ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচিত স্টল প্যাভিলিয়নে ভিড়, খ্যাতিমানদের বই নিয়ে আগ্রহ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পরিচিত স্টল প্যাভিলিয়নে ভিড়, খ্যাতিমানদের বই নিয়ে আগ্রহ

মোরসালিন মিজান ॥ কত যে নতুন লেখক! গল্প উপন্যাস কবিতা ছড়া- কী লেখেননি তাঁরা! আবেগ অনুভূতির সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটিয়েছেন নিঃসন্দেহে। তবে পাঠকের ওসব খোঁজ করার মানসিকতা নেই বললেই চলে। বহু বছরের পরিচিত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোতেই ভিড় করছেন তাঁরা। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়নের সামনে যে ভিড়টি প্রথম দিন দেখা গেছে, এখনও সেটি বর্তমান। প্রতিদিনই হাতেগোনা কয়েকটি স্টলের সামনে সমবেত হয়ে বই দেখছে মেলায় আগতদের বড় একটি অংশ। অন্য প্রকাশ, অনন্যা, সময়, প্রথমা, আগামী, মাওলা, পাঠক সমাবেশ, অ্যাডর্ন, ঐতিহ্য, তাম্রলিপিসহ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বই বিক্রি হচ্ছে প্রতিদিন। বিক্রি তালিকায় শীর্ষে রয়েছে খ্যাতিমান লেখকদের বই। মেলা ঘুরে দেখা যায়, যথারীতি ভিড় লেগে আছে অন্যপ্রকাশ’র প্যাভিলিয়নে। সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করলে হাতের ডান পাশে পরে অন্যপ্রকাশ। প্যাভিলিয়নের চারপাশই খোলা। সব দিক থেকে প্যাভিলিয়ন আড়াল করে রেখেছেন পাঠক। এখান থেকেই প্রকাশিত হয়েছে নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ উপন্যাস। লেখক নেই। সেই শূন্যতা দূর করছে তাঁর বই। প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম জানালেন, তাঁদের স্টলে খ্যাতিমান অনেক লেখকের বই রয়েছে। সেগুলোর বিক্রি ভাল। তবে এখনও এগিয়ে হুমায়ূন আহমেদ। লেখকের পুরনো বই অনেকের নতুন বইয়ের তুলনায় বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাশেই সময় প্রকাশন। এখানেও আছে হুমায়ূনের বই। বিক্রি হচ্ছে যথারীতি। প্রকাশক ফরিদ আহমেদ জানান, নতুন আসা বইয়ের মধ্যে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সেলিনা হোসেন ও আনিসুল হকের বই। মেলায় প্রবেশ করে সামনে একটু আগালেই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আগামী। এখানে অন্য সব মেলার মতোই এসেছে নির্বাচিত বই। বিক্রি হচ্ছে হুমায়ুন আজাদসহ খ্যাতিমান অনেকের বই। অবশ্য প্রকাশক ওসমান গনি জানালেন, তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন লেখকের বইও প্রকাশ করা হচ্ছে। এদের কারও কারও যথেষ্ট খুব ভাল। শিশুদের বইয়ের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া তাম্রলিপি’র স্টলেও ভিড় লেগে আছে সব সময়। প্রকাশক একেএম তারিকুল ইসলাম রনি জানান, এখানেও প্রধান বিক্রি মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অ্যাডর্নের বই সব সময়ই সুনির্বাচিত। এখানে লেখকের খ্যাতি বড় বিবেচনা নয়। বরং বইয়ের বিষয় আকৃষ্ট করছে পাঠককে। এখানেও বিক্রি খুব ভাল বলে জানান প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্য এবারও অনুবাদ বেশি এনেছে। এখানেও পাঠক উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ৯১ নতুন বই ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিনে বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৯১টি। নজরুল মঞ্চে ৪টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। নির্বাচিত বই ॥ নান্দনিক থেকে এসেছে আরিফ রহমানের বই ‘ত্রিশ লক্ষ শহিদ বাহুল্য নাকি বাস্তবতা’। একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে যে অপপ্রচার, তার জবাব বলা যেতে পারে বইটিকে। স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্ঠীর অপপ্রচারের শক্ত জবাব দেয়ার পাশাপাশি অন্য অনেক প্রচলিত কুযুক্তির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ যুক্তি তুলে ধরেছেন লেখক। সাহিত্য প্রকাশ থেকে মেলায় এসেছে দারা শামসুদ্দীনের বই ‘বাংলাদেশের স্থাননাম ইতিহাসের পদচিহ্ন’। স্থাননামের সঙ্গে ইতিহাসের যে সম্পৃক্তি, নামের গভীরে সুপ্ত জাতির আত্মপরিচয়ের যেসব চিহ্ন, লেখক বইতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। স্থাননামের সূত্র ধরে ইতিহাসের পদচিহ্ন অনুসরণ করে পাঠক পেয়ে যাবেন গভীরতর অনুধ্যান ও উপলব্ধিতে। বহু বছরের সাধনায় প্রণীত এই গ্রন্থ বাংলার সামাজিক ইতিহাসের আকর হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা প্রাকাশনা প্রতিষ্ঠানের। নালন্দ থেকে প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক সুজন কবিরের ‘আল কায়দা থেকে আইএস’। বইটিতে লেখক বলার চেষ্টা করেছেন, ধর্মীয় বলে বলিয়ান কোন গোষ্ঠীর হাত ধরে পৃথিবীতে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটেনি। বরং নব্বই দশক থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন রাষ্ট্র শক্তির অর্থ আর অস্ত্রের মদদে জঙ্গীবাদ নামের বিষবৃক্ষটিকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর নেপথ্যে কার হাত? কাদের ইন্ধন? এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ঢংয়ে লেখা বইটি সংগ্রহে রাখার মতো। ঐতিহ্য থেকে এসেছে অনুবাদ গ্রন্থ ‘শাজারাতুদ দুর’। প্রখ্যাত লেবাননি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক জুরজি জায়দানের এই উপন্যাস অনুবাদ করেছেন তাসনীম আলম। ‘শাজারাতুদ দুর’ উপন্যাসটি হালাকু খাঁর হাতে আব্বাসীয় খেলাফতের পতন ও মামলুক সাম্রাজ্যের উত্থানের ঘটনাবলী নিয়ে রচিত। মেলা মঞ্চের আয়োজন ॥ মেলা মঞ্চে বুধবার অনুষ্ঠিত হয় ‘স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন এবং সৈয়দ মাইনুল হোসেনের কন্যা তানজিনা হোসেন। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। প্রাবন্ধিক বলেন, সৈয়দ মাইনুল হোসেনের জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থাপত্যকাঠামোর সাতটি স্তম্ভের এক অভিন্ন বিন্দুতে মিলন আমাদের যেন এই বার্তাই প্রদান করে যে সমস্ত বিভাজন ও মতপার্থক্য সত্ত্বেও আমরা মূলত এক মহান মুক্তিযুদ্ধের সন্তান এবং বাংলাদেশ নামক এক মহান জাতিরাষ্ট্রের আমরা গর্বিত উত্তরাধিকার। আলোচকরা বলেন, জীবনের সকল ক্ষেত্রেই সৈয়দ মাইনুল হোসেন ছিলেন একজন সংস্কারমুক্ত, আধুনিক মানুষ। সাত সংখ্যাটা তাঁর কাছে ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এজন্য আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থাপত্যকলায়ও দেখি সাতটি স্তম্ভের ব্যবহার; যেখানে ৭ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ২৫ মার্চের মতো ঐতিহাসিক তারিখ, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের ইতিহাস যুক্ত হয়ে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে। তারা বলেন, স্থাপত্যকর্মে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার মধ্য দিয়ে সৈয়দ মাইনুল হোসেন চিরদিন বাঙালী জাতির মাঝে বেঁচে থাকবেন। মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে জাতীয় স্মৃতিসৌধের নকশা প্রণয়ন করেন সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এটি তাঁর অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় বহন করে। বাঙালী জাতির ইতিহাসের নানা পর্বকে স্থাপত্যশৈলীতে চমৎকারভাবে বাক্সময় করে তুলেছেন তিনি। জাতি হিসেবে আমরা তাঁর কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব। সভাপতির বক্তব্যে মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, এক সমৃদ্ধ পারিবারিক ঐতিহ্যের অধিকারী মাইনুল হোসেন যুদ্ধ- ধ্বংস ও অন্যায়কে ঘৃণা করতেন। তাঁর অনন্য শিল্পচিন্তার অনুপম প্রকাশ ঘটেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিটি স্তম্ভে এবং এর সামগ্রিক নির্মাণশৈলীতে। স্মৃতিসৌধের উর্ধমুখী বিস্তার যেন বাঙালী জাতির হার না মানা চির উন্নত শিরকেই নির্দেশ করে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ ও ‘সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র’। সংগীত পরিবেশন করেন রোকাইয়া হাসিনা, ড. মোঃ হারুন-অর-রশীদ, রাজিয়া সুলতানা মুন্নী, নকুল চন্দ্র দাস, হাসি সরকার, মোঃ মুরাদ হোসেন, রীতা ভাদুরী, আঁখি আলম, শারমিন সুলতানা এবং মাহ্যাবিন রহমান শাওলী। আজকের মেলামঞ্চ ॥ আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শামসুদ্দিন আহমদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কামালউদ্দিন, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নূরুন্নাহার মুক্তা। সভাপতিত্ব করবেন মোঃ শাহ-ই-আলম।
×