ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল প্রায় স্বাভাবিক

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল প্রায় স্বাভাবিক

রাজন ভট্টাচার্য ॥ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দেশের চার বিভাগের আন্তঃজেলার ২৪ রুটে বাস চলাচল এখন মোটামুটি স্বাভাবিক। বাণিজ্যিক স্বার্থে বসে নেই বিএনপি-জামায়াতের পরিবহন ব্যবসায়ীরাও। তাদের বাসও নিয়মিত চলছে। প্রতিদিন প্রায় ৭০ ভাগ যানবাহন নিয়মিত টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। তবে অবরোধের পাশাপাশি হরতাল আতঙ্কে যাত্রী কম থাকার কথা জানান পরিবহন নেতারা। এদিকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানোর কারণে নাশকতার পরিমাণও আগের চেয়ে কম। মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ জেলায় এই টার্মিনাল থেকে বাস ছাড়ে। দিনে প্রায় সাড়ে ১২শ’ গাড়ি ছাড়ার কথা। হরতাল-অবরোধের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৮শ’ গাড়ি প্রতিদিন টার্মিনাল ছেড়ে যাচ্ছে। রাতেও ছাড়ছে গাড়ি। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহ ॥ পরিবহন মালিক সমিতি ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম। মহাসড়কের দু’পাশে জামায়াত-বিএনপিসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর বসতি সবচেয়ে বেশি। এ কারণেই যাত্রীবাহী বাসে সবচেয়ে বড় নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এই মহাসড়কে। জানা গেছে, বাস চলানোর ক্ষেত্রে শনির আখড়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি মনে করেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এই পয়েন্টে প্রায় দেড় শতাধিক মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের বেশিরভাগই বিএনপি-জামায়াতপন্থী। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার সংলগ্ন জগমোহানপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে সবচেয়ে বড় নাশকতার ঘটনা ঘটে। জামায়াত অধ্যুষিত এই এলাকায় বাসে পেট্রোলবোমায় আটজন নিহত হন। আহত হন ৩০ জনের বেশি। বিজিবি প্রহরা থেকে বাসটি কৌশলে বেরিয়ে গেলে পরে এ ঘটনা ঘটে। বাসটির চালক এখনও পলাতক। ধারণা করা হয়, পুরো ঘটনাটিই পরিকল্পিত, যার সঙ্গে যুক্ত আছেন চালক নিজেই। এছাড়াও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, মহিপাল, ফেনীসহ ১০টি পয়েন্টে নাশকতা বেশি হয়। চলছে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাসও ॥ বৃহত্তর চট্টগ্রাম-সিলেট-বরিশাল, খুলনা বিভাগে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আওতায় এসব গাড়ি নিয়মিত চলাচল করছে বলে জানা গেছে। মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, কুমিল্লা রুটের এশিয়া লাইনের মালিক জুলহাস, যিনি বিএনপি নেতা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তাঁর ব্যবস্থাপনায় গাড়ি নিয়মিত যাতায়াত করছে। তেমনি হানিফ পরিবহনের চলাচলও স্বাভাবিক। বিএনপি নেতা মামুনের নোয়াখালীর একুশে পরিবহন চলাচল ঠিক আছে। বিএনপিপন্থী পরিবহন নেতা বিজন বর্ধনের নোয়াখালীর ইকোনো পরিবহন চলছে নিয়মিত। ফেনীর টাইগার বাহিনীর প্রধান ও জাতীয় পার্টির নেতা হাজী আলাউদ্দিনের স্টার লাইন পরিবহন একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। ফেনী রুটে সবচেয়ে জনপ্রিয় এখন স্টার লাইন পরিবহন। বিএনপিপন্থী গ্রীণ লাইন পরিবহনের চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। রামগঞ্জের আল-বারাকা পরিবহনে বিএনপি নেতা রফিকের গাড়ি নিয়মিত চলছে। হবিগঞ্জগামী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের রানা এন্টারপ্রাইজও বসে নেই। পরিবহন নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দলের চাপে অনেক সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থী পরিবহন মালিকরা গাড়ি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু আর্থিক সঙ্কট ও ব্যাংকের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হলে বাস চালানো ছাড়া বিকল্প নেই। জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খরম আলী জনকণ্ঠকে বলেন, হরতাল-অবরোধে মানুষ আর কতদিন ঘরে বসে থাকবে? মানুষ তার প্রয়োজনেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাস্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। এ কারণে সড়ক-মহাসড়কে সহিংসতা কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে আগের চেয়ে যাত্রী সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পৃথিবীর কোথাও এমন নৃশংস আন্দোলনের নজির নেই।
×