ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আজ অস্ট্রেলিয়া॥

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ  আজ অস্ট্রেলিয়া॥

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সবচেয়ে বড় শঙ্কাটা কেটে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য। বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তান নিয়ে যে ভীতি ছিল তাদের বিধ্বস্ত করায় শঙ্কাটা উড়ে গেছে। এখন উজ্জীবিত ও চাপমুক্ত মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এবার কঠিন পরীক্ষা। অন্যতম হট ফেবারিট আয়োজক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্রিসবেনের গাব্বায় কঠিন চ্যালেঞ্জ আজ। দশ বছর আগে ইংল্যান্ডের ভেন্যু কার্ডিফে অবিস্মরণীয় এক ম্যাচে অসিদের ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এখন স্বপ্ন আবার সুদূরপ্রসারী, আরেকবার অসিদের হারানোর বাসনা। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আশায় বুক বেঁধে ভাবছেন ব্রিসবেনে ফিরে আসবে কার্ডিফের স্মৃতিটা! তবে বৃষ্টির হানায় ম্যাচটা প- হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি? তবে পরিত্যক্ত ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করার চেয়ে বরং পুরো ম্যাচেই লড়তে চায় টাইগাররা। বৃষ্টির কারণে শুক্রবার ম্যাচের আগের দিন ইনডোর বন্দী ছিলেন ক্রিকেটাররা। অনুশীলন করতে পারেননি মাঠে। ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে। এটি বাংলাদেশের পঞ্চম বিশ্বকাপ। এর আগের চার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২০০৭ সালে ভারতের বিরুদ্ধে জিতেছিল বাংলাদেশ এবং বিশ্বকাপের সেরা সাফল্য হিসেবে সেবারই প্রাথমিক রাউন্ডের গ-ি পেরিয়েছিল। তাই শুরুটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দলের জন্য। অধিনায়ক মাশরাফি বার বার বলেছিলেন শুরুটা ভাল করতে পারলে পুরো টুর্নামেন্টে একটা ছন্দে থাকা সম্ভব হবে। সেই ছন্দটা তবে কী পেয়েছেন মাশরাফিরা? যে কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই একটি জয় অনেক বড় অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণাকে সঙ্গী করেই আজ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ১৯ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর মধ্যে সপ্তম দেখাতেই শক্তিশালী অসিদের বিমূঢ় করে দিয়ে ২০০৫ সালের ১৮ জুন কার্ডিফে মোহাম্মদ আশরাফুলের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরির সুবাদে ৫ উইকেটের সহজতর জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আর জয় আসেনি। টানা ১২ ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারতে হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বকাপে মাত্র দু’বার মোকাবেলা হয়েছে। কোনবারেই বিন্দুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ৭ উইকেটে এবং ২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটে ১০ উইকেটের নির্মম পরাজয় মানতে হয়েছে। এশিয়ার যে কোন দলের জন্যই অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ, উইকেটের গতি-প্রকৃতি অনেক বড় সমস্যার কারণ। সাধারণত ধীরগতির ও স্পিন নির্ভর উইকেটে খেলে অভ্যস্ত বাংলাদেশের জন্যও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গতিময় ও বাউন্সি উইকেটে ভাল করা। গাব্বা সুপরিচিত অত্যাধিক গতি, বাউন্স এবং সুইংয়ের জন্য। অস্ট্রেলিয়ার একাদশে সবচেয়ে ভয়ানক পেসার মিচেল জনসন ছাড়াও আছেন গতিতারকা মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সরা। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের অগ্নিপরীক্ষার সামনেই দাঁড়াতে হবে। আর এসব মাঠে খেলে অভ্যস্ত বিধ্বংসী অসি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার, এ্যারন ফিঞ্চ ও বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বড় পরীক্ষায় ফেলবেন বাংলাদেশী পেসারদের জন্য। তবে গতিময় উইকেট হওয়ার কারণে প্রথম ম্যাচের মতোই কোন স্পেশালিস্ট স্পিনার না নিয়ে তিন পেসার মাশরাফি, তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেনকে নিয়েই একাদশ গঠন করা হতে পারে। আফগানদের বিরুদ্ধে মুমিনুল হককে দলে রাখলেও তিনি ৯ নম্বরে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন। এবার তার পরিবর্তে একাদশে ফিরতে পারেন অলরাউন্ডার নাসির হোসেন। অবশ্য তাকে সাব্বির রহমানের জায়গায়ও সুযোগ দেয়া হতে পারে। পরিবর্তন বলতে এ একটিই হওয়ার সম্ভাবনা। তবে আগের মতোই উদ্বোধনী জুটিতে তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়ের কাছ থেকে ভাল একটি জুটির আশায় থাকবে বাংলাদেশ দল। ওই ম্যাচে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বাধিক ১১৪ রানের জুটির রেকর্ড গড়েছিলেন যে কোন উইকেট জুটির ক্ষেত্রে। অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে শুধু সাকিবেরই খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া বিশ্বকাপের আগেই তিনি বিগব্যাশ টি২০ আসরে খেলেছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের ক্ষমতা রয়েছে ম্যাচের ভাগ্য পরিবর্তন করার। তাই অসিরাও এ ম্যাচে নামার আগে শুধু তাকে নিয়েই নিজেদের পরিকল্পনা তৈরির কথা জানিয়েছে। তবে কার্ডিফের ওই অবিস্মরণীয় বিজয়ের ম্যাচে বর্তমান দলের অধিনায়ক মাশরাফি ছাড়া আর কোন সদস্যই ছিলেন না। এবার দলনেতা হিসেবেই ওই জয়ের স্মৃতি নিয়ে পুরো দলকে তিনি অনুপ্রেরণা যোগাবেন। অসি অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ইনজুরি কাটিয়ে এ ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপে ফিরতে পারেন। তিনিও কার্ডিফের সেই ম্যাচে পরাজয়ের হতাশা নিয়ে অধিনায়ক পন্টিংয়ের সঙ্গে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের বোলিংয়ে অন্যতম ভয়ের কারণ মনে করছেন মাশরাফিকেই। তবে এই লড়াইটা ভেস্তে যেতে পারে ঘূর্ণিঝড় মার্সিয়ার হানায়।
×