসার ঘটেনি। অনেক শিক্ষার্থী বা তার অভিভাবক এখনও জানেন না এই সেবা সম্পর্কে। ব্যাংকগুলোর সেভাবে প্রচারণাও লক্ষ্য করা যায় না। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় পর্যায়ের ব্যাংক শাখাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ের ব্যাংকগুলোকেও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারে। ব্যাংকিং যে শুধু বড়দের জন্যই নয়, স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েও এই কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারে উল্লিখিত পরিসংখ্যান তার দৃষ্টান্ত। অর্থনীতিকে টেকসই করে তুলতে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা সঞ্চয়ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সঞ্চয়ের অভ্যাস ছেলেমেয়েদের মনে এনে দেবে আর্থিক শৃঙ্খলা- যা তাদের সুশৃঙ্খল জীবন গঠন এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহায়ক হবে।
×