ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের ১০৫ রানে জয় ॥ উড়ে গেল আফগানরা

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাংলাদেশের ১০৫ রানে জয় ॥ উড়ে গেল আফগানরা

মিথুন আশরাফ ॥ ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে ...।’ আফগানিস্তানকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ১০৫ রানে উড়িয়ে দেয়ার পর এখন বাংলাদেশের আনন্দ করার সময় এসে গেছে। এতদিন এ প্রথম ম্যাচটির জন্যই যেন মনের সব আনন্দ লুকিয়ে রেখেছিলেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিমরা। এবার তারা মন খুলে আনন্দ করতে পারবেন। সেই আনন্দের ছোঁয়া ক্যানবেরার মানুকা ওভালে খানিক মিলেছেও। স্টেডিয়ামটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা এমনভাবে হাজির হয়েছেন, যেন ‘ছোট্ট বাংলাদেশ’ই পেয়ে গেছেন মাশরাফিরা। প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনুপ্রেরণায় দলও বিশ্বকাপে শুভসূচনা করেছে। অর্ধশতক করা দুই ব্যাটসম্যান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান (৬৩) ও মুশফিকুর রহীমের (৭১) পঞ্চম উইকেটে করা ১১৪ রানের জুটিতে শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৭ রান করে। এরপর মাশরাফি বিন মর্তুজা (৩/২০) ও সাকিবের (২/৪৩) দুর্দান্ত বোলিংয়ে আফগানিস্তানকে ১৬২ রানেই অলআউট করে দেয় বাংলাদেশ। যেই ৪২.৫ ওভারের সময় আফগানিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান আফতাব আলম রান আউট হন, বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা সে কী আনন্দে মেতে ওঠেন। একেকজন একেক দিকে ছুটতে থাকেন। এনামুল হক বিজয় তো এক দর্শকের কাছ থেকে ‘খেলনা বাঘ’ নিয়ে দৌড়াতে থাকেন! এ জয়টি যেন বাংলাদেশকে আনন্দ করার বিশেষ উপলক্ষ্যই এনে দিল। ম্যাচটির আগে যে অনেক কথাই হয়েছে। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারার পর, মোহাম্মদ নবিরা তো রীতিমত মাশরাফিদের হারিয়ে দেয়ার হুঙ্কারই দিয়ে ফেলেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা এবারও বাংলাদেশকে হারাব।’ নবির হুঙ্কারের জবাবে মাশরাফি খুব বেশি কিছু বলেননি। শুধু জানিয়েছিলেন, ‘এটা বিশ্বকাপের ম্যাচ।’ মাশরাফির এ কথাতেই লুকিয়ে ছিল প্রতিশোধ নেয়ার গন্ধ। তাই বলে বাংলাদেশ এত বড় জয়ই তুলে নেবে! বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের জেতা সবচেয়ে বড় জয় এটিই। এমন এক দলের বিপক্ষেই জয় তুলে নিল বাংলাদেশ, যে দলটি মাঠের বাইরে দারুণ কথার লড়াইয়ে নেমেছিলেন। ‘বাংলাদেশই চাপে থাকবে। এ চাপে সমস্যা তৈরি হবে।’ এমন কত কি না বলেছেন আফগান অধিনায়ক নবি। কিন্তু দিন শেষে কি দেখা গেল। মাথা নত করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে আফগান ক্রিকেটারদের। শুরুতে ৫২ রানে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (১৯) ও এনামুল হক বিজয়ের (২৯) আউটের পর একটু উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। এরপর থেকেই যে নবি, শাপুর জাদরান, হামিদ হাসানদের উচ্ছ্বাস থেমে গেছে, তা আর দেখা যায়নি। তৃতীয় উইকেটে সৌম্য সরকার (২৮) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২৩) মিলে ৫০ রানের জুটি গড়ার পর পঞ্চম উইকেটে সাকিব-মুশফিক মিলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১১৪ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। এ জুটিই বাংলাদেশকে বড় স্কোর গড়ে দেয়। এ স্কোর অতিক্রম করে আফগানিস্তান জিতবে, তা শুরু থেকেই ভাবা যায়নি। এরপর যখন ৩ রানে আফগানিস্তানের তিন উইকেটের পতন ঘটে যায়, ম্যাচে বাংলাদেশের জয় যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। নবি ৪৪ ও সামিউল্লাহ সেনওয়ারি ৪২ রান করে বাংলাদেশ বোলারদের খানিক ভোগান। শেষ পর্যন্ত জয় মিলে যায় অনায়াসেই। ম্যাচের আগের দিন নবি এমন সব কথা বলেছেন যার জবাব দেয়া উচিত ছিল। মাঠের ভেতর সেই জবাব পেয়েছেনও নবি। এখনও যে বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে তা বোঝাই গেছে। এশিয়া কাপে সাকিব, মাশরাফি, তামিম-তিন ক্রিকেটার খেলেননি। জয় পেয়ে গেছে আফগানিস্তান। এবার তিনজনই খেলেছেন। তাহলে কী আর আফগানরা জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে? তা পারেনি। তাইতো আফগান অধিনায়কের কণ্ঠে বিষাদের সুর, ‘প্রথম ৩৫ ওভার আমরা ভাল বল করেছি। বিশেষ করে পেস বোলাররা। কিন্তু মুশফিক-সাকিব দুর্দান্ত খেলেছে। এর সঙ্গে আমরা দ্রুতই কয়েকটি উইকেট হারিয়েছি। বিশ্বকাপে শুরুটা ভাল হলো না।’ নবির মুখে এখন আর বড় বড় কথা নেই। মাশরাফি অবশ্য এদিন মন খুলে কথা বলতে পেরেছেন। বলেছেন, ‘এটা সত্যিই অসাধারণ অনুভূতি। খানিক চাপ তৈরি হয়েছে। তবে আমরা সেটাকে জয় করতে পেরেছি।’ ম্যাচ সেরা হয়েছেন মুশফিকুর রহীম। তিনি নিজের নৈপুণ্য নিয়ে দারুণ খুশি। তবে সবাই দর্শকদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। তারাই যে খেলায় প্রাণ ফিরিয়ে এনেছেন। দূর প্রবাসেও বাংলাদেশ দলকে মাঠে এসে এমনভাবে সমর্থন যুগিয়েছেন, যেন বাংলাদেশেই খেলছেন মাশরাফিরা। পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে শুধু বাংলাদেশের পতাকা উড়েছে, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে গর্জন শোনা গেছে। সেই গর্জনের সঙ্গে ম্যাচ শেষে ক্রিকেটাররাও একাত্ব হয়ে গেছেন। এত হুঙ্কার দেয়া আফগানিস্তানকে হারানোর পর যে সীমাহীন আনন্দ মিলেছে।
×