ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নদে মাটি ভরাট ও গড়ে তোলা হয়েছে ইটভাঁটি

মৃতপ্রায় খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মৃতপ্রায় খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভৈরব, ১৮ ফেব্রুয়ারি ॥ এক কালের খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। স্রোতস্বিনী নদীটি পরিণত হয়েছে ফসলী মাঠ আর ইটের ভাঁটিতে। নদের পানি হ্রাস পাওয়ায় একদিকে নৌচলাচল ব্যহত হচ্ছে, অন্যদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সঙ্কট দেখা দিয়েছে চাষাবাদে। ক্রমাগত পলি জমে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ক্রমশই কমে যাচ্ছে। নাব্যতা হ্রাস পাওয়া এ নদীর দু’পাড়ে অপরিকল্পিত মাটি উত্তোলনসহ গড়ে তুলেছে বেশ কয়েকটি ইটের ভাঁটি। ইট তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে নদের মাটি। জানা গেছে, সপ্তদশ শতকের আগে ব্রহ্মপুত্র নদী গারো পাহাড়ের পশ্চিম-দক্ষিণ মোড় ঘুরে ওই পাহাড়ের পূর্ব-দক্ষিণ তলভূমি ঘেঁষে দেওয়ানগঞ্জের, শেরপুর জামালপুরের ভেতর দিয়ে মধুপুর গড়ের পাশ দিয়ে ময়মনসিংহ জেলাকে দু’ভাগে ভাগ করে । বর্তমানে প্রাচীন এ নদী বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য সময় মৃত বললেই চলে। এ সুযোগে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কোন কোন অংশের মাটি ভরাট করে চাষাবাদ ও ইটের ভাঁটি গড়ে তুলেছে। নদীর তীর দখল করে অবৈধভাবে পাথর বোল্ডারসহ জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে তুলেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব অংশের ব্রহ্মপুত্র নদীর সেতুর দুই পাড়ে পাথর ক্রাশিং ও নদীতে মাটি ভরাট করে নদীর প্রবাহ বাধাগস্ত করছে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। প্রাচীন এ নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এলাকা বাব বার প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। প্রভাবশালীরা দিন দিন রুগ্ন নদীটিকে মেরে ফেলছে। আস্তে আস্তে অনেক অংশ ভরাট হয়ে গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। সরকার দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদটি পুনঃখনন বা সংস্কার করার কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে প্রতি বছরই উজান থেকে আসা পলি ও নদীর তীরে গড়ে ওঠা পাথর ক্রাশিংয়ের ফলে ক্রমে নদটি ভরাট হয়ে পড়ছে। এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব হয়ে নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও তীরবর্তী জনপদ ও হাট-বাজারগুলোতে পণ্য আনা-নেয়া হতো। চর জেগে নৌচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারের মালামাল ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে থাকে হাঁটু পানি। লোকজন সহজে নদটি পায়ে হেঁটে পার হতে পারে। গাইবান্ধায় জল নেই জলাশয়ে নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই বড় বড় নদীসহ খাল-বিলগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় গাইবান্ধার প্রাকৃতিক উৎস নির্ভর সেচ ব্যবস্থার আওতায় সোয়া ২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ বিঘিœত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সাধারণত চৈত্র মাসে এতদঞ্চলে পানি শূন্যতা দেখা দিলেও এ বছর ফাল্গুন মাসের শুরুতেই এ বিরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বড় বড় নদ-নদী এবং খাল-বিলের পানির নির্ভর করে লো-লিফট পাম্প বসিয়ে এ বছর জেলার সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্যাপুর ও পলাশবাড়ি উপজেলায় ডিজেল চালিত ১০০টি এবং বিদ্যুৎ চালিত ১৬টি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে ১ হাজার ৩শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশীয় প্রযুক্তির ডোঙ্গা, হোঁচা, দোন দিয়ে পানি সেচ করে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কিন্তু সেচ মৌসুমের শুরুতেই নদী-নালার পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে প্রাকৃতিক পানি নির্ভর সেচ ব্যবস্থার আওতায় এসব জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা নদী-নালা তীরবর্তী ওই সমস্ত জমিতে গভীর বা অগভীর নলকূপ বসিয়ে সেচ দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে পানি শূন্যতার কারণে ওই সমস্ত বোরো ধান চাষের জমিতে এ বছর কৃষকরা অন্য ফসল চাষে বাধ্য হচ্ছে।
×