ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বিঘ্নে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হলো

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

নির্বিঘ্নে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার পরীক্ষার পঞ্চম দিন পার করল এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে এদিনের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হলো সরকারী ছুটির দিনে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলাতেই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার জন্য সারাদেশে নেয়া কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট পরীক্ষার্থী-অভিভাবকরা। একই সঙ্গে তাদের পক্ষ থেকে আবারও পরীক্ষার সময়ে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে পরীক্ষা চলাকালে দায়িত্বে অবহেলা ও অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৫ শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। অবরোধ ও হরতালের মধ্যে এ পর্যন্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়েছে কেবল পাঁচ দিন। তাও ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার এসব পরীক্ষা হয়েছে। শুক্রবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর ১২টায়। এসএসসির গণিত (আবশ্যিক), দাখিলের ইংরেজী (অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের) ও ইংরেজী প্রথমপত্র, কারিগরির রসায়ন বিজ্ঞান-২ (১৯২৬) ও রসায়ন বিজ্ঞান-২ (৮১২৬) এবং দাখিল ভোকেশনালে রসায়ন বিজ্ঞান-২ (১৭২৬) ও রসায়ন বিজ্ঞান-২ (৮৫২৬) বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রবিবার এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও হরতাল ডাকায় পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, উদয়ন স্কুলসহ বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, পরীক্ষা চলাকালে শত শত অভিভাবক কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন। চারপাশে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের প্রহরা থাকলেও বিএনপি জামায়াতের নাশকতায় পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন অভিভাবকরা। ভিকারুন নিসার অভিভাবক হাসনা হেনা বলছিলেন, প্রতিদিনই জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। অটোরিক্সা (সিএনজিচালিত) দিয়েও সন্তানকে বাসায় নেয়ার সাহস পাচ্ছি না। আর বাসে ওঠা তো আরও ঝুঁকির। সন্তানরা জীবন হাতে নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিলেন, লাখ লাখ সন্তানের জন্যও আমাদের নেতা-নেত্রীদের হুস হয় না। তারা আমাদের সন্তানের জীবনের কথা ভাবে না। এত দাবি করা হচ্ছে তবু হরতাল-অবরোধ দিচ্ছে তারা। সকালে রাজধানীর আজিমপুর স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে দেখা যায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা বলছিলেন, নির্বিঘেœই তাঁরা পরীক্ষা কেন্দ্রে এসেছেন। কোথাও কোন বাধার সম্মুখীন হননি। তবে হরতাল অবরোধেও যানজটে পড়েছেন বলে বলছিলেন তারা। অভিভাবকদের একজন রাব্বি বলছিলেন, আজ শুক্রবারও যানজটে পড়তে হয়েছে। অবরোধও আছে। এ ধরনের কর্মসূচীর কি মানে আছে। তারপরও তারা কর্মসূচী দিয়েই যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, শাান্তিপূর্ণভাবেই পরীক্ষা চলছে। কোন ঝামেলা হয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল। এদিকে শুক্রবার রাজধানীর বাইরে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষার দুটি কেন্দ্রে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাত শিক্ষককে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে ১০ শিক্ষার্থীকে। আশ্রফপুর আহসানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে দুই জন ও রহিমানগর বিএবি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাঁচ জনের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, এসএসসির গণিত পরীক্ষা চলাকালে ওই শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। বিষয়টি দুটি কেন্দ্রের সচিবদের জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদায় কার্পাসডাঙ্গা কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্র সচিব ফেরদৌস হোসেন ও সহকারী শিক্ষক সানোয়ার হোসেনকে বহিষ্কার করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোঃ শামসুজ্জোহা। পরীক্ষা চলাকালে নকলে সহযোগিতার দায়ে দুই শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ কুমার সাহা জানান, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা চলছিল। বেলা ১১টার দিকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ কার্পাসডাঙ্গা কেন্দ্রের ৬নং কক্ষ পরিদর্শনকালে কক্ষ পরিদর্শক কর্তৃক এক শিক্ষার্থীকে নকলে সহযোগিতা করতে দেখেন। তিনি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান। এ সময় কার্পাসডাঙ্গা পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোঃ শামসুজ্জোহা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন পারভীন ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফরিদুর রহমান অভিযুক্ত ওই কক্ষ পরিদর্শক ও কেন্দ্র সচিবকে দুপুর ১টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু তাহের মোঃ শামসুজ্জোহা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কেন্দ্র সচিব ফেরদৌস হোসনকে আজীবন অব্যাহতি ও সানোয়ার হোসেনকে নগদ ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ সাময়িক বহিষ্কার করেন। জরিমানার টাকা নগদে পরিশোধ করলে অভিযুক্ত ওই কক্ষ পরিদর্শককে ছেড়ে দেয়া হয়। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা কেন্দ্রে এসএসসির গণিত পরীক্ষা চলাকালে নকল সরবরাহের চেষ্টাকালে দু’যুবককে দ- দেয়া হয়েছে। হাতেনাতে আটক হওয়া স্নাতকের ছাত্র ফারুফ মিয়াকে (২০) দশ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাস ও দশম শ্রেণীর ছাত্র রোস্তম হোসেনকে (১৫) দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারদ- দেয়া হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক গজারিয়ার ইউএনও মাহবুবা বিলকিস এই দ-াদেশ দেন। গজারিয়া থানার ওসি ফেরদৌস হোসেন জানান, স্থানীয় আলী পুরা গ্রামের আব্দুর রউফ বেপারীর পুত্র ফারুক কলিমউল্লাহ ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্র নকল এবং মনাইকান্দি গ্রামের কাজল হোসেনের পুত্র রুস্তম ভবেরচর ওয়াজের আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে নকল সরবরাহের চেষ্টা করছিল। পরে তারা জরিমানার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে বিকেলে মুক্তি পায়। জয়পুরহাটে অসদুপায় অবলম্বের জন্য জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এন. এম সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ জন শিক্ষককে দ- দেয়া হয়েছে। একজনের ৪০ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- অপর শিক্ষকের ৩০ হাজার টাকা জরিমানাসহ পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার ও একজন ছাত্রের ১০০ টাকা জরিমানাসহ বহিষ্কার করা হয়। পরীক্ষা কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, পাঁচবিবির নছির ম-ল (এন.এম) সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইংরেজী পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৩৫ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর শাইলট্টি মাদ্রাসার শিক্ষক আনিছুর রহমান পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দেয়ার সময় তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এ সময় পরীক্ষার্থীদের বলে দেয়া ১৬টি প্রশ্ন বাতিল করে নতুন ১৬টি প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়। দায়িত্ব অবহেলার কারণে সিলেটের গোয়াইনঘাটে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এক মাদ্রাসা শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষকের নাম মাওলানা মাহমুদুল হাসান। তিনি উপজেলার পশ্চিম জাফলং দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক।
×