ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মমতার সফর প্রত্যাশা ও সংশয়

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মমতার সফর প্রত্যাশা ও সংশয়

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশে দু’দিনের সফর শেষে ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে কলকাতা ফিরে গেছেন। অপ্রিয় কিছু বিষয় আলোচনায় না এনে মমতা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের আন্তরিক আতিথেয়তা প্রদানে কোন কার্পণ্য করেনি ঢাকা। তাঁর এই সফর যত না সরকারী ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল শুভেচ্ছার। ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে না এসে, তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করে এবং সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে জামায়াতে ইসলামী এবং জঙ্গী মৌলবাদীদের বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা অস্বীকার করে মমতা তাঁর দল ও সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের যে দূরত্ব সৃষ্টি করেছিলেন এ সফরের পর তা অনেকখানি কমেছে। ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার অধিকাংশ জাতীয় দৈনিকে ঢাকায় মমতার শুভেচ্ছা সফরের সংবাদ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বেরিয়েছে। মমতার কাছে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার যে শিখাটি নিভে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তাঁর এই সফর সেটিকে যথেষ্ট উস্কে দিয়েছে। মমতার বক্তব্যই অধিকাংশ দৈনিকে শিরোনাম হয়েছে। মমতা বলেছেন, ‘তিস্তার পানি নিয়ে চিন্তা করবেন না।’ বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে তাঁর ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন। তবে দৈনিক ‘কালের কণ্ঠে’র শিরোনাম ছিল ভিন্ন ধরনের। ‘তিস্তা ইস্যুতে মমতার অবস্থান ধোঁয়াটে!’ শিরোনামে ঢাকার অন্যতম দৈনিক ‘কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ ‘বহুল প্রত্যাশিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে ‘ইতিবাচক’ মনোভাব ব্যক্ত করলেও এটি স্বাক্ষরের আগে কারিগরি কিছু বিষয় (টেকনিক্যাল ইস্যুজ) সমাধান হওয়া জরুরী বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, পানির ওপর নির্ভরশীল উভয় দেশের জনগোষ্ঠীর স্বার্থ ও কল্যাণ নিশ্চিত করতেই এটি জরুরী। ‘গতকাল শনিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানান। তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ ও বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা রক্ষা করে চুক্তি হলে তাঁর আপত্তি নেই। এতে তিস্তা ইস্যুতে মমতার অবস্থান ধোঁয়াটেই রয়ে গেল। কারণ প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার তিস্তার পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে দুই দেশের জন্য যে পরিমাণ পানিকে ন্যায্য হিস্যা নির্ধারণ করে চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছিল তাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা হয় না বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন। এখন তিনি ওই ফর্মুলাতে রাজি, নাকি সেখান থেকে সরে এসে নতুন করে ফর্মুলা নির্ধারণ করলে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা হবে তা স্পষ্ট নয়। গতকাল রাতে ঢাকা ছাড়ার সময় তিনি বলেছেন, তিস্তা সমস্যাটি প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দিতে আবার তিনি এও বলেছেন, ‘দিদির (শেখ হাসিনা) জন্য সব করতে পারি।’ (কালের কণ্ঠ, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। ঢাকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তিন দিনের সফরের পর ভারতীয় দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছেÑ সীমান্ত চুক্তিকে সমর্থন করায় মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর তিস্তার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানিয়েছেন, কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে তিস্তা চুক্তি করা হবে। এ ছাড়া জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দুই দেশের নেত্রী তাঁদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্তে আধঘণ্টা কথা হয়েছে। মমতা জানিয়েছেন, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া লোকসভা অধিবেশনে সীমান্তচুক্তির অনুমোদন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে তিনি সব সময় ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করবেন বলে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি। বাংলাদেশ আমারও দেশ। বাংলাদেশের স্বার্থকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। দু’দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখব।’ (জনকণ্ঠ, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) তিস্তাসহ বাংলাদেশ ও ভারতের ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন সম্পর্কে আমরা সব সময় বলেছি, দুটি বন্ধুরাষ্ট্র আন্তরিক হলে যে কোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মৈত্রীর রক্তবন্ধন রচিত হয়েছে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তাঁর সরকার, ভারতের সশস্ত্রবাহিনী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণ যে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন বাংলাদেশ সব সময় তা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের ভেতর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশে এসেছিলেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাজ্যসমূহের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে। কথা ছিল মমতাও আসবেন। মমতা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ ও উচ্ছ্বাস তখন হিমালয়ের উচ্চতায় অবস্থান করছিল। সবাই নিশ্চিত ছিলেন এই ঐতিহাসিক সফরে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ঢাকা ও দিল্লী সেভাবেই দলিলপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছিল। শেষ মুহূর্তে মমতা ঢাকা সফর বাতিলের পাশাপাশি তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করে দুই দেশের সরকারকে যেমন বিব্রত করেছেন, একই সঙ্গে হতাশ করেছেন মমতার প্রতি দুর্বল বাংলাদেশের আমজনতাকে। তিস্তাপারের কোটি মানুষের আকাশসমান আশা তলিয়ে গিয়েছিল হতাশার অতল গহ্বরে। পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেসকে ব্যবহার করে জামায়াত ও জঙ্গী মৌলবাদীরা যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলায় বাংলাদেশবিরোধী ঘাঁটি বানিয়েছে, শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাতের জন্য বোমা ও অর্থ পাঠিয়েছে এদেশী জেহাদী ভাইদেরÑ মমতা সম্পর্কে হতাশা গভীর থেকে আরও গভীরতর হয়েছে। তবে মমতা জানেন কিভাবে মানুষের মন জয় করতে হয়। ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে তাঁর উচ্ছ্বাস জামায়াত-বিএনপি জোটকে অখুশি করলেও সবাই এটি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। ঢাকার মাটিতে পা রেখেই মমতা বলেছেন, ‘জয় বাংলা’Ñ যে সেøাগান বাংলাদেশে জামায়াত এবং তাদের সহযোগীদের গায়ে সব সময় জ্বালা ধরায়। মমতার আসার আগে মৌলবাদীদের পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। মমতার সফরসঙ্গীদের তালিকায় তাঁর রাজ্যসভার বিতর্কিত সদস্য হাসান আহমেদ ইমরানের নামও ছিল, যার জামায়াত ও জঙ্গী সম্পৃক্তি সম্পর্কে দুই দেশের কাগজে গত ছয় মাসে কম লেখা হয়নি। বিষয়টি ঢাকা ও দিল্লীর জন্য যে অত্যন্ত অস্বস্তিকর ছিল সেটিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেনÑ মমতার সফরসঙ্গীদের ভেতর ইমরান থাকলে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে নেতিবাচক বার্তা প্রদান করা হবে। জামায়াতপন্থী পত্রিকায় লেখা হয়েছে ইমরানকে বাদ দিতে বললে মমতা তাঁর ঢাকা সফর বাতিল করতে পারেন। মমতা জানেন শেখ হাসিনার সরকার ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের শুধু বিচারেরই উদ্যোগ নেয়নি, সন্ত্রাস ও জঙ্গী মৌলবাদের জন্মদাতা হিসেবে দলটিকে নিষিদ্ধ করার কথাও বিবেচনা করছে। শেষ মুহূর্তে ইমরানকে সফর তালিকা থেকে বাদ দিয়ে যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। ইমরান সঙ্গে থাকলে ঢাকায় মমতা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা যে আন্তরিক আতিথেয়তা পেয়েছেন সেটি যান্ত্রিকতায় পর্যবসিত হতো। মমতার সফরসঙ্গীদের ভেতর পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি জগতের জনপ্রিয় তারকা ব্যক্তিত্বরা ছিলেন, যাঁদের নিয়ে বাংলাদেশেও উচ্ছ্বাস কম নয়। ভারতীয় দূতাবাসের সংবর্ধনায় মমতা যেমন সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার ‘এ্যাংকর’ হয়ে উপস্থিত অতিথিদের মাতিয়েছেন, প্রসেনজিতের সঙ্গে ছবি তোলার সারিতে আমাদের মন্ত্রীও ছিলেন। গান শুনিয়ে মন ভরিয়ে দিয়েছেন ইন্দ্রনীল আর নচিকেতা। সুচিত্রা সেনের কারণে মুনমুনকে নিয়েও এদেশের মানুষের উচ্ছ্বাস কম নয়। হালের নায়ক দেব ঢাকার তরুণদের মন জয় করেছেন। স্বাভাবিকভাবে এ ধরনের একটি শুভেচ্ছা প্রতিনিধি দলে ইমরানের মতো বিতর্কিত একজনের উপস্থিতি সফরের আবেদন ক্ষুণœ করত। ২২ ফেব্রুয়ারি জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় মমতার ঢাকা সফর সম্পর্কে তিনটি আইটেম আছেÑ ১) বাংলাদেশ ন্যায্য হিস্যার পানি পাবে ॥ শেখ হাসিনাকে মমতা, ২) ‘পানি এলে ইলিশ যাবেÑ মমতাকে সাফ জানালেন হাসিনা এবং ৩) অনেক ‘আশার দুয়ার খুলে’ ফিরে গেলেন মমতা’। এ দিনের জনকণ্ঠে শেষের পাতায় আরেকটি খবর ছাপা হয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য কম উদ্বেগজনক নয়। ‘সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার হতো বারিকের হাত ধরে’ শিরোনামে কলকাতা থেকে অভ্রনীল মুখোপাধ্যায় লিখেছেনÑ ‘সারদার জাল শহর থেকে গ্রামবাংলা হয়ে চোরাপথে কিভাবে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হাত ধরে তার প্রমাণ মিলল হাতেনাতে। বশিরহাটের তৃণমূল নেতা আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে বৃহস্পতিবার ইডি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জানার চেষ্টা করছে কিভাবে, কার মাধ্যমে, কতদিন ধরে সীমান্তে অন্যান্য পাচার কার্য ছাড়াও সারদার টাকা বাংলাদেশে পাঠানোর কাজে যুক্ত। এমনতিতেই বশিরহাট মহকুমার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় আব্দুল বারিক ছাড়া কোন ধুর সিন্ডিকেট চালানোর ক্ষমতা কারও নেই। গরু পাচার থেকে সোনা পাচারÑ সবই চলে তার মধ্যস্থতায়। বিএসএফ ও পুলিশের একাংশ বারিকের কথাতেই ওঠে-বসে। বারিকের দাদা নিজেও তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য। সেই সুবাদে জেলা ছাড়াও রাজ্যস্তরের বেশ কয়েক তৃণমূল নেতার সঙ্গেও তার ওঠা-বসা। এমনিতেই তৃণমূলের এক সাংসদের নাম জড়িয়ে বাংলাদেশে জামায়াত নেতার অভিযোগের সঙ্গে সারদার টাকা সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযোগও আছে।’ (জনকণ্ঠ, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) পদ্মার ইলিশ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মতো পশ্চিমবঙ্গে বাঙালীদেরও উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র চলচ্চিত্র ভাষ্য নির্মাতা গৌতম ঘোষও ছিলেন মমতার সফরসঙ্গীদের ভেতর। বাংলাদেশের লালনকে নিয়ে গৌতমের ‘মনের মানুষ’ তাঁকে অমর করে রাখবে। ঢাকা সফরকালে গৌতম একান্তে জানিয়েছেন, স্বাধীন বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছেন তিনি। গৌতম যদি এ ছবি বানাতে পারেন দুই দেশের মৈত্রীর বন্ধন নিঃসন্দেহে আরও নিবিড় হবে। মমতার সফরসঙ্গী গৌতম ও প্রসেনজিৎসহ কলকাতার ব্যবসায়ীরা ঢাকায় তাঁদের ব্যবসায়ী বন্ধুদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন, কিছু বিষয়ে সমঝোতাও হয়েছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রকে মমতা কিভাবে সহযোগিতা করেন এটি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে তিস্তাপারের জলবঞ্চিত কোটি মানুষসহ বাংলাদেশ। তবে মমতার সফর এ নিয়ে সংশয় পুরোপুরি কাটাতে পারেনি। একইভাবে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করলেও নির্দিষ্টভাবে পশ্চিমবঙ্গে জামায়াত-জঙ্গীদের সন্ত্রাসী বলয় নির্মূল করার জন্য মমতা কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন সেটিও বাংলাদেশের কাছে স্পষ্ট নয়। মমতার ঢাকা সফরের সময় দিল্লীতে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠকে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুধু দুই দেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরী। পশ্চিমবঙ্গে জামায়াত-জঙ্গীদের অবস্থানকে তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রের ষড়যন্ত্র হিসেবে না দেখে মমতা যদি দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের অন্তর্গত বিষয় বিবেচনা করেন, তাহলে তা দক্ষিণ এশিয়ার পৌনে দু’শ’ কোটি মানুষের জন্য মঙ্গলজনক হবে। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
×