স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের নাট্যকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর শিল্পকলা পদক পাচ্ছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী, নাট্যকার ও নির্দেশক ও লাকী ইনাম। পদকের পাশাপাশি তিনি পাবেন এক লাখ টাকা ও সনদ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে ‘শিল্পকলা পদক-২০১৪’ প্রদান করা হবে। পদকের জন্য মনোনীত হওয়ায় এ প্রসঙ্গে লাকী ইনাম বুধবার জকণ্ঠকে বলেন, দেখুন পদক এখনও পাইনি। পাওয়ার পর অনুভূতি দিলে ভাল হয়। আমার মনে হয় আমরা যাঁরা মঞ্চে কাজ করি, বিশেষ করে নাট্যকর্মী, নৃত্যশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, চিত্রশিল্পী, যাত্রাশিল্পী তাঁরা অনেকটাই নিভৃতচারী। তাঁরা কখনই অন্যদের মতো প্রচারের আলোয় আসে না। এ কারণে এই শ্রেণীর মানুষ অনেকটাই অবহেলিত। অনেক দেরিতে হলেও শিল্পকলা একাডেমি এই শ্রেণীর মানুষদের সম্মাননা দেয়ার কাজটি শুরু করেছে। আমি তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমি মনে করি এর মাধ্যমে ভাল একটি কাজের অবতারণা হলো। এতে সুস্থ শিল্পের চর্চা আরও বাড়বে। আমি যতদূর জানি সাতজনকে এ পদক দেয়া হচ্ছে। এ তালিকায় যাত্রা বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত হলে আরও ভাল হতো। আমাকে মনোনীত করার জন্য শিল্পকলা একাডেমিকে ধন্যবাদ। আমি আশা করছি যতদিন বাঁচব দেশের সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করে যাব।
লাকী ইনাম ১৯৭২ সালে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে যাত্রা শুরু করেন। তিনি প্রায় ৩৫টি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑ ‘মোহনগরী’, ‘অচলায়তন’, ‘নুরুলদীনের সারাজীবন’, ‘গ্যালিলিও গ্যালিলি’, ‘খোলস’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘সরমা’, ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, ‘গৃহবাসী’। নির্দেশিত মঞ্চনাটকের সংখ্যা প্রায় ২০টি। এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্যÑ ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘সুদূরে দিগন্ত’, ‘স্বপ্ন’, ‘সরমা’, ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’, ‘গৃহবাসী’, ‘উদ্বাহ’, ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সেইসব দিনগুলো’, ‘পুশি বিড়াল ও একজন প্রকৃত মানুষ’ প্রভৃতি।
মঞ্চনাটকে লাকী ইনামের অন্যতম চর্চার ক্ষেত্র কোরিওগ্রাফি। ‘অচলায়তন’, ‘মোহনগরী’, ‘মুক্তির উপায়’, ‘জনতার রঙ্গশালা’সহ বেশকিছু নাটকে তিনি দৃষ্টিনন্দন কোরিওগ্রাফি করেছেন। তাঁর লেখা মঞ্চনাটকের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হচ্ছেÑ ‘সুদূর দিগন্ত’, বেগম রোকেয়ার ছোট গল্প অবলম্বনে ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’, ছোটদের নাটক ‘পাথরের সুপ’, ‘কাবাবের কা ’, ‘বিভ্রাট’, রূপান্তরিত নাটক ‘খোলস’, ‘উষর উর্বশী’, অনুবাদ ‘ভিক্টোরিয়া স্টেশন’ প্রভৃতি। মঞ্চের পাশাপাশি ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও বেতারে নিয়মিত অভিনয় করে আসছেন লাকী ইনাম। তাঁর অভিনীত বেতার ও টেলিভিশন নাটকের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। এ ছাড়া তার লেখা শতাধিক নাটক টেলিভিশন ও বেতারে প্রচার হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। লাকী ইনামের পাশাপাশি এবার শিল্পকলা পদকে ভূষিত হবেনÑ ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল (নৃত্যকলা), পি ত অমরেশ রায় চৌধুরী (কণ্ঠসঙ্গীত), পি ত মদন গোপাল দাস (যন্ত্রসঙ্গীত), সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ (চারুকলা), আশরাফুল আলম (আবৃত্তি) এবং ড. শহিদুল আলম (আলোকচিত্র)। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পদক প্রদানের পর থাকছে নৃত্যাঞ্চলের পরিবেশনায় তিনটি খ- নৃত্য। এগুলো হলোÑ ‘ময়ূর’, ‘পুতুল নাচ’ এবং ‘নাও ছাড়িয়া দে’।সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবছর সাতজন গুণীশিল্পীকে সম্মান জানাতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ২০১৩ সালে ‘শিল্পকলা পদক’ প্রদান শুরু হয়। শিল্পকলা পদক প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর এবং মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণ ‘নন্দনমঞ্চে’ প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও জাতীয় চিত্রশালার ১নং গ্যালারিতে একাডেমির ৪১ বছরের তথ্যভিত্তিক প্রদর্শনী এবং মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ভাষায় সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: