ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদী বাঁচাতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নদী বাঁচাতে হবে

নদীবহুল বাংলাদেশের অসংখ্য নদী দূষণের শিকার হয়ে বিপন্ন-বিপর্যস্ত; মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণে বহু নদী ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বিশ্বের আর কোথাও এদেশের মতো এমন নদীহত্যার নজির নেই। বহির্বিশ্বে প্রকৃতির উপহার সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়। নদীকে প্রাণবন্ত, দূষণমুক্ত রাখা এবং তার প্রবাহ অবাধ রাখার জন্য রীতিমতো আইন প্রণয়ন হয়। সম্প্রতি জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে এককালের খরস্রোতা নদী ব্রহ্মপুত্রের মরণদশার যে চিত্র উঠে এসেছে তা উদ্বেগজনক। জানা যায়, নদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। ফসলী মাঠ আর ইটের ভাঁটিতে যেন রূপান্তরিত হয়ে গেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদীর দেহ বাঁক। পানি হ্রাস পাওয়ায় একদিকে যেমন ব্যাহত হচ্ছে নৌচলাচল, অন্যদিকে তেমনি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছে চাষাবাদ। ক্রমাগত পলি জমে ব্রহ্মপুত্রের নাব্য ক্রমশই কমে যাচ্ছে। রুগ্ন এ নদীর দু’পাড়ে অপরিকল্পিতভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে মাটি। ব্রহ্মপুত্রের ক্ষেত্রে যেটা ঘটছে তা রীতিমতো মারাত্মক। নদীর তীর দখল করে অবৈধভাবে জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব অংশের ব্রহ্মপুত্র নদের সেতুর দুই পাড়ে পাথর ক্র্যাশিং ও নদীতে মাটি ভরাট করে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে আসছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। শৈশবে পড়া রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতাটি মনে পড়ে যায় ব্রহ্মপুত্রের দিকে তাকালে। কবিতায় আছেÑ আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। চৈত্রের দাবদাহের কাল পেরিয়ে রুদ্র বৈশাখে শুধু ছোট নদী কেন, অনেক বড় নদীরও জল শুকিয়ে আসে। ব্রহ্মপুত্রের মতো দেশের একটি প্রধান নদীর অবস্থা একমাত্র বর্ষাকাল ছাড়া কবিতায় কথিত সেই ছোট নদীটিরই মতো। বছরের দশ মাস ব্রহ্মপুত্রের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু পানি থাকায় লোকজন সহজে হেঁটে পার হতে পারে। এক সময় ব্রহ্মপুত্র দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব হয়ে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও তীরবর্তী জনপদ ও হাট-বাজারগুলোতে পণ্য আনা-নেয়া হতো। চর জেগে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেসব এলাকার হাট-বাজারের মালামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিঘœ ঘটছে। নদীকে বইতে দিতে হবে তার নিজস্ব ছন্দে। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার চালানো হলে একপর্যায়ে প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হয়Ñ এমন উদাহরণ যথেষ্ট রয়েছে। তারপরও মানুষের স্বেচ্ছাচারী কর্মকা- থেমে নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী দখলকারীদের স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়াসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে মাঝে মধ্যে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। চোখের সামনে এই নদীটির মৃতপ্রায় অবস্থা দেখে এলাকাবাসী বার বার প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কর্তৃপক্ষের নজরদারির মধ্যে অবৈধ উপায়ে নদী তীরে কারখানা স্থাপনের তুঘলকি কা- ঘটে কিভাবে! আরও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই নদীর করুণ দশা প্রত্যক্ষ করেও দীর্ঘদিন পুনর্খনন বা সংস্কার করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আমরা মনে করি ব্রহ্মপুত্রকে বাঁচানোর জন্য আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। নদী তদারকি বাড়াতে হবে। কালবিলম্ব না করে নদী খনন করা দরকার। নদীকে নষ্ট করে যারা প্রকারান্তরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও প্রকৃতির ক্ষতি করছেন, সেই সব মুনাফালোভী শুভবোধহীন ব্যবসায়ীকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। মনে রাখতে হবে, নদী বাঁচলেই দেশ বাঁচবে।
×