ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মমতা এলেন দেখলেন কি জয় করলেন?

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মমতা এলেন দেখলেন কি জয় করলেন?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশে এসেছিলেন, ফিরে গেলেন শনিবার রাতে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে তাঁকে অনেকটা সরকারপ্রধানের মর্যাদা দেয়া হয়। সার্বক্ষণিক তিনি এসএসএফ’র নিরাপত্তা বলয়ে ছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসেছিলেন, এপার বাংলার বাঙালীর আতিথেয়তা প্রাণ খুলে উপভোগ করেছেন, বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়েছেন, শিল্পী-সাহিত্যিকদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছেন, পদ্মার ইলিশের স্বাদ নিয়েছেন, কিন্তু মানুষের মন কতটুকু জয় করতে পেরেছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ এক সময় যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ দেশের মানুষ নিজেদের কাছের মানুষ ভাবত সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের কিছু কর্মফলে এই বাংলার বাঙালীদের কাছ হতে অনেক দূরে সরে গিয়েছেন। মমতাকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এতই কাছের মানুষ মনে করতেন যে, মমতা যখন বামফ্রন্টকে রাজ্য বিধানসভায় পরাজিত করে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে ধস নামানো বিজয় এনে দিয়েছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রটোকল ভেঙ্গে মমতাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের ২৯টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে একজন মুখ্যমন্ত্রী মাত্র। মনে করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর পর মমতাই হতে পারে ভারতের বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু, সহায়তা করতে পারেন দু’দেশের মধ্যে অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানে। কিন্তু কে জানত মমতা নিজেই দ্রুত বাংলাদেশের একজন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবেন । জ্যোতি বসু আর মমতা দু’জনেরই আদি পিতৃভূমি পূর্ববঙ্গে, যদিও মমতার জন্ম কলকাতায়। মমতার রাজনীতিতে প্রবেশ কলেজ জীবনে যখন তাঁর বয়স সবেমাত্র ১৫তে প্রবেশ করেছে প্রদেশ কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের হাত ধরে। দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত ছিলেন কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইসলামের ইতিহাসে এমএ পাস করার পর পুরোমাত্রায় জড়িয়ে পড়েন সার্বক্ষণিক রাজনীতির সঙ্গে । তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, তিনি বেশ বদমেজাজী, নিজের ভিতর এক প্রকারের অহংবোধ কাজ করে, রাজনীতির মাঠে নাটক করতে বেশ পছন্দ করেন, যা কখনও কখনও সীমা ছাড়িয়ে যায়। কোন একটি বিষয়ে তাঁর পদক্ষেপ ক্ষণে ক্ষণে পাল্টে যায়। রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজয় লাভ করার পর সব কিছুতেই তিনি সিপিএম বা বামফ্রন্টর ছায়া দেখেন। রাস্তায় গাড়ির চাকা ফাটলে মনে করেন এটি নিশ্চয়ই তাদের ষড়যন্ত্র। জীবনযাত্রা সাদাসিধে। কংগ্রেসের টিকেটে একাধিকবার লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর দৃষ্টি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আসন। সেটি মিলল ২০১১ সালে। ২০১১ সালের নির্বাচনে বামফ্রন্টের হার পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তেমন একটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ তাদের সঙ্গে ছিল দলীয় পা-াদের বেপরোয়া কর্মকা-ের ভারি বোঝা। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২২ শতাংশ ভোটার মুসলমান। তারা এক সময় কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টকে তাদের মিত্র মনে করত, কিন্তু এই পা-াদের অত্যাচারের কারণে তারাও অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিল। মমতা তাদের সামনে অবতারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি হবেন তাদের আশ্রয়স্থল। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের একটি বিরাট অংশ ধর্মীয় মৌলবাদী আর গোঁড়ামিতে আচ্ছন্ন। এটি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। এখানে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একজন বড় মাপের ইসলামী চিন্তাবিদ। পরিবারগুলো বেশ রক্ষণশীল। অনেক বাড়িতে টিভি দেখাকে হারাম বলে মনে করা হয়। কলকাতাতেও এমন মুসলমানের সংখ্যা কম নয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাঈদীর যাবজ্জীবন কারাদ- হলে সেখানকার উর্দুভাষী মুসলমানরা তার প্রতিবাদে বেশ বড় আকারের মিছিল বের করে। অথচ এর পাল্টা মিছিলের আয়োজন করতে চাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন তার অনুমতি দেয়নি। মমতা বাংলাদেশ হতে ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তারও আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরে আসলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। সঙ্গে এলেন বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা। শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসলেন মমতা। তাঁর নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য চরম অপমানতুল্য। ধারণা করা হচ্ছিল, এই যাত্রায় বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিটি সই হবে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তেমনটিই আশা করা হচ্ছিল। ভারত যেহেতু একটি ফেডারেল কাঠামোর রাষ্ট্র সেই দেশের সরকার কোন একটি রাজ্যকে পাশ কাটিয়ে এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা সীমান্ত চুক্তির পর পরই বাংলাদেশ তা জাতীয় সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেয়। ভারত এই যাবত তা করতে ব্যর্থ হয়, যদিও ড. মনমোহন সিংয়ের সরকার এই ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিল। এখানেও বাদ সাধলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, এই চুক্তির ফলে ভারত যা পাবে তার চেয়েও বেশি দিতে হবে বাংলাদেশকে। অথচ এই দুটি অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত কম লাভবান হতো না। উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য তাকিয়ে ছিল মমতার দিকে। তাদেরও তিনি চরম হতাশ করেছিলেন। এই চুক্তি হয়ে গেলে এই রাজ্যগুলো বাংলাদেশের উপর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেত। আসলে মমতা বামফ্রন্ট আর কংগ্রেসকে দূরে ঠেলে রাখার জন্য অপরাজনীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এখনও নিতে দ্বিধা করেন না। তিনি নির্বোধ মুসলমান তোষণ করতে গিয়ে নিজেই অনেকটা নির্বোধের মতো আচরণ করেছেন। উর্দুকে রাজ্যের দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছেন। তারপর এলো খাগড়াগড়ে জঙ্গীদের ডেরায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। এই বোমা বানানো হচ্ছিল বাংলাদেশে পাচারের জন্য। প্রথম দিকে পুরো বিষয়টাকে মমতা চেপে যেতে চাইলেন। বললেন, এসব তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্র। নির্ঘাত ‘র’ এর সঙ্গে জড়িত। দিল্লী খবর দিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা পুরো বিষয়টা তদন্ত করবে। মমতা রাজি নন। দিল্লী অনড়। মমতার কাছ হতে তেমন একটা সহায়তা পাওয়া গেল না। তারপরও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে বের করল ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠন জেএমবি জড়িত। বোমা বানানো হচ্ছিল মূলত বাংলাদেশে ব্যবহার করার জন্য। তাদের সহায়তা করেছে মমতার পার্টিরই কিছু সদস্য। বিভিন্ন সন্দেহজনক খাত হতে জঙ্গীদের অর্থায়ন করা হয়েছে। বেকায়দায় মমতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ কঠিন পদের রাজনীতিবিদ। মমতাকে শায়েস্তা করতে পারলে ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র প্রবেশ সহজ হয়ে পড়বে। মমতার উপর স্ক্রু টাইট দেয়া শুরু হলো। ইতোমধ্যে এই রাজ্যের মুসলমানদের একটি বড় অংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কলকাতায় অনেকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের দুর্বৃত্তপনায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। এটাও তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে পড়েছে এই রাজ্যে কংগ্রেস বা সিপিএম-এর পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসাটা কঠিন। তাঁর অবস্থান যে কিছুটা নাজুক হয়ে পড়েছে তা তিনি উপলব্ধি করেছেন। মনে করেছেন যেহেতু দিল্লী বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেদের স্বার্থেই বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে চায় তাহলে স্ব-উদ্যোগী হয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কটা উন্নত করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ছুটে এলেন ঢাকা। বিমানবন্দরে নেমেই বললেন, ‘জয় বাংলা’। এতে নিশ্চয় বিএনপি খুব একটা খুশি হয়নি। জিন্দাবাদ বললে খুশি হতো। বেগম জিয়ার ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে ভারতের বিখ্যাত অভিনেতা দিলীপ কুমার সরকারের আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে এসেছিলেন। ওসমানী মিলনায়তনে তাঁকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া। দিলীপ কুমার মঞ্চে উঠতেই অনুষ্ঠান পরিচালক দর্শকদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, দিলীপ কুমারের আসল নাম কিন্তু ইউসুফ খান। তিনি একজন মুসলমান। কয়েকবার বলার পরও দর্শকরা তেমন একটা সাড়া দেননি। তাঁরা এখানে ইউসুফ খান নয়, দিলীপ কুমারকে দেখতে এবং শুনতে এসেছেন। মহানায়ক মঞ্চে উঠেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘আদাব’, চোস্ত উর্দুতে। ভারতীয় বনেদি মুসলমানরা যেমন সালাম জানিয়ে অন্যজনকে সম্বোদন করেন ঠিক তেমনভাবে ‘আদাব’ও জানান। লাক্ষেèৗতে এটির বেশ প্রচলন দেখেছি। দিলীপ কুমার মঞ্চে উঠে বলেন, ‘অনেক দিন আগে আমি দিল্লী বিমানবন্দরে শীতের সকালে ছুঠে গিয়েছিলাম আপনাদের দেশের এক মহান নেতাকে দেখতে। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। আজ তাঁর দেশে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’ বেগম জিয়ার চেহারা কিছুটা কালো হয়ে যায়। এর মধ্যে আবার মমতা এসে প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানই শেষ করেছেন ‘জয় বাংলা’ বলে । বিএনপি’র মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। মমতা একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ বেদীতে ফুল দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সর্বমহলের বড় প্রশ্ন ছিল, মিলবে কি এবার তিস্তার জল অথবা সুরাহা হবে কি সীমান্ত চিহ্নিতকরণ সমস্যার? মমতা সকলকে বললেন, ‘আমার উপর আস্থা রাখুন, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ এপারের মানুষ সব সময় অন্যের উপর আস্থা রেখেছে, কিন্তু অনেক সময় প্রতারিত হয়েছে। এবার কিন্তু তারা তেমনটি ঘটুক তা দেখতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে মমতা যে ধরনের উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন তা তিনি জীবনে কতবার পেয়েছেন? এটি বঙ্গবন্ধুকন্যার পক্ষেই সম্ভব। তিনি প্রয়োজনে নিমিষেই প্রধানমন্ত্রীর লেবাস ছেড়ে একজন জননী, একজন বড় বোন, পাশের বাড়ির বড় বুবু অথবা নিকট আত্মীয় হয়ে উঠতে পারেন। বলতে পারেন ‘কতদিন দেখিনি তোমায়। কেমন ছিলে এতদিন? খাওয়ার আগে হবে নাকি এক কাপ চা অথবা কফি?’ মমতা কি শেখ হাসিনার এই আন্তরিকতা উপলব্ধি করেছেন? তাঁকে তো স্বীকার করতেই হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যতদিন বাংলাদেশে একটি সরকার আছে ততদিন ভারতের পূর্ব সীমান্ত শান্ত থাকবে। না থাকলে এবার দশ ট্রাক নয়, শত ট্রাক অস্ত্র আসবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। সেইসব অস্ত্র যাবে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাছে। এই সত্যটা শুধু দিল্লীকে উপলব্ধি করলে হবে না, বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্য সরকারগুলোকে আরও বেশি করে উপলব্ধি করতে হবে, যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন তাঁর সরকারী বাসায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মানে এক মনোজ্ঞ অর্ভ্যথনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সরকারের মন্ত্রী আমির হোসেন আমু হতে শুরু করে তোফায়েল আহমেদ। চুলে ঘন কলপ লাগিয়ে হাজির হয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সস্ত্রীক এসেছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ। ঘিয়ে রঙের পাজামা-পাঞ্জাবি পরে হাসি হাসি মুখ করে সময়মতো এসে পড়েছিলেন বেগম জিয়ার উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব) মাহবুব। রুনা লায়লা, ফেরদৌস আরা, লিলি ইসলাম, ইফ্্ফাত আরাÑ কেউ বাদ যাননি। বাদ যাননি আমাদের সকলের পরিচিত বাকের ভাই, মানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আর ঢাকার সাংবাদিক মহলকে বাদ দিয়ে তো কোন অনুষ্ঠান কল্পনাও করা যায় না। এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একেবারে আটপৌরে একটা শাড়ি আর চপ্পল পরে। সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর মাইকটা হাতে নিয়ে বললেন, ‘আজ আমি এ্যাংকর। এখন গান হবে, সাথে আবৃত্তি আর নাটকের ডায়ালগ।’ তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে গেলেন সকলের দিদি। বসে পড়লেন তিনি স্টেজের কিনারায়। পাশে বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। হারমোনিয়াম, তবলা কিছুই নেই। না থাক। কখনও কখনও বেসুরা গলায় গানের চেষ্টা হলো। আন্তরিকতার অভাব কারও নেই। দিদি বললেন, সাংবাদিকরা এত কথা বলেন। তাঁরা কই। কিছু একটা করুন। জবাবে শ্যামল দত্ত বললেন, ‘টক শো’ করতে পারি। দিদির তাৎক্ষণিক উত্তর ‘ওরে বাবা টক শো? তাতে সব কিছু টক হয়ে যাবে।’ এমন একটা সুন্দর সন্ধ্যা উপহার দেয়ার জন্য পঙ্কজ শরনকে ধন্যবাদ। ফেরার সময় কাউন্সিলর (পলিটিক্যাল) সুজিত ঘোষ দুঃসংবাদটা দিলেন। তিনি মার্চের প্রথম সপ্তাহে দিল্লী ফিরে যাচ্ছেন। সুজিত আমাদের অনেকেরই একেবারে কাছের মানুষ। সহজে সকলকে আপন করে নিতে পারতেন। পরের জন কি তাঁর মতো হবে? অনেক আশা আর আশ্বাস দিয়ে মমতা ফিরে গেছেন কলকাতায়। নরেন্দ্র মোদি আগামী মাসে ঢাকা আসছেন। ঘোষণা করেছেন তিনি বাংলাদেশের জন্য ভাল সংবাদ নিয়ে আসবেন। সকলেই অপেক্ষায় থাকবে এপারে। সত্যি সত্যি যদি সংবাদ ভাল হয় তখন সকলের আগে মনে পড়বে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব উত্তরোত্তর সূদৃঢ় হোক। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক
×